প্রমাণসহ ইউনুসের মেটিকুলাস প্লানের আদ্যোপান্ত

আবীর মাহমুদ, যুক্তরাজ্য

২০১১ পরবর্তী থেকেই ইউনুস প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের প্রতি ব্যাপক প্রতিশোধ পরায়ণ হয়ে ওঠে।একই সাথে দুর্নীতি ধামাচাপা দেওয়া, শাস্তি বাইপাস করা,ও ব্যাংকের এমডি পথ থেকে চলে যেতে বাধ্য করা ইত্যাদি কারণে সুযোগ খুঁজতে থাকে সর্বোচ্চ ক্ষতি করার। কিন্তু মুহিত সাহেব বেঁচে থাকাকালীন এবং ইউনূস আশা করছিল ২০১৬ সালে হিলারি প্রেসিডেন্ট হলে শেখ হাসিনার উপর প্রতিশোধ নেবে,কিন্তু হিলারি হেরে যাওয়ায় তা হয়ে ওঠেনি, তবুও ইউনুস বাংলাদেশ সরকারের উৎখাতে ব্যক্তিগত টাকায় লভিষ্ট ফর্ম নিয়োগ করে ২০১৮ সালে।

কিন্তু রিপাবলিকান ট্রাম্প প্রথমবার ক্ষমতায় থাকায় এবং ইউনুস যেহেতু ডেমোক্রেট ডোনার তাই খুব একটা সুবিধা করতে পারে নাই ট্রাম্পের মেয়াদ পর্যন্ত। মূল সর্বাত্মক চেষ্টা তাই হয় ২০২৩ সাল থেকে, ইউনুস প্রথমে দেশকে স্যাংশন দেওয়ার চেষ্টা করে, দেশের বিনিয়োগকে বাধাগ্রস্ত করে, বাংলাদেশ এত উন্নয়ন করার পরেও দেশদ্রোহী হিসাবে দেশের বিপক্ষে বিনিয়োগ করে। এক্ষেত্রে লবিস্ট ফার্ম ও PR ফার্ম ভাড়া করার পাশাপাশি জর্জ সরস সহ আরো কিছু ব্যক্তির সার্ভিস হায়ার করে। বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থা গুলো বিষয়টি আচ করে ২০২৩ সালে এবং ইউনূসের বিরুদ্ধে বিস্তারিত তদন্ত করার উদ্যোগ গ্রহণ করে। কিন্তু পরবর্তীতে বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে এবং ইউনূসের ম্যানেজ করা স্বভাবের কারণে বাধাগ্রস্ত হয়। সর্বশেষ গ্রামীণ ব্যাংক ৪০ বছরের অডিট ও ইউনূসের অপকর্মের বিরুদ্ধে মামলা করা শুরু করে। এছাড়াও অবৈধভাবে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে সৃষ্টি হওয়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান গরিবের কল্যাণে ফিরিয়ে নিতে উদ্যত হয়।সরকারও বুঝতে পারছিল ইউনুস দেশের বিরুদ্ধে কত বড় ষড়যন্ত্র করছে, এদিকে ইউনুসও বুঝতে পারছিল তার জীবনের শেষ সুযোগ।

তাই মূলত তার উদ্যোগে ও ব্যাপক ইনভেস্টমেন্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের প্লটটি রচিত হয়। অতীতে আমাদের কাছে

মেটিকুলাস প্ল্যান বিষয়ক ব্যাপক ডাটা না থাকলেও বর্তমানে ঘটনা প্রবাহের কারণে ১০০ ভাগ প্রমাণিত।

(১০ ফেব্রুয়ারি ২৫ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে রিপোর্টটি করা,সকল প্রমাণাদি এবং লিঙ্ক সংযুক্ত)

