পদ্মাসেতু যেন এক ফ্যাশিজমের টুল

পদ্মাসেতু নিঃসন্দেহে একটা ইঞ্জিনিয়ারিং মার্ভেল, সারা দুনিয়ার ইতিহাসেই গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা- এতে সন্দেহ নাই। যারা এই সেতুর ডিজাইন করেছেন, প্রতিটি ধাপ পরিচালনা করেছেন, প্রতিটি শ্রমিক, ইঞ্জিনিয়ার, টেকনিশিয়ান- তারা সকলেই স্যালুট পাওয়ার যোগ্য।

সেইসাথে এও সত্য যে এই সেতুকে ফালতু ও হাস্যকর বানানোতে আওয়ামী সরকারের জুড়ি নাই। প্রতিটি স্প্যান বসানোর নিউজ, পেইড এনগেজমেন্ট, মেহের আফরোজ শাওনের মতো এই সেতুকে ‘মুক্তিযুদ্ধ দেখা’র সাথে তুলনা করা- এই প্রতিটি ভাঁড়ামির জন্য পদ্মাসেতুর নাম যতবার লেখা হবে ততবার বিরক্তির উদ্রেক করবে।

দেশের মানুষের ট্যাক্সের টাকায় বানানো সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে কেন অতিরিক্ত তেল সম্বলিত বাহবা দিতে হবে?

প্রধানমন্ত্রী সেতুর প্রকল্প হাতে নিয়ে যা ভালো করেছেন তা কড়ায় গন্ডায় পুষিয়ে দিয়েছেন বিশ্রী লোকদেখানো নির্বাচন, পোষা মিডিয়া, মানুষের বাক স্বাধীনতা রোধ করে, গু’ম করে, উনার দুর্নীতিবাজ মন্ত্রীদের সুরক্ষার জন্য ডি’জিটাল নিরাপত্তা আইন বানিয়ে।

পদ্মাসেতুর গৌরবের চেয়ে শেখ হাসিনার সরকারের দুর্নীতি এবং লুটপাটের সৌরভ বেশি।

পদ্মাসেতু এই মুহুর্তে একটা ফ্যা’সিস্ট, অগণতান্ত্রিক, চোর রাষ্ট্রব্যবস্থাকে শক্ত করার হাতিয়ার। আ’নভীর সোবহান আর শি’কদার ভাইদের অপ্রতিরোধ্য করারও হাতিয়ার।

জেনে রাখা ভালো যে মানুষের ট্যাক্সের টাকায় শেখ হাসিনা বেতন পান, তার পুরো মন্ত্রীসভার পেট চলে, সুইস ব্যাংক ভর্তি হয়ে যায় সাধারণ মানুষের ট্যাক্সের টাকায়। পদ্মাসেতু নামের যে অর্জন সেটা মূলত সাধারণ মানুষের অর্জন।

পদ্মা সেতুটা দরকারিও । কারণ এই সেতু অনেক মানুষের অনেক পথের যাত্রাও কমিয়ে দিয়েছে, আরামের করেছে। পদ্মা সেতু মানুষের জীবন ও অর্থনীতি বদলে দেবে, কারণ ওই নদী পার হওয়ার জন্য ফেরিঘাটে সারারাত কাটিয়ে দেওয়ার যে কষ্ট তা অন্যদের উপলব্ধি করা সম্ভব না।

কিন্তু সাথে এও সত্য যে- এই সেতুর উদ্বোধন অনুষ্ঠানের বাজেট ৪ কোটি ৭৮ লক্ষ টাকা। এরসাথে প্রচার প্রচারণার জন্য লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে।

অথচ সিলেটের বন্যার্ত ৪ জেলায় ত্রান এর জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। দেশের মানুষের জীবনের দাম পদ্মাসেতুর উদ্বোধনের অনুষ্ঠানের চেয়ে কম?

পদ্মাসেতুর গৌরব আর দুর্নীতির দুষ্টচক্র মিলেমিশে একাকার হয়ে গোল্ডফিশের মেমোরিওয়ালা জাতি হিসেবে বিশ্বে নাম লেখাবার জন্য পদ্মাসেতু চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে বাংলাদেশের একমাত্র নোবেলজয়ী প্রফেসর ইউনূসকে পদ্মায় চুবাতে চাওয়ার ইচ্ছার কথাও। শেখ হাসিনার দুনিয়ার ইতিহাসে সবচেয়ে সফল ফ্যাসিস্ট নারী শাসক হওয়ার গৌরবে পদ্মাসেতু অবশ্যই মাইলফলক হয়ে থাকবে।

এমনকি ভবিষ্যতে ‘গভমেন্ট এন্ড পলিটিক্স’ সাবজেক্টে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো হতে পারে- ‘পদ্মাসেতু মডেল’ নামের আলাদা চ্যাপ্টার!

এতোসব অর্জনকে বুড়ো আঙুল দেখানোর ক্ষমতা কি দুনিয়ার আর কোনো সেতুর আছে? আমি বলতে পারি- নাই! ফলে বেইজিং গ্রান্ড ব্রিজ থেকে শুরু করে দুনিয়ায় সেরা ১০ বৃহত্তম সেতুকে চ্যালেঞ্জ করতে পদ্মাসেতুর জুড়ি নাই!

অভিনন্দন শেখ হাসিনা, ফ্যাসিজমের মুকুটে পদ্মাসেতু নামের শক্তিশালী আরেকটি পালক যুক্ত করায় আপনাকে অভিনন্দন!