আ. লীগের হামলায় হতাহত ২০০৩, গ্রেফতার ২০০: ফখরুল

বিএনপির চলমান প্রতিবাদ কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের হামলায় এ পর্যন্ত তিনজন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ২ হাজারের বেশি, গ্রেফতার ২০০ নেতাকর্মী।

রোববার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, নারায়ণগঞ্জে শেখ হাসিনার অবৈধ, অনির্বাচিত, ফ্যাসিবাদী সরকারের পুলিশের গুলিতে গত বৃহস্পতিবার শাওনকে হত্যা করা হয়। আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ও অবৈধ সরকারের পুলিশ বাহিনী শনিবার ঠাকুরগাঁও জেলার রুহিয়া উপজেলা, কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়াসহ বেশ কয়েকটি জেলায় নারকীয় তাণ্ডব চালিয়েছে। ঠাকুরগাঁওয়ের রুহিয়া উপজেলায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসী হামলায় প্রায় ২৫ জন নেতা-কর্মী আহত হয়েছে। কিশোরগঞ্জ জেলার পাকুন্দিয়া উপজেলায় পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের হামলায় প্রায় শতাধিক নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। পুলিশের গুলিতে আহত দুজনের অবস্থা সংকটাপন্ন।

এসব তথ্যসহ গত ২২ আগস্ট থেকে ১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিএনপির কর্মসূচি চলাকালে যেসব নেতাকর্মী নিহত, আহত, গ্রেফতার তাদের সংক্ষিপ্ত বিবরণ তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী সারাদেশে নিহত হয়েছেন তিনজন, আহত হয়েছেন দুই হাজার জনের অধিক নেতাকর্মী। একই সময়ে গ্রেফতার হয়েছেন দুই শতাধিক। সারাদেশে নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়েছে প্রায় ৪০৮১ জনের অধিক নেতাকর্মীকে। অজ্ঞাত আসামি প্রায় ২০ হাজার। ১৪৪ ধারা জারি করা হয় ২০/২৫ টি স্থানে। বাড়িঘরে ও ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে হামলা প্রায় ৫০ জায়গায়।

সারা দেশে কর্তৃত্ববাদী গণ বিরোধী, ফ্যাসিস্ট সরকার বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীদের এবং সাধারণ মানুষদের হত্যা, আহত, গ্রেফতারের যে অপতৎপরতা অব্যাহত রেখেছে তা বন্ধের আহ্বান জানাচ্ছি। হত্যাকারী এবং হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, অন্যায়ভাবে গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীদের মুক্তি, মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ফিরে আসার জন্য সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে কোনো দলের সদস্য হিসেবে কাজ না করে দেশের সংবিধান রক্ষা এবং জনগণের জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালন করার আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব আরও বলেন, সরকার যদি এই অশুভ তৎপরতা বন্ধ না করে জনগণের যে ঐক্যের আন্দোলন শুরু হয়েছে তা ক্রমান্বয়ে গণ বিস্ফোরণে পরিণত হবে এবং গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠা করে এই সকল অপকর্মের সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার করা হবে।

মির্জা ফখরুলের তথ্যে কোথায় কত হতাহত-গ্রেফতার
নারায়ণগঞ্জ জেলা যুবদল নেতা শাওনকে পুলিশ গুলি করে হত্যা করেছে। আওয়ামী লীগ ও পুলিশ যৌথভাবে হামলা চালিয়ে প্রায় পাঁচ শতাধিক নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষকে আহত করেছে। ৩৭০ জনের নাম উল্লেখ করে ৫ হাজার নেতা-কর্মীর নামে মামলা দায়ের করেছে।

সাতক্ষীরা জেলার ২০ জন নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। পটুয়াখালীর কলাপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ৫০ জনকে আহত করেছে, ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ও ২টি মামলা দায়ের করেছে। ১০০ জনের নাম উল্লেখ করে ১ হাজার জনকে আসামি করেছে।

ভোলায় হামলা চালিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ৫০ জনকে আহত করেছে। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ, উজিরপুর, বাকেরগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ৫০ জনকে আহত করেছে, ৩টি মামলা দায়ের করেছে, ১৫০ জনের নাম উল্লেখ করে পাঁচশজনকে আসামি করেছে।

ঝালকাঠির বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ৫০ জনের অধিক নেতা-কর্মীকে আহত করেছে। পিরোজপুর সদর, মঠবাড়িয়া, নাজিরপুরসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ৫০ জনকে আহত করেছে, ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে ও ৩টি মামলা দায়ের করেছে, ১৫০ জনের নাম উল্লেখ করে ৫০০ জনকে আসামি করেছে।

ঠাকুরগাঁও জেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদকসহ ৫০ জনের অধিক আহত করেছে। বিএনপি অফিসসহ নেতা-কর্মীদের মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করেছে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা। গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে হামলা চালিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ২০ জনকে আহত করেছে, ১টি মামলা দায়ের করেছে, ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে একশ জনকে আসামি করেছে।

সিরাজগঞ্জে মিছিলের উপরে পুলিশ গুলি চালিয়ে ১০০ জনের অধিক আহত করেছে, ২০ জনকে গ্রেফতার করেছে ও ১টি মামলা দায়ের করেছে, ১০০ জনের নাম উল্লেখ করে ১ হাজার জনকে আসামি করেছে।

চট্টগ্রামের বাঁশখালী, সীতাকুণ্ডসহ বিভিন্নস্থানে হামলা চালিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ৪৫ জনকে আহত করেছে, ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে ও ৬টি মামলা দায়ের করেছে, ৫০০ জনের নাম উল্লেখ করে দুই হাজার জনকে আসামি করেছে।

নোয়াখালী সদর, চাটখিল, সেনবাগ, বেগমগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা চালিয়ে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা ১০০ জনকে আহত করেছে, ১০০ জনকে গ্রেফতার করেছে ও তিনটি মামলা দায়ের করেছে। বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ব্যরিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ ৩০০ জনের নাম উল্লেখ করে ১ হাজার জনকে আসামি করেছে।

এ ছাড়া ফেনী, লক্ষ্মীপুর, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি, নরসিংদী, গাজীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, টাঙাইল, যশোর, মেহেরপুর, ঝিনাইদহ, মাগুরা, নড়াইল, বাগেরহাট, খুলনা, কুষ্টিয়া, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, জামালপুর ও ময়মনসিংহ জেলার বিভিন্ন থানায় কর্মসূচি চলাকালে হামলা, ভাঙচুর, গ্রেফতার ও মামলা দায়ের করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বিএনপির মহাসচিব।