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টের সাবেক কর্মকর্তা, সাইবার সিকিরিউটি বিশেষজ্ঞ মাইক বেঞ্জ এবং মার্কিন রক্ষণশীল রাজনৈতিক ভাষ্যকার, ষড়যন্ত্র তাত্ত্বিক টাকার কার্লসনের পডকাস্টে বাংলাদেশ প্রসঙ্গে বেশকিছু বিষয় উঠে এসেছে। বিশেষ করে – ২০২৪ সালে বাংলাদেশে সরকার পতনে বাইডেন প্রশাসনের জড়িত থাকার বিষয়। এক্ষেত্রে – বাইডেন প্রশাসন CIA (মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা) এর প্রক্সি সংগঠন USAID, IRI, ও NED দ্বারা বাংলাদেশে বিশাল পরিমাণ অর্থ ঢেলেছে। অর্থায়ন করা হয় মিডিয়া, সাংস্কৃতিক কর্মী, র‍্যাপার, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী, হিজড়া, সমকামী, ট্রান্সজেন্ডার, র‍েড়িক্যাল গ্রুপ, জঙ্গি সংগঠন, সন্ত্রাসীগ্রুপ, সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার, শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের উপর। বলে রাখা ভালো যে – মাইক বেঞ্জ এবং টাকার কার্লসনের আলোচনাটি ইতিমধ্যে ইলোন মাস্ক তাঁর এক্স একাউন্টে শেয়ার করেছেন। টাকার কার্লসন একজন প্রভাবশালী সাংবাদিক ও ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ ব্যক্তিও বটে। কথার কথা যদিওবা বলি যে – ইলোন মাস্ক ও মি. কার্লসন রাজনৈতিক প্রতিহিংসার বসে বাইডেন প্রশাসনের দুর্নামে পডকাস্টটি আয়োজন করে ছড়িয়েছেন। সেক্ষেত্রে আচ্ছা চলুন দেখি – মি. মাইক বেঞ্জ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে যে অভিযোগগুলো করেছেন, আসলেই কি IRI, NED, USAID বাংলাদেশে অর্থায়ন করেছিল কি-না তাতে? যাদের উপরে অর্থায়ন করার কথা বলেছে, তাদের কোনপ্রকার সম্পৃক্ততা পাওয়া যায় কি-না?

বাংলাদেশের সরকার পতনের বিষয়ে পডকাষ্টঃ https://x.com/TuckerCarlson/status/1888054969145651464

ইলোন মাস্কের ‘মাইক বেঞ্জ’ এর বাংলাদেশ বিষয়ক টুইটঃ

https://x.com/elonmusk/status/1887036439289897208

মাইক বেঞ্জের মতে – USAID বাংলাদেশের সরকার পতনে অর্থায়ন শুরু করে ২০১৮ সালের সময় থেকে। এক্ষেত্রে আমরা যদি বাংলাদেশে USAID এর কার্যক্রম দেখি তবে লক্ষ্যণীয় যে – বাংলাদেশের বৃহত্তর এনজিও প্রতিষ্ঠান ব্রাক এর সঙ্গে USAID ‘বাংলাদেশ-আমেরিকা মৈত্রী’ প্রকল্প ঘোষণা করে ফেব্রুয়ারী ২০২৪ সালে। এতে ৫ বছরে ৪৮ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের পরিকল্পনা করা হয়েছিল। একই সাথে সেই সময় গ্রামীন আমেরিকার সাথেও ইউএসএর চুক্তি হয়েছিল। ব্রাকের নাম কেনো আনলাম সেটিও বলছি!

(ব্রাক ও USAID এর ‘বাংলাদেশ-আমেরিকা মৈত্রী’ প্রকল্পঃ

https://www.jugantor.com/tp-second-edition/775010)

