খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়: ছাত্র আন্দোলনে সংহতি প্রকাশের শাস্তি শিক্ষক অপসারণ
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানানোয় তিন জন শিক্ষককে অপসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট কমিটি। গতকাল সোমবার সিন্ডিকেট কমিটির বৈঠক থেকে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এই তিন শিক্ষক হলেন, বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক আবুল ফজল, একই বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম এবং ইতিহাস ও সভ্যতা বিভাগের শিক্ষক হৈমন্তী শুক্লা কাবেরী।
২০১৯ সালের ১ জানুয়ারিতে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা পাঁচ দফা দাবিতে আন্দোলনে নেমেছিলেন। শিক্ষার্থীদের দাবির মধ্যে ছিল—ছাত্র বেতন কমানো, আবাসন ব্যবস্থা নিশ্চিত করা, উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা, অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে অবকাঠামো নির্মাণ ও ছাত্র সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা। ওই আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংহতি জানান কয়েকজন শিক্ষক। তাদের মধ্যে চার জনকে গত বছরের ১৩ অক্টোবর কারণ দর্শানো নোটিশ দেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
ওই নোটিশে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগে বলা হয়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে মিথ্যা তথ্য, কুৎসা রটানো এবