ভোলায় সহিংসতার দায় অনেকের
ভোলার বোরহানউদ্দিনে সংঘটিত ঘটনাবলি দেখে মনে হচ্ছে, এগুলো তাৎক্ষণিক উত্তেজনা বা উন্মাদনার ফসল নয়। বরং পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ও সহিংসতা ছড়ানোর অপচেষ্টা চালানো হয়েছে। নিম্নবিত্ত যে তরুণের বিরুদ্ধে ধর্মীয় বিদ্বেষমূলক বার্তা ছড়ানোর অভিযোগ আনা হয়েছে, তার পক্ষে এই দুঃসাহস দেখানো অবাস্তব।
উপরন্তু সে নিজেই থানায় গিয়ে তার ফেসবুক হ্যাক হওয়ার অভিযোগ করেছে। পুলিশ এর সত্যতাও পেয়েছে। তারপরও যেভাবে ঘটনাটিকে ফুলিয়ে-ফাঁপিয়ে লোকজনকে উস্কে দেওয়া হয়েছে, সেটা সংঘবদ্ধ চক্র ছাড়া সম্ভব নয়। এর জের ধরে চার চারটি মূল্যবান প্রাণ মর্মান্তিকভাবে ঝরে যাওয়া, অনেকের আহত হওয়া এবং ওই এলাকার সাম্প্রদায়িক সহাবস্থান অনিশ্চিত হওয়ার দায় অনেককে নিতে হবে।
যে বা যারাই সাম্প্রদায়িক উস্কানি দিয়ে থাকুক এবং সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টি করুক, তাদের তো আইনের আওতায় আনতেই হবে। একই সঙ্গে সংশ্নিষ্ট সব পক্ষকে ভোলার ঘটনার অন্তত নৈতিক দায় স্বীকার করে ভবিষ্যতে সতর্ক হওয়ার শপথ নিতে হবে।
ওই এলাকার ধর্মীয় নেতাদের উচিত ছিল জনতাকে বোঝানো- ধর্মীয় উন্মাদনা ভালো নয়। যে কোনো বিষয়ে অভিযোগ আনার আগে নিজে নিশ্চিত হওয়ার তাগিদ আমাদের ধর্মেই দেওয়া হয়েছে। অন্য ধর্মের মানুষের ওপর হামলা বা রক্তপাত চাওয়া তো কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। দুর্ভাগ্যবশত সেখানকার ধর্মীয় নেতারা দৃশ্যত এর বিপরীত ভূমিকা গ্রহণ করেছিলেন।
আমি বলব, পুলিশের দিক থেকেও প্রস্তুতির ঘাটতি ছিল। শুক্রবার থেকেই যখন ধর্মীয় উত্তেজনা ছড়ানো হচ্ছিল, তখন থেকেই বোঝা উচিত ছিল, পরিস্থিতি যে কোনোদিকে মোড় নিতে পারে। এ জন্য পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কি ছিল? সমাবেশস্থলে গিয়ে ধর্মীয় নেতাদের বোঝানোর চেয়ে আরও আগে তাদের ডেকে বোঝানো যেত যে, সংঘাত কারও জন্যই কল্যাণকর হবে না। আমি মনে করি, সামনের দিনগুলোতে এ ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুলিশের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর জোর দিতে হবে। প্রয়োজনে বিশেষ প্রশিক্ষণ দিতে হবে।
সরকারের দিক থেকে সর্বোচ্চ সতর্কতা জরুরি। কেন বারবার একই ধরনের সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটছে; কেন বারবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এই অকাজে ব্যবহূত হচ্ছে; এ ধরনের পরিস্থিতিতে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় নেতারা কী করছেন- সরকারের শীর্ষ মহলকে গভীরভাবে ভাবতে হবে।
সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী; আইনের শিক্ষক