মাইক বেঞ্জ বললেন – ট্রান্সজেন্ডার, হিজড়া ও সমকামী সম্প্রদায়ের উপর IRI, USAID অর্থায়ন করে বাংলাদেশে অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এক্ষেত্রে আমরা যদি লক্ষ্য করি তবে দেখতে পাই – ২০২৪ সালের ১৯’শে জানুয়ারি ‘জাতীয় সেমিনার ২০২৪’ নামক অনুষ্ঠানে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ মাহতাব সমকামীতা এবং ট্রান্সজেন্ডার বিরোধী বক্তব্য দিয়ে ৭ম শ্রেণির পাঠ্যবইয়ের এক অধ্যায়ে ট্রান্সজেন্ডার বিষয়ক একটি গল্পের পাতা ছিঁড়ে ফেলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে গোটা দেশের মানুষ দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। একপক্ষ আসিফ মাহতাব এবং অন্যপক্ষ সমকামী/ট্রান্সজেন্ডাদের অধিকারের পক্ষপাত হয়ে পড়ে। দেশজুড়ে হইচই রব উঠলে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয় আসিফ মাহতাবকে চাকুরীচ্যুত করেন। আরো ইন্টারেস্টিং ব্যাপার যে – এই ঘটনায় বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার কম্যুনিটির সদস্যরা দাবী করেছিলেন – ‘তারা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। আসিফ মাহতাবের বক্তব্য মানুষের মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার নিয়ে বিদ্বেষ আরো বাড়িয়ে দিবে’।

আসিফ মাহতাবের সমকামীতা এবং ট্রান্সজেন্ডার বিতর্কঃ

https://www.bbc.com/bengali/articles/c51ejgq45xlo

আপনার মনে হতে পারে – শিক্ষক আসিফ মাহতাব, ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়, ট্রান্সজেন্ডার কম্যুনিটি, শিক্ষার্থী এরা সবাই আলাদা আলাদা, কিন্তু নাহ।এনারা সবাই USAID, IRI দ্বারা অর্থায়নকৃত সদস্য, কিন্তু একই নাটকে অভিনয় করেছেন ভিন্ন রোল-এ! একদল সরকারের পক্ষে থেকে, অন্যদল সরকারের বিরোধিতা করে মানুষকে উত্তেজিত করেছিল! আরো গভীরে যেতে হবে।

২০২৩ সালের ২৬’শে নভেম্বর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘উইমেনস ক্যারিয়ার কার্নিভাল’ অনুষ্ঠানে হো-চি-মিন ইসলাম নামে এক ট্রান্সজেন্ডার নারীকে যোগ দিতে না দেওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক ক্রিয়া ও প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। হো-চি-মিন ইসলাম ছাড়াও পোগ্রামে ছিলেন ব্র্যাক মাইক্রোফাইন্যান্সের জেন্ডার ইনক্লুশন অ্যান্ড উইমেন অন্ট্রপ্রোনারশিপ ইউনিটের সিনিয়র ম্যানেজার কাশফি বিনতে আহমেদ এবং আজিমুর রোকিয়া রহমান, ছিলেন আজমেরী হক বাঁধন, চিরকুট ব্যান্ডের সুমী।

(নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হো-চি-মিনকে ঘিরে বিতর্কঃ

https://www.bbc.com/bengali/articles/cmlpx1y02v4)

একই বছর অর্থাৎ ২০২৩ সালের ১০’শে আগস্ট গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন হো-চি-মিন ইসলাম। সাক্ষাতের পর তার ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাসের মাধ্যমে বলেন – ‘ট্রান্সজেন্ডার মানুষদের জন্যে আজকের দিনটি মাইলফলক’! বেশ দম্ভের সঙ্গেই বলেন – ‘অস্ত্রোপচার করে পুরুষ থেকে নারী হয়েছি, গোপন করার কিছু নেই’! এই যে ব্যাপারগুলো, এরপর নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে হো-চি-মিনকে ঘিরে বেশ তুলকালাম কান্ড, এগুলোর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর প্রতি জনমনে একরকম ধর্মীয় বিদ্বেষের ভাবধারা সৃষ্টি করা হয়েছে মাত্র৷ অর্থাৎ মেসেজটা এই যে- আঃলীগ সরকারের সরাসরি সমর্থনেই ধর্মীয় মূল্যবোধের এদেশে ট্রান্সজেন্ডার/LGBTQ ছড়ানো হচ্ছে। বাংলাদেশে আরো একজন ট্রান্সজেন্ডার নারীকে নিয়ে বেশ হইচই হয় (২০২১) – তাসনুভা আনান (শিশির)। বাংলাদেশের প্রথম ট্রান্সজেন্ডার নারী উপস্থাপিকা হিসেবে বাংলাভিশনে যাকে পরিচয় করিয়ে দেওয়া হয়। মজার বিষয় – তারা দুইজনই ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার কম্যুনিটিকে প্রতিনিধিত্ব করেন। আরো মজার বিষয় – জুলাই অভ্যুত্থানে একদম সামনের সারি থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেলেন হিজড়া সম্প্রদায়, ছিল ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের সমর্থন,ছিল বিহারী ও কিশোর গাং। আরো মজার বিষয় যে – ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের বিপ্লবীগণ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বেশ আরামে জীবনযাপন করছেন। বলে রাখা ভালো – IRI এর অর্থায়নে ট্রান্সজেন্ডার সম্প্রদায়ের নাচ, শর্টফ্লীমসহ নানা কর্মসূচী ২০১৮-২০২৪ এই সময়টাতে অনুষ্ঠিত হয়। বিহারী (মাইনরগ্রুপ), LGBTQ কম্যুনিটি থেকে ৭৭ জন এক্টিভিস্ট এবং ৩২৬ নাগরিক নিয়ে তারা আলাদা টিম গঠন করে বছরব্যাপী কার্যক্রম চালায়। এদিকে ২০২০ সালে বাইডেন প্রশাসন বাংলাদেশে ট্রান্সজেন্ডাদের ড্যান্স ফেস্টিভ্যালের জন্য ২.৭ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেন। জানাজানি হলে ২০২৪ সালের শুরুতে মার্কিনীদের মধ্যে যা বেশ ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটায়। যেটা বাংলাদেশের প্রিন্ট মিডিয়াগুলো, সাংবাদিকেরাও কৌশলেই চেপে যায়।

(হো-চি-মিন ইসলামের পাশে শেখ হাসিনাঃ

https://www.prothomalo.com/bangladesh/jretv8gk5)

(তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে নাচের অনুষ্ঠানঃ

https://www.risingbd.com/entertainment/news/384031)

বাংলাদেশের ট্রান্সজেন্ডার, LGBTQ সম্প্রদায়কে অর্থায়ন করায় রন ডেসান্টিস (রিপাবলিকান রাষ্ট্রপতির প্রার্থী এবং ফ্লোরিডা গভর্নর) ক্ষোভঃ

https://edition.cnn.com/…/fact-check-ron…/index.html

জুলাই আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয় তৃতীয় লিঙের মানুষঃ

মজার বিষয় যে – শরীফ ও শরীফা গল্প নিয়ে যেই হইচই আন্দোলন হয়েছিল, সপ্তম শ্রেণির বইয়ে এই অধ্যায়টি দিয়েছিল ‘Bandhu Social Welfare Society’ নামক একটি সংগঠন। যারা IRI এর সরাসরি ফান্ডিংয়ে খুলনা, কক্সবাজারে এবং ঢাকা শহরে ট্রান্সজেন্ডারের ড্যান্সিং পোগ্রাম আয়োজন করেছে। যা গ্রে-জোনের রিপোর্টে উঠে এসেছে। শরীফ ও শরীফা গল্প ভাইরাল হবার সময়েই আসিফ মাহতাবসহ অনেকেই এই সংগঠন ঘেরাও করে আন্দোলনও করেছিল।

ম্যাক্স ব্লুমেলথালের নিউজ আউটলেট গ্রে-জোনের রিপোর্টঃ

https://thegrayzone.com/…/us-plot-destabilize-bangladesh/

মাইক বেঞ্জের ভাষ্যে – জুলাই আন্দোলনে ব্যবহার করা হয় সাংস্কৃতিক কর্মীদের। কারা এই সাংস্কৃতিক কর্মী? লক্ষ্য করলেই দেখবেন – আন্দোলনে সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় আজমেরী হক বাঁধনসহ আরো অনেকেই। বাঁধনের কথা উল্লেখ করলাম, কারণ – আপনাদের হয়তোবা মনে আছে ‘রেহেনা এবং খুফিয়া’ দুটি সিনেমা নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র ইসলামিস্টদের মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। বিশেষ করে – খুফিয়া সিনেমায় সমকামিতা নিয়ে হইচই হলে বাঁধনের পক্ষে এসে দাঁড়ায় ধর্মনিরপেক্ষ এবং আঃলীগপন্থি নেতাকর্মীরাই। আরো গভীরভাবে বলি – বাঁধনকে কখনো আঃলীগ নেত্রী সাবেক মন্ত্রী ডা.দীপু মনি, সাবেক আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তারানা হালিমের সঙ্গে প্রায়শই দেখা গেছে। ২০১৮ সালের নির্বাচনে আঃলীগের পক্ষে এবং ২০২০ সালের ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আঃলীগ প্রার্থী আতিকুল ইসলামের প্রচারণায় অংশ নেন বাঁধন। এই যে ব্যাপারগুলো – এসবের মাধ্যমে বাঁধন একদিকে নিজেকে আওয়ামীপন্থী হিসেবে জাহির করতে পেরেছেন, অন্যদিকে জুলাই অভ্যুত্থানে একাট্টাভাবে যোগ দিয়ে একটা মেসেজও দিয়েছেন – ‘আওয়ামীলীগ সমর্থক হলেও, আওয়ামীলীগকের অন্যায়ে তিনি চুপ করে থাকতে পারেন না’! জনগণ বুঝেছে – ‘আরে আঃলীগের সমর্থকই যখন আঃলীগের বিরুদ্ধে তখন আঃলীগ নিশ্চয়ই মস্তবড় কোন অন্যায়ই করেছে! আর তো ঘরে থাকা যায় না’! বলে রাখা ভালো যে – শেখ হাসিনার পতনের ৪০ দিন পূর্তি উপলক্ষ্যে বাঁধনেরা গরু জবাই দিয়েছেন। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল ভাষ্কর্য ভাঙার পর তার জবাব ছিল এমন – ‘বঙ্গবন্ধুর অপমানে তাঁর দুই সন্তানই দায়ী’!

(আওয়ামীলীগের নির্বাচনী প্রচারণায় বাঁধনঃ

খুফিয়া সিনেমা নিয়ে বাংলাদেশে বিতর্কঃ

জুলাই আন্দোলনে অভিনেত্রী বাঁধনঃ https://youtu.be/gidRGVnKPqM?si=rFOdIjVNhHAumtZq

সরকার পতনের ৪০ দিন পূর্তিতে বাঁধনের গরু জবাইঃ

মাইক বেঞ্জ বললেন – জুলাই অভ্যুত্থানে নিষিদ্ধ সংগঠন, যেগুলোকে মার্কিন সরকার ধ্বংস করতে চায় এমন জঙ্গি সংগঠনের উপর অর্থায়ন করা হয়। জুলাই অভ্যুত্থানে কি এমন কোন নিষিদ্ধ সংগঠন ছিল? হ্যাঁ – বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিষিদ্ধ সংগঠন হিজবুত তাহরীর অনলাইনের মূল সমন্বয়ক (নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির প্রাক্তন শিক্ষার্থী) ইমতিয়াজ সেলিম প্রকাশ্য দাবী করে বলেন- ‘ইনক্লুডিং জেন-জি হিযবুত তাহ্‌রীর একটা ইন্টেলেকচুয়্যাল এবং পলিটিক্যাল লিডিং ফোর্স। ডেফিনিটলি আমরা মাঠে ছিলাম। কিন্তু এই আন্দোলনটা কোনোভাবেই যাতে কালার না হয় এবং কোনোভাবে যাতে এটাকে কেউ প্রভাবিত করতে না পারে আমরা খুবই সতর্কতার সাথে উইদাউট আওয়ার ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম – নর্থ সাউথ, ব্রাক এবং ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি।

ইমতিয়াজ সেলিমের প্রকাশ্য দাবীঃ

মাইক বেঞ্জ বললেন – জুলাই অভ্যুত্থানে অর্থায়ন করা হয় শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সমন্বয়ক দের উপর। জুলাই আন্দোলনের সময় পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলো খালি করলে হঠাৎ করে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাই আন্দোলন চালিয়ে নেয়। ৫’ই আগষ্টের পর খোদ প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এক ইন্টারভিউতে তারা দাবী করেন – ‘যেকোন মূল্যেই শেখ হাসিনাকে উৎখাত করাই ছিল তাদের প্রধান উদ্দেশ্য’। এদিকে – প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের উপর সরকার অ্যাকশন নিলে, তাতে প্রতিবাদ জানিয়ে ঐ আন্দোলনে সংহতি জানায় ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২৬ জন শিক্ষক।

প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবীঃ

আন্দোলনে ব্রাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬২৬ শিক্ষকের সংহতিঃ

https://www.dhakapost.com/national/296288

মাইক বেঞ্জ বললেন – শেখ হাসিনার পতনে র‍্যাপার এবং সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের উপরেও অর্থায়ন করা হয়। এমন কোন র‍্যাপার বা সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সার কি আছে? জ্বী আছে। র‍্যাপ সংগীত তরুণ-যুবকদেরকে আন্দোলনে বেশ ক্ষেপিয়ে দিয়েছিল। র‍্যাপার হান্নানের ‘আওয়াজ উডা’, সেজানের ‘কথা ক’, তৌফিকের ‘এ দায় কার’, এই র‍্যাপ গানগুলো পরিকল্পিতভাবে ভিন্ন উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে। এতে অর্থায়ন থেকে শুরু করে লিরিক্স সাজানো, সবকিছু হয়েছিল USAID, IRI নির্দেশেই। মাইক বেঞ্জ ইতিমধ্যেই তাঁর এক্স একাউন্টে তৌফিকের ঐ গানটি শেয়ার দিয়ে পরিকল্পনার কথা বলেছেন। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়া ইনফ্লুয়েন্সারদের মধ্যে সবার আগে আন্দোলনে যোগ দিয়ে সামনের সারিতে ছিল সালমান মুক্তাদির। বলে রাখা ভালো যে – সালমান মুক্তাদির তার ‘অভদ্র প্রেম’ মিউজিক ভিডিওর দায়ে দেশে বেশ বিতর্কিত হয়েছিলেন। এমন ব্যক্তিবর্গই যখন আন্দোলনে সামনে এসেছিল, তখন তরুণদের মধ্যে একটা তাড়না লক্ষ্য করা গেছে – ‘এতদিন যাকে খারাপ বলেছি আমরা, আজ সে-ও দেখি আমাদের পক্ষে। আর তো ঘরে বসে থাকা যায় না’!

যেভাবে তৈরি হয় ‘আওয়াজ উড়া, কথা ক’ – হান্নান এবং সেজানের স্বীকারোক্তিঃ

মাইক বেঞ্জ আরো বললেন – জুলাই আন্দোলনে শীর্ষ সব সন্ত্রাসীদেরকেও ব্যবহার করা হয়েছে। আসলেই কি এমন ঘটেছে। হ্যাঁ – ৫’ই আগষ্টের পর ডক্টর ইউনুস সরকার দেশের পরিচিত শীর্ষ সকল সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তি দিয়েছে।উদ্দেশ্য ছিল পরিস্থিতি যাই হোক -‘আওয়ামী লীগ ঠেকাও’ দেশের নিরাপত্তা অন্য কোন বিষয় গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

দেশের পরিচিত শীর্ষ সন্ত্রাসীদেরকে মুক্তিঃ

মাইক বেঞ্জের পডকাস্টে আরো একটা বিষয় উঠে আসে, IRI ২০১৯/২০ সালের দিকে একটি রিপোর্ট সাবমিট করে যেখানে তারা বাইডেন প্রশাসন বিএনপিকে সমর্থন করতে বলে, এবং দেশকে অস্থিতিশীল করে তুলতে বলে। যদিও বিএনপি জনগণকে মবিলাইজ (সংগঠিত করতে) ব্যর্থ হয় এবং ২০১৮ নির্বাচনে পরাজিত হয়। ব্যাপারটি বাইডেন প্রশাসনকে নিসন্দেহেই আরো ক্ষুব্ধ করে তুলে। এ পডকাস্টে মাইক বেঞ্জ আরো বলেন – জুলাই আন্দোলনে দুইটি নতুন একটিভ স্টুডেন্টস্ গ্রুপকেও সম্পৃক্ত করা হয়। এদের একটির নাম বেশ পরিচিত, সেটি বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারীদের রাজনৈতিক দল ‘নাগরিক ছাত্র শক্তি’, যা ৪’ই অক্টোবর ২০২৩’য়ে প্রতিষ্ঠিত হয় (যা ইউনূসের নাগরিক শক্তি নামক রাজনৈতিক প্রয়াসের ছাত্র সংগঠন)। মজার বিষয় যে, শেখ হাসিনাকে উৎখাতের এই তথ্যটি রাশিয়ার গোয়েন্দা সংস্থাও জানতো। ফলে ২০২৪ সালে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনের আগে, ২০২৩ সালের ১৫’ই ডিসেম্বর রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা বিশেষ সতর্কবার্তায় বলেছিলেন- ‘বাংলাদেশে একটি আরব বসন্ত ঘটাবে CIA’। একই সতর্কবার্তা সহিত নিউজ করে চায়নার গণমাধ্যম। জাপানিজ গণমাধ্যম ২৯’ই জুলাই একইরকম সম্ভাব্যতা নিয়ে নিউজ করে। যাইহোক, পডকাস্টে আরো একটা বিষয় উঠে আসে – বাংলাদেশের নিরাপত্তাকে প্রাধান্য দিয়ে শেখ হাসিনা বাংলাদেশে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে ‘মিলিটারি বেইজ’ করতে দেননি। ফলে ২০১৮ সাল থেকে আমেরিকা USAID, IRI, NDI এরমতো প্রতিষ্ঠানের দ্বারা বাংলাদেশকে পলিটিক্যালি ডিস্টাবল করার প্রচেষ্টা শুরু করে।

ছাত্রদের নতুন সংগঠন ও মারিয়া জাখারোভার সতর্কতা বিষয়ে আরো বিস্তারিতঃ

https://www.facebook.com/share/p/19rCnWws6R/

মাইক বেঞ্জের তথ্যমতে – ২০২১ সালে ডিসইনফরমেশন প্রতিরোধে মোঃ তৌহিদ হোসেন’সহ আরো কয়েকজনকে স্টেট ডিপার্টমেন্ট, USAID মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে নিয়ে গিয়ে ফরমাল ট্রেনিং দেয়। বলে রাখা ভালো – মোঃ তৌহিদ হোসেন ড. ইউনুস সরকারের বর্তমান ফরেন এডভাইজার হিসেবে নিয়োজিত আছেন। এদিকে – দেশে রাজনৈতিক সংঘাত তীব্রতর হলেও, নির্দিষ্ট একটা পক্ষকে টার্গেট করে মামলা হামলার মতো খবর সোশ্যাল মিডিয়ায় আসলেও ইন্টেরিম সরকার মিডিয়াকে সেসব এড়িয়ে যেতে বরং চাপ ক্রিয়েট করে চলেছেন। যা ইতিমধ্যেই অনেক সাংবাদিকও স্বীকার করেছেন।

USAID দ্বারা ডিসইনফরমেশন প্রতিরোধে ট্রেনিংঃ

https://bd.usembassy.gov/usaid-workshop-trains-reporters…/

প্রসঙ্গত যে -সরকার উৎখাতে নিয়োজিত এই টোটাল গ্রুপটির সর্বশেষ ফরমাল মিটিংটি হয়েছিল দেশের বাইরে ২০২৪ সালের ২৭-২৮’শে জুন ফিলিপাইনের ম্যানিলায় ইউনুস সেন্টারের উদ্যোগে ‘Social Business Day’ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে উপস্থিত ছিলেন ড. ইউনুস, আসিফ নজরুল, শহিদুল আলম, লামিয়া মোর্শেদ, ফরিদা আখতার, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান ভিসি আব্দুল হান্নানসহ বর্তমানে বিভিন্ন ইম্পরট্যান্ট পদধারি সকলে। এই সম্মলেনটি আন্দোলন তরান্বিত হবার ঠিক এক সপ্তাহ আগেই অনুষ্ঠিত হয়। এই সম্মেলনের আয়োজক ফিলিপাইনের NWTF নামক একটি এনজিও প্রতিষ্ঠান, যারা ফিলিপাইনে USAID এর মূল পার্টনার। ইউনুস সেন্টারের সাথে NWTF মিলে এই Social Business Day আয়োজন করেছিলেন। যারা বিভিন্ন সময়ে USAID & YUNUS CENTER থেকে ফান্ডিংও পেয়ে থাকেন। ডক্টর ইউনুস ইন্টেরিম সরকারের প্রধান উপদেষ্টা; আসিফ নজরুল আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা; ফরিদা আখতার মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা; লামিয়া মোর্শেদ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার প্রধান সমন্বয়কারী, আব্দুল হান্নান বর্তমানে তিনি গ্রামীণ ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান( ইউনুস নিয়োগকৃত) হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ফিলিপাইনের ম্যানিলায় ড. ইউনুস সেন্টারের সম্মেলনঃ

https://socialbusinesspedia.com/events/sbd2024/

ইউনুস সেন্টার ও NWTF সমন্বয়ে সম্মেলনঃ https://visayandailystar.com/fisherfolks-receive…/

উপসংহার –

যাইহোক,পুরো বিষয়টিতে অসাধারণ সমন্বয়কের ভূমিকা পালন করেছে ইউনুস সেন্টার , আর মাস্টারমাইন্ড ও উদ্যোক্তা হচ্ছে ইউনুস নিজে।

আওয়ামী লীগ সরকারকে উৎখাতে মূল বিনিয়োগ করেছে ইউনূস নিজে,হিলারি-বাইডেন প্রশাসন,জামাত ইসলামি মূলত এই তিনটি গ্রুপ, এছাড়াও গোয়েন্দারা সক্রিয় ছিল পূর্ণভাবে, এবং ডেমোক্রেট শিবির সরকার পতনের সাথে সাথে বিশ্বে ইউনূসকে সাপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে কাজ করেছে।

স্বাধীনতা যুদ্ধের পরে বাংলাদেশের সবচেয়ে বৃহৎ ও গভীর ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিধনের প্রক্রিয়াতে আছে ইউনুস যা পাঁচ আগস্টই শেষ হয়ে যায়নি, বরং ইউনুসকে থামানো না গেলে আমাদের ক্ষতির পরিমাণ প্রতিদিনই বাড়বে।

বর্তমানে পাকিস্তানসহ স্বাধীনতা বিরোধী সকল শক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রতিশোধ নিচ্ছে এবং ইউনুস ব্যক্তিগতভাবে সর্বোচ্চ লাভবান হচ্ছে।

আমাদের প্রাপ্ত তথ্যানুসারে যে কোন ভাবেই ইউনুস আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ ক্ষতি করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। একদিকে আওয়ামী নিধন অন্যদিকে ক্ষমতা কুক্ষিগতে করে রাজনৈতিক দল গঠন করে সরকার গঠন করা তার উদ্দেশ্য।

আর এটি সম্ভব না হলে বিএনপির সাথে নেগোসিয়েট করে প্রেসিডেন্ট হয়ে নিজের লিগেসি শেষ করতে চায় ইউনুস।

আমাদের আজকের এই পরিণতি ঘটেছে ইউনূসের ষড়যন্ত্রে আমাদেরও বেশ কিছু ভুল ও নিজেদের লোকের বেইমানি ছিল এখানে।