বাংলাদেশ এখন আওয়ামী ধর্ষকদের অভয়ারণ্য
এম ডি সাইফুল আলম, যুক্তরাজ্য
সিলেটে সাম্প্রতিক সময়ে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে যে ধর্ষনের ঘটনাটি ঘটে গেলো সেটা সকলেই জানেন। এই ধর্ষনের ঘটনায় ছাত্রলীগের পাঁচ নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বলা হচ্ছে এই পাঁচ নেতাই সিলেটের এই এম সি কলেজ কেন্দ্রিক রাজনীতিতে এক ধরনের ডাইনোসরের ভূমিকায় অবত্তীর্ণ হয়েছিলো। দিনের পর দিন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের আশ্রয়ে ও প্রশ্রয়ে এই ছাত্রলীগের ছেলেরা তাদের শক্তি সঞ্চয় করেছে এবং সাম্প্রতিক এই নির্মম ধর্ষনের ঘটনায় আমরা এদের দুঃসাহসের প্রমাণ পেলাম। এই যে কেন্দ্রীয় নেতাদের এমন পেছন থেকে আশীর্বাদ আর শক্তির যোগান দেয়া, এর ফলেই বাংলাদেশটা এখন ধর্ষকদের এক অভয়ারণ্য হয়ে উঠেছে। দিনের পর দিন এই দেশের মা-বোনেরা আওয়ামীলীগের হায়না ধর্ষকদের মাধ্যমে হয়ে আসছে নির্যাতিত। এইসব ধর্ষনের ইতিহাস নিয়েই আজ আমি কিছু কথা বলতে এসেছি।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামি লীগের নেতা কর্মীদের বিরুদ্ধে যে পাইকারিহারে ধর্ষণের অভিযোগ আসছে সেক্ষেত্রে আমরা যদি ইতিহাস দেখি তাহলে দেখবো মুক্তিযুদ্ধের পর থেকেই এই ভূখণ্ডের ইতিহাসে ঘটেনি এমন সব ধর্ষণের ঘটনা এই আওয়ামী লীগের হাতেই ঘটতে থাকে। মুক্তিযুদ্ধের মতো এক মহান গণযুদ্ধের পরেও আওয়ামী লীগ কোন জাতীয় সরকার গঠন না করে পাকিস্তনানের জাতীয় পরিষদের জন্য যারা নির্বাচিত হয়েছিলো তাদের দিয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধের সমস্ত অর্জনকে একে একে এভাবেই ধ্বংস করে দিয়ে এক জাহেলিয়াত প্রতিষ্ঠা করে। শুধু তাই নয় স্বাধীন দেশে আওয়ামী সন্ত্রাস আর নিপীড়ন এক নতুন মাত্রা পায়। মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ভারতের স্পেশ্যাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের সাথে মুজিব বাহিনী পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢোকে।
ভারতের সঙ্গে যুক্ত বিভিন্ন সীমান্ত পথে ‘মুজিব বাহিনী’র সদস্য ও ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’-এর সদস্যরা ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে পার্বত্য চট্টগ্রামের পানছড়িতে প্রবেশ করে। একদল চাকমা তাদের অভ্যর্থনা জানাতে যায়। এদের জন্য তারা একটি খাসিও সঙ্গে নিয়েছিল। ‘মুজিববাহিনী’ ও ‘স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্স’-এর এই সদস্যরা খাসিটি নিলেও অভ্যর্থনাকারী সবাইকে হত্যা করে। এরপর তারা পানছড়ির পাহাড়ি গ্রামগুলোতে হামলা শুরু করে। বাড়িঘরে লুটপাট চালায় এবং আগুন লাগিয়ে দেয়। সামনে যাকে পায় তাকেই হত্যা করে এবং মেয়েদের ধর্ষণ করে। তাদের হামলায় সেদিন পানছড়িতেই ৩২ জন নিহত হয়। পানছড়ি থেকে খাগড়াছড়ি যাওয়ার পথে তারা ১৭৬টি বাড়িঘর জ্বালিয়ে দেয়। ১৪ ডিসেম্বরও তারা ২২ জনকে হত্যা করে।
এই নির্মম অত্যাচারের সময় ভারতের সেনাবাহিনীর সাথে পার্বত্য চট্টগ্রামে ঢোকা মুজিব বাহিনীর উপস্থিতি ছিলো। কে কতটুকু করেছে সে সম্পর্কে নির্ভরযোগ্য তথ্য না থাকলেও মুজিব বাহিনী এই হত্যা লুটপাট, অগ্নি সংযোগ ও ধর্ষণের ঘটনার দায় এড়াতেপারেনা। ১৯৭১ এর ১৬ ডিসেম্বর আমরা যুদ্ধে জিতে স্বাধীন দেশ পেলেও ওই একই দিনে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বনকারী সংখ্যালঘু বিহারি সম্প্রদায়ের উপরে ঘটলো ১১০টি শহরে পরিকল্পিতভাবে হত্যা, ধর্ষণ আর তাদের সহায়-সম্পদ লুণ্ঠনের ঘটনা। অনেক বাঙালি পরিবার কিছু ভীত-বিহ্বল আর পলায়নপর অবাঙালিকে আশ্রয় দিয়েও অসংখ্য উর্দুভাষীর নির্মম হত্যা-মৃত্যুকে রুখতে পারেনি। বিয়য়ের গৌরব এভাবেই আওয়ামী লীগ কলংকিত করেছিলো।তারপর স্বাধীন দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং গণনৈতিকতার এমন অধঃপতন ঘটে যে, ১৯৭৩-এর ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যরাতে যখন সকলে শহিদ মিনারে সমবেত হয়ে ভাষা শহিদদের শ্রদ্ধা জানাচ্ছিলেন তখন আওয়ামী গুণ্ডারা মহিলাদের ওপর বারবার হামলা চালায় এবং দু’জন তরুণীকে শহিদ মিনারের পাদদেশ থেকে হাইজ্যাক করে ধর্ষণ করার পর অর্ধচেতন অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসে। স্বাধীন দেশে শহীদ মিনারে এভাবেই আওয়ামী কর্মীরা প্রথম ধর্ষণ করে।
সেদিন ছুটি থাকায় ২৩ ফেব্রুয়ারিতে ইত্তেফাকে প্রথম পৃষ্ঠায় যে রিপোর্ট হয় তা পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে ধরছিঃ“একুশে ফেব্রুয়ারি, ‘৭৩ সাল। যে শ্রদ্ধা, যে পূত-পবিত্র অনুভূতি, মন লইয়া রাজধানীর আবালবৃদ্ধবণিতা শহিদ মিনারে সেই দিন সমবেত হইয়াছিল, এক শ্রেণীর উচ্ছৃংখল তরুণের জঘন্য কার্যকলাপ শুধু সেই মনকে ভারাক্রান্তই করে নাই শহিদ মিনারের পবিত্র বেদীকে, অমর একুশের পুণ্যময় স্মৃতি দিবসকে মসিলিপ্ত করিয়াছে। মেয়েদের ওপর বারবার হামলা হইয়াছে, অনেক মহিলার নিরাপত্তা, সম্ভ্রম ও ইজ্জত বিনষ্ট হইয়াছে, দুইটি তরুণীকে শহিদ মিনারের পাদদেশ হইতে ‘হাইজ্যাক’ করিয়া লাঞ্ছিত করার পর অর্ধচেতন অবস্থায় হাসপাতালে লইয়া যাওয়া হইয়াছে। সামগ্রিক অবস্থাদৃষ্টে বার বার সকলের মনকে নাড়া দিয়েছে একটিমাত্র প্রশ্ন- আইন-শৃংখলা, সভ্যতা, শালীনতা যেখানে একশ্রেণীর তরুণের মুষ্টির মধ্যে, যেখানে শহিদ মিনারের পবিত্র পাদপীঠে স্মৃতি তর্পণের পরিবর্তে নোংরামি চলে সেখানে শহিদ দিবস পালনের সার্থকতা কোথায়?
”শহীদ মিনারে ১৯৭৩ সালের ২১শে ফেব্রুয়ারী মহিলাদের উপর বর্বর অত্যাচারের সেই ঘটনার কোনো তদন্ত হয়নি। কারণ, যারা এই জুলুম করেছিলো আওয়ামী লীগের সেই তরুণদের বিরুদ্ধে কারোর কোনো অভিযোগ করার সাহস ছিলোনা। প্রকাশ্যে কেউ কিছু বললে তারা তাদের জিভ কেটে নেয়ার হুমকি দিয়েছিলো।মুক্তিযুদ্ধের পরে মুলত মুজিব বাহিনী দিয়ে গঠিত রক্ষী বাহিনীও ধর্ষণ ও অন্যান্য অত্যাচারে লিপ্ত হয়। তারা কার্ফু দিয়ে সারা গ্রাম ঘেরাও করে এই বাহিনী অস্ত্র, ‘দুষ্কৃতকারী’ এবং ‘রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ’ অনুসন্ধান করতে শুরু করে। এই প্রক্রিয়ায় তারা বেপরোয়াভাবে হত্যা, লুণ্ঠন এমনকি ধর্ষণও করতে থাকে।সাবেক এ আই জি শফিকুল ইসলাম শেখ মুজিবের শাসনামলে এক থানার ওসি ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের পরপরই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপরে আওয়ামী লীগের কর্মীদের ধর্ষণের ঘটনা তার প্রকাশিত বইয়ে লিপিবদ্ধ করেছেন।
উল্লেখ্য শফিকুল ইসলাম নিজেও ছিলেন একজন মুক্তিযোদ্ধা। অ্যান্থনি মাসকারেনহাস তার বাংলাদেশ: রক্তের ঋণ গ্রন্থে বলেন, শেখ মুজিবের প্রতি চূড়ান্ত অসন্তোষের পেছনে একটি নির্দিষ্ট ঘটনাকে তিনি প্রভাবক হিসেবে উল্লেখ করেন, তা হলঃ টঙ্গীর মোজাম্মেল নামে এক সমসাময়িক আওয়ামী লীগ তরুণ নেতা এক নববিবাহিত গৃহবধুকে গাড়ী থেকে তুলে নিয়ে তার ড্রাইভার ও স্বামীকে হত্যা করার পর তাকে অপহরণ করে গণধর্ষণ করে তিনদিন পর তার রক্তাক্ত লাশ রাস্তায় ফেলে যায়। এতে মেজর নাসের মোজাম্মেলকে আটক করে পুলিশের হাতে সোর্পদ করলে অনতিবিলম্বে তিনি ছাড়া পান। তখন অনেকেই মনে করেন, শেখ মুজিবের হস্তক্ষেপেই তিনি অপরাধের শাস্তি হতে মুক্তি পেয়েছিলেন। এই ঘটনা হুমায়ুন আহমেদ তার দেয়াল উপন্যাসে উল্লেখ করেছেন। সেই ঐতিহ্যকে অনুসরণ করেই জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতা মানিক শততম ধর্ষণ সম্পন্ন করার পরে প্যান্ডেল খাটিয়ে উৎসব করেছিলো। আওয়ামী আমলে নারীরা নির্যাতিত হবার যে রেকর্ড আছে সেটাই আজকের আওয়ামী লীগারেরা অনুসরণ করছে। এমনকি সেইদিনের নির্যাতক ধর্ষকেরা আজ ক্ষমতাবান। আপনারা মিলিয়ে দেখতে পারেন, সেদিনের ঘটনার সাথে আজকের ঘটনার কোন তফাত দেখতে পাবেন না। আওয়ামী লীগের অনেক ঐতিহ্যের সাথে ধর্ষণ ও একটা ঐতিহ্য তাই আওয়ামী আমলে ধর্ষকদের বাম্পার ফলন হয় আর তারা সবাই আওয়ামী লীগে আশ্রয় পায়।
এই ধর্ষন বিষয়ে একটা চমৎকার কথা বলেছেন আমার বন্ধু মোহাম্মদ ফাহিদুল আলম। তিনি আওয়ামী ধর্ষকদের দ্বারা সংগঠিত বেগমগঞ্জের ধর্ষন সম্পর্কে বলেন-
‘পাওয়ার টেন্ড টু করাপ্ট; এবসলুট পাওয়ার করাপ্টস এবসলুটলি।বেগমগঞ্জের দেলোয়ার একাধিক খুনের মামলার আসামী। পুলিশ নাকি তাকে খুজতেছিল। কিন্তু সে প্রকাশ্যেই ঘুরে বেড়িয়েছে। সে ইউপি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর ভোট কাটার দায়িত্ব পালন করেছে– রাতের ভোট এবং এ জাতীয় সকল কার্যক্রমে অগ্রনী থেকেছে। ভুলে যাবেন না, পুলিশ কিন্তু তাকে খুজছিল। একলাশপুরের যে নারী পৈশাচিক নির্যাতনের শিকার হল, এর মধ্যে দেলোয়ারের হাতে দু’বার ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে তাকে। আবারো মনে করিয়ে দেই, পুলিশ কিন্তু দেলোয়ারকে খুজছিল। হয়ত ৩০ ডিসেম্বর মধ্যরাতে পুলিশ এবং দেলোয়ার পাশাপাশি বসে বিরিয়ানি খেয়েছে ( অনুমান মাত্র, নাও হতে পারে), তবে পুলিশ তাকে খুজে পায়নি। দিস ইজ কলড করাপ্টস এবসলুট পাওয়ার।একটা নৃশংস ভিডিও ভাইরাল হওয়ার প্রেক্ষিতে গড়ে ওঠা সেনসেশনের ফলে দেলোয়ারকে গ্রেপ্তার হতে হয়েছে। কিন্তু দেশের মধ্যে আরো কয়েক লাখ দেলোয়ার প্রতিদিন এরকম অপরাধ করে চলেছে, যার কোনো ভিডিও নেই। বেগমগঞ্জের নারীর আকুতি আমরা ৩২ দিন পরে শুনতে পেয়েছি, বাদবাকী ঘটনাগুলো মাটিচাপা পড়ে থাকবে–৩২ বছরেও তার কোনো চিহ্ন কোথাও ভেসে উঠবে না।মানেটা হচ্ছে, একটা সেনসেটাইজড ঘটনা এবং একজন দেলোয়ারের গ্রেপ্তারের মধ্য দিয়ে কোনো ন্যায়বিচার হবে না; যতক্ষণ না পর্যন্ত এবসলুট করাপ্টস পাওয়ারকে কোনো জবাবদিহিতার মধ্যে না আনা যাচ্ছে। এই এবসলুট করাপ্টস পাওয়ারস্ট্রাকচারটার নেতৃত্ব দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশের মধ্যে আর কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ক্ষমতা চর্চায় তার ধারেকাছেও নেই। ফলে দায় দেয়ার জন্য তিনি ছাড়া আপনার সামনে আর কেউ নেই। তাকে যদি চাপ না দিতে পারেন, বিব্রত না করতে পারেন; যদি কেবল তার শুভবোধের উপর ভরসা করে নিয়তির দিকে তাকিয়ে থাকেন–আমাদের সকলের ধ্বংস অনিবার্য। তার মানে কিন্তু এই নয় যে শেখ হাসিনা চান তার ক্ষমতাকাঠামোর সাথে যুক্ত লোকেরা ধর্ষণের মত অপরাধে যুক্ত হোক। যেমনটি উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ বলেকয়ে উতসাহিত করেন, মুসলিম এবং দলিতদের উপর অত্যাচার চালাতে। তবে ব্যাপারটা হচ্ছে, যোগী আদিত্যনাথ যদি কাল থেকে ভাল হয়ে যান, চলমান অত্যাচার নির্যাতনের অবসান চান– তাতেও তেমন কোনো পরিবর্তন হবে না। কারণ ব্যবস্থাটা চালু হয়ে আছে। জবাবদিহিতাবিহীন একটা এবসলুট পাওয়ার বাংলাদেশকে অজগরের মত পেচিয়ে ধরেছে। এর হাত থেকে মুক্ত হতে হবে‘
এই একই ক্ষেত্রে আমার আরেক বন্ধু যোবায়ের হোসেন বলেন,
