নব্য রাজাকার ইউনূস
আবদুল্লাহ আল হোসাইন, যুক্তরাজ্য
একাত্তরের রাজাকারদের চোখে ছিল কুনজর, হাতে অস্ত্র, মুখে পাকিস্তানের ভাষা- আর হৃদয়ে ছিল এই ভূখণ্ডের স্বাধীনতা আর মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি ঘৃণা। আজকের রাজাকাররা আরও চতুর, আরও পরিপাটি, আরও বিপজ্জনক। তারা গায়ে পরে স্যুট, মুখে ঝুলিয়ে রাখে ‘নিরপেক্ষতা’র মুখোশ, আর পেছনে লুকিয়ে রাখে বিশ্বাসঘাতকতার ছক। এরা দেশের স্বার্থ বিকিয়ে দেয় বিদেশি প্রভুদের দরবারে- নিজের নিরাপত্তা আর সুবিধার বিনিময়ে। এই নতুন মুখোশধারী রাজাকারের নাম- ড. মুহাম্মদ ইউনূস। একাত্তরের রাজাকার অস্ত্র ধরেছিল পাকিস্তানের হয়ে, আর এই ইউনূস ষড়যন্ত্র করছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস- যিনি একসময় গ্রামীণ ব্যাংকের নাম ভাঙিয়ে সারা দুনিয়া ঘুরেছেন, গরিব নারীর গল্প শুনিয়ে তুলেছেন কোটি কোটি ডলার। অথচ তাঁর গড়া সাম্রাজ্যের ভিত্তি সেই মানুষগুলোর ঘাম, রক্ত আর ছেঁড়া শাড়ির আচলে বাঁধা কিস্তির টাকা। কেউ ডিম বিক্রি করে, কেউ মুরগি বেচে, কেউ ঘরের চাল তুলে দিয়ে সুদ শোধ করে- তাদের তিল তিল করে জমানো অর্থেই দাঁড়িয়েছে গ্রামীণ সাম্রাজ্য। আর সেই সাম্রাজ্যের মাথায় বসে, এখন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধানের আসনে চড়েই ইউনূস লন্ডনের এক হোটেলে এক রাত কাটাতে খরচ করেন ১০ লক্ষাধিক টাকা। চার রাতের সফরে হোটেল খরচই হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা- আর এই বিল এসেছে রাষ্ট্রের জনগণের ঘাম ঝরা টাকায়।
হ্যাঁ, শুনতে অবিশ্বাস্য লাগলেও- সরকারি হোটেল বিলের কপিতেই তা লেখা আছে: ২,১০,৩২৫ ব্রিটিশ পাউন্ড। মোট ৩৭টি বিলাসবহুল রুম বুক করে তিনি গেছেন লন্ডন সফরে। কূটনৈতিক সফর? না। বিনিয়োগ? না। সম্মেলন? না।
তাহলে?
লন্ডনের সেই বিলাসবহুল হোটেলের ভেতরেই রচিত হয়েছে এক রাজনৈতিক কলঙ্কগাথা- বিএনপির পলাতক ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের গোপন বৈঠক।
একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি, যিনি রাষ্ট্রের দৃষ্টিতে অপরাধী, যিনি দেশে ফিরতে পারেন নি এখনো, যার কোনো সাংবিধানিক পদ নেই- তাঁর সঙ্গে গোপনে দেখা করতে পারেন কেবল ইউনূসের মতো ব্যক্তি, যার আপাদমস্তক আবৃত ষড়যন্ত্রের মানচিত্রে। এ সাক্ষাৎ ছিল ক্ষমতার দালালি আর ইউনূসের অসহায় আত্মসমর্পণ।
বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ যেন তুলে দেওয়া হয়েছে সিলভার ট্রে-তে, আর ভাগাভাগির হিসাব মিলেছে হোটেল স্যুটের গোপন দরজার আড়ালে। ইতিহাস জানবে, সেদিন গণতন্ত্র নয়- দুরভিসন্ধি আর বিশ্বাসঘাতকতার চুক্তি সই হয়েছিল লন্ডনের পাঁচতারার নরম আলোয়।
ড. ইউনূস এর আগেও চুপচাপ বসে থাকেন নি। তিনি পুরো রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজের এনজিও সাম্রাজ্যের অংশ বানিয়ে নিয়েছেন।
তিনি শেয়ারবাজার থেকে ৯০ হাজার কোটি টাকা গায়েব করেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি সরানোর অজুহাতে ২০ হাজার কোটি টাকা খরচের নামে লোপাট করেছেন। নিজের মামলাগুলোর নিষ্পত্তি করিয়েছেন, আবার ৬৬৬ কোটি টাকার করও মাফ করিয়েছেন।
গ্রামীণ ব্যাংকে রাষ্ট্রের মালিকানা ২৫ শতাংশ থেকে নামিয়ে এনেছেন ১০ শতাংশে- সরকারের হাত দুর্বল করে নিজেই হয়েছেন শক্তিশালী। প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে এনজিও কর্মীদের বসিয়ে সব বড় বড় লেনদেনে নিজের হিস্যা নিশ্চিত করেছেন।
সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের ৭০০ কোটি টাকা সরিয়ে নিয়ে গেছেন নিজের প্রতিষ্ঠান গ্রামীণ ট্রাস্টে। বিদেশে কর্মী রপ্তানির নামে ‘গ্রামীণ এমপ্লয়মেন্ট সার্ভিসেস’ খুলে প্রবাসী আয়ের উপর নজর বসিয়েছেন। আর ‘গ্রামীণ ইউনিভার্সিটি’র নামে উচ্চশিক্ষাকেও এনেছেন ব্যক্তিমালিকানার আওতায়- সবকিছু যেন এক এক করে গিলে ফেলার ছক।
রাষ্ট্রকে তিনি দেখেন ব্যবসার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে- আর দেশবাসী শুধু দর্শক।
তবে ইউনূসের অপরাধ শুধু অর্থনৈতিক নয়- তা বহু আগেই ছড়িয়ে পড়েছে রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক এবং রাষ্ট্রদ্রোহীতার ভয়ংকর পরিসরে।
তাঁর প্রত্যক্ষ মদদে এবং নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকারের ছত্রছায়ায় দেশে ঘটেছে একের পর এক অপরাধ, যা শুধু ভয়াবহ নয়, বরং ইতিহাসের কলঙ্কচিহ্ন হয়ে থাকবে।
• জুলাই-আগস্টে রাষ্ট্রীয় মদদে সংঘটিত হয়েছে গণহত্যা
• পুলিশের উপর হামলা চালিয়ে ঘটানো হয়েছে পুলিশ হত্যা
• দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হয়েছে টার্গেট
• আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গুম, হত্যা ও বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পরিকল্পিতভাবে
• জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে হামলা হয়েছে নিছক প্রতিশোধপরায়ণতায়
• একে একে রাজাকারদের পুনর্বাসন ও জঙ্গিদের মুক্তি দিয়ে রাষ্ট্রকে ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধপূর্ব অন্ধকারে
• মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতি, মিথ্যা তথ্য ছড়িয়ে জাতির মানসিক ভিত্তিকেই ধ্বংস করার অপপ্রয়াস
• চালু করা হয়েছে মিথ্যা মামলার কারখানা, যেখানে নিরীহ মানুষকে জেলে পাঠানো হচ্ছে প্রতিহিংসার বশে
• সংবাদপত্র, শিল্পী, সাংবাদিক, লেখক, বিচারপতি, এমনকি বিরোধী রাজনৈতিক নেতাও বাদ পড়ছেন না এই দমনযন্ত্রের তালিকা থেকে।
ইউনূসের অন্তর্বর্তীকালীন সরকার আসলে কোনো সরকার নয়- এটি একটি নির্মম প্রতিশোধপরায়ণ অপশক্তির রাষ্ট্রীয় ছদ্মবেশ।
নেতৃত্বে ইউনূস, লক্ষ্য একটাই- শেখ হাসিনাকে সরিয়ে আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করে, দেশের ইতিহাস মুছে দিয়ে এক বিকৃত শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা।
সবচেয়ে ভয়াবহ দিক হলো- জাতীয় নিরাপত্তা নিয়েই এখন ড. মুহাম্মদ ইউনূস খেলা করছেন, যেন এটা তাঁর ব্যক্তিগত সম্পত্তি বা দখলি অঞ্চল।
• সেন্ট মার্টিনে সামরিক ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা, যা কৌশলগতভাবে দেশের সবচেয়ে স্পর্শকাতর অঞ্চলকে তুলে দেবে বিদেশিদের হাতে
• চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর বিদেশি শক্তির নিয়ন্ত্রণে দেওয়ার নীলনকশা, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবেশদ্বারকে পরিণত করবে করপোরেট উপনিবেশে
• রোহিঙ্গাদের জন্য তথাকথিত ‘মানবিক করিডর’, যার ছলে বৈধতা দেওয়া হচ্ছে মিয়ানমার থেকে জঙ্গি ও চোরাচালানিদের অনুপ্রবেশে
• এবং সবচেয়ে আশঙ্কাজনক- পার্বত্য চট্টগ্রামে ‘স্বশাসিত খ্রিষ্টান রাষ্ট্র’ গঠনের ষড়যন্ত্র, যা সরাসরি বাংলাদেশের ভৌগোলিক সংহতি ও সাংস্কৃতিক অস্তিত্বের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা
এই প্রতিটি সিদ্ধান্ত একেকটি বিষাক্ত ছুরি, যা ধীরে ধীরে বসানো হচ্ছে স্বাধীনতা যুদ্ধের চেতনার বুকের মধ্যে। জাতীয় পতাকার নিচে দাঁড়িয়ে যারা এই পরিকল্পনার পৃষ্ঠপোষকতা করছে, তারা মুক্তিযুদ্ধ নয়, এক নতুন উপনিবেশের রূপরেখা আঁকছে- আর সেই রূপরেখার মূল কারিগর হচ্ছেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
নব্য রাজাকার ইউনূস একাই দেশের নিরাপত্তা, অর্থনীতি, ইতিহাস ও পররাষ্ট্রনীতিকে বেচে দিয়েছেন- একটি ইনডেমিনিটির আশায়। কারণ- ইউনূস নিজে জানেন তিনি কী অপরাধ করেছেন। যে কারনে পলাতক তারেক রহমানের পা ধরতেও আজ তার বাঁধে না। শুধু একটি ইনডেমনিটির আশায়।
প্রশ্ন হলো- ইনডেমিনিটি পেলে ইতিহাস কি ভুলে যাবে ইউনূসের অপকর্ম? জাতি কি ক্ষমা করবে?
না।
এই জাতি রাজাকারদের ক্ষমা করে নি। নব্য রাজাকার ইউনূসকেও করবে না।

