ডাকরা গণহত্যা
সমীর হালদার, যুক্তরাজ্য
খুলনা বিভাগে আরো একটি হিন্দু হলোকাস্ট হচ্ছে ‘ডাকরা গণহত্যা’। চুকনগর গণহত্যা ঘটে ২০ মে, ডাকরা গণহত্যা ঘটে ২১ মে ১৯৭১, আজকের দিনে। আগেও বলেছি খুলনা ছিল হিন্দু অধ্যুষিত এলাকা। তবু ২০-২৫ জন রাজাকার সেদিন ৬৪৬ জন হিন্দু ধর্মালম্বীকে হত্যা করেছিল। হিন্দু অল্প বয়সী কিছু নারীদের রাজাকারদের নৌকায় উঠিয়ে নিয়ে গেলেও বেশির ভাগ হিন্দু নারীদের সেদিন বাঁচিয়ে রাখা হয়েছিল। হত্যা করা হয় হিন্দু পুরুষদের। এটি আমাদের মুক্তিযুদ্ধে আরেকটি ধর্ম টার্গেট করে গণহত্যা তবু এটিকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসে সাধারণ গণহত্যা যাকে ‘বাঙালি গণহত্যা’ নামে সাম্প্রদায়িক বিবেচনাকে আড়াল করা হয়েছে।
ডাকরা গ্রামে রাজাকাররা দুটি নৌকায় করে আসে। সেদিন ছিল শুক্রবার। ডাকরার বিখ্যাত কালী বাড়িতে সেদিন নরক নেমে এসেছিল। একজনকেও রেহাই দেয়া হয়নি। চলে লুটপাট। রাজাকার রজ্জব আলী ফকিরের নেতৃত্বে পুরো গ্রামে গণহত্যা চলে। লাশগুলো নদীতে ভাসিয়ে দেয়া হয়। দুইশোর মত লাশ মাটি চাপা দেয়া হয়। স্বাধীনতার এতগুলি বছরেও সেখানে কোন স্মৃতিফলক বানানো হয়নি।
অপারেশন সার্চলাইটের পর এপ্রিল মাসে রাজাকার শান্তি বাহিনী অবিভক্ত বরিশাল জেলার পিরোজপুর, বরগুনা, ঝালকাঠি, বরিশাল সদরে হিন্দু অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে গণহত্যা শুরু করে এবং হিন্দু সম্পত্তি লুট ও দখল করতে থাকে। অসংখ্যক নারীদের ধর্ষণ করা হয় এবং তাদেরকে মালে গণিমত ঘোষণা করা হয়। এইসব অঞ্চলের নদীতে এত লাশ ভেসে থাকে যে ঐ অঞ্চলের জীবিতরা অনেকদিন পর্যন্ত মাছ খেতো না।
জামাত ইসলামের একেএম ইউসুফকে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত প্রত্যক্ষ মদতে ডাকরা গণহত্যার জন্য অভিযুক্ত করেছে।
যারা বলে শরত বসু ও সোহওয়ার্দীর ‘অখন্ড বাংলা’ বাস্তবায়ন হলে খুব ভালো হতো তারা কি বলবেন খুলনা বরিশালের হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকাতে মাত্র ২০-২৫ জন রাজাকারের সামনে কেমন করে হিন্দু সম্প্রদায় এমন আত্মহুতি দিলো? গোটা খুলনা এলাকায় যে পরিমাণ হিন্দু ছিল তারা এক খান-এ সবুরের সঙ্গেই পারেনি। সবুরের হুমকিতে হিন্দু অধ্যুষিত খুলনা পাকিস্তানের ভাগে পড়েছিল। আমার ধারণা সেদিন পশ্চিমবঙ্গ ভারতের ভাগে না পড়লে পূর্ব পাকিস্তান ও বাংলাদেশ থেকে বিতারিড় হিন্দুরা ভারতের অবাঙালি কোন রাজ্যে গিয়ে আশ্রয় নিতো এবং বিহারীদের মত তারাও হতো দেশহীন!