“আওয়ামীলীগ মানেই হচ্ছে ধর্ষন আর নির্যাতনের এক অপর নাম। বাংলাদেশে এরা যে খুন-ধর্ষন-নির্যাতনের উৎসব করছে সেটি নজিরবিহীন। দেশের পুলিশ, আর্মি, বি ডি আর সবাই মিলে ঝিলেই এই ধর্ষনের উৎসবে মেতেছে। এই যেন এক ধর্ষনের এক স্টেজ বানিয়ে ফেলেছে শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ। আমি এই আওয়ামীলীগের উদ্দেশ্যেই বলতে চাই-শেখ হাসিনা, আপনার ক্ষমতালিপ্সাই ধর্ষক উৎপাদনের কারখানা তৈরি করেছে দেশজুড়ে। দয়া করে সরে যান। বাংলার মানুষকে মুক্তি দেন‘
এই ধর্ষক বাহিনী ও সরকারী পুলিশ বাহিনী প্রসঙ্গে আমার আরেক বন্ধু নুরুল হুদা বলেন-
জনসাধারণের নিরাপত্তার বিধানের বদলে জনমনে ত্রাসের সংক্রাম ঘটানো এই আওয়ামী ধর্ষক বাহিনীর কীর্তিকলাপ কী পরিমাণ ভয়াবহ এর নজির নিত্যদিনের গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে উঠে আসছে। কাদের ভরসায়, কোন ক্ষমতার আস্কারায় জনগণের অর্থে প্রতিপালিত বাহিনীগুলো জনগণের স্বার্থের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে যাচ্ছে; অজস্র ব্যক্তিমানুষ ও তাদের পরিবারকে শারীরিক, মানসিক, আত্মিক ও আর্থিকভাবে বিপন্ন করে দিচ্ছে এটা দিবালোকের মতো স্পষ্ট সকলের কাছে। পুলিশ এবং পাওয়ার পলিটিশিয়ানরা পারস্পরিক অবৈধ স্বার্থের প্রশ্নে উত্তরণের অযোগ্য এক অবস্থায় দাঁড় করিয়েছে গোটা জনপদকে। অবশ্য যা হবার কথা ছিল তা-ই হচ্ছে; উপনিবেশকারীদের শোষণকামী আইনে চালিত বাহিনী তার স্বরূপকেই প্রকাশের প্রয়াস পাচ্ছে সম্ভাব্য সমস্ত উপায়ে। সেই সাথে, শোষণকামী রাষ্ট্র-দর্শনের অনিবার্য পরিণতি হিসেবে দিনে দিনে সমধর্মী অনুষঙ্গের সহযোগে এঁদেরকে বেপরোয়া বানিয়ে ফেলা হচ্ছে। এর অংশ হিসেবেই বিতর্কিত ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন কায়েম এবং এই আইনের প্রয়োগে পুলিশকে নজিরবিহীন অনৈতিক ক্ষমতা দেয়া হয়েছে। যার দরুন তারা এখন স্বাধীন দেশের সাধারণ নাগরিকের ভার্চুয়াল অস্তিত্বে নজরদারি ও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করছে। এমনকি পুড়িয়ে খুন করা নুসরাতের মতো গুলিতে খুন করা সেনা কর্মকর্তা সিনহার সাথে সম্পৃক্ত শিপ্রাকে নিয়েও অনলাইনে নানাবিধ প্রোপাগান্ডা ছড়াচ্ছে। বড় বড় পদ পদবী ও ডিগ্রীধারী কর্মচারিদের পর্যন্ত এ ঘটনা ঘটাতে দেখা যাচ্ছে। সাপের মতো পেঁচিয়ে ধরা স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে শক্তি জোগানো এইসব বাস্তবতাকে প্রশ্ন করা না হলে, এসবের বিরুদ্ধে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়া না হলে অদূর আগামীতে এগুলোই সাধারণ বাস্তবতায় রূপ নেবে। অস্তিত্ব বিনাশী অন্ধকারে প্রবল ঘনত্বসহ চেপে ধরা ভয়ের বাতাস মানুষের শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ করে দেবে।
এই হচ্ছে ঘটনা আর এই হচ্ছে ইতিহাস। উপরে যে ইতিহাস আমি বলেছি তার কিছুইতেই কোনো মিথ্যে নেই। নেই অতিরঞ্জন। আর সাধারণ মানুষদের কথা তো আমি উপরেই বর্ণিত করেছি।
সারা বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ ছাত্রলীগের অব্যাহত নারী ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদের ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বে বিপুল সংখ্যক ছাত্র এই আন্দোলনে যোগ দিয়েছে।এমন সময়ে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য হুমকি দিয়ে খোদ ছাত্রলীগ পথে নেমেছে। উল্লেখ্য, দুই বছর আগে স্কুল ছাত্রদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের সময়ে এরাই নির্মমভাবে স্কুল ছাত্রছাত্রীদের পিটিয়ে রক্তাক্ত করে আন্দোলনকে স্তব্ধ করে দিয়েছিলো।ছাত্রলীগ সভাপতি আল নাহিয়ান খান জয় বলেছে, “আপনারা বলেন ছাত্রলীগ কেন অস্ত্র তুলে নেয়? ১৯৭১ সালে কিন্তু ছাত্রলীগ অস্ত্র তুলে নিয়েছিল। এখন পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা তাদের এজেন্ডা বাস্তবায়ন করবে, আর আমরা বসে থাকব? কখনোই না। আমরা সারা দেশে নেতা-কর্মীদের বলে দিতে চাই, যেখানেই ওই শিবির গংদের পাবেন, যেখানেই ধর্ষকদের পাবেন সেখানেই গণধোলাই দেবেন। বাংলাদেশে কোনো পাকিস্তানি এজেন্টদের স্থান নাই।”
ছাত্রলীগের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি সনজিত দাস, যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ফুট সোলজার হিসেবে পরিচিত, সে আরো এক কাঠি উপরে উঠে বলেছে,“আমি তাদের বলতে চাই, আপনারা হয়ত ভুলে যান নাই, হয়ত পিটনা হজম হয়ে গিয়েছে। আবার সময় এসেছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে নিয়ে যে ধৃষ্টতা আপনারা দেখিয়েছেন, সেই ধৃষ্টতার সীমা লংঘন করেছেন আপনারা। এর পরে কোনো ধৃষ্টতা দেখালে এই শাহবাগে আপনাদের পাড়াইয়া পিষিয়ে ফেলব। কোনো ধরণের প্রশাসন, কোনো ধরণের মিডিয়াকে আমরা ভয় পাই না।”
ছাত্রলীগের নেতারা নিজেরাই বলছে এরা কাউকে পিষিয়ে ফেলতে কাউকে ভয় পায়না। আমি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি ছাত্রলীগ নামের এই সংগঠনকে মানবতা বিরোধী ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত করার জন্য। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানাচ্ছি ছাত্রলীগের সাথে যুক্ত সন্ত্রাসী ও ধর্ষকদের আপনাদের দেশের ভিসা দেবেন না।ধর্ষণের শততম জয়ন্তী উদযাপন করা ছাত্রলীগ নেতা মাণিক বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে গিয়ে ইতালিতে আমৃত্যু নিরাপদে ছিলো। এমন বর্বরেরা ভালো মানুষ সেজে পরিস্থিতির পরিবর্তন হলে জনরোষ থেকে বাঁচতে পশ্চিমে আশ্রয় নেয়। পশ্চিম যেন এই বদমায়েশগুলোকে কোনভাবে তাদের সভ্য দেশে আশ্রয় না দেয় সেই আহবান জানিয়ে যাই।
Top of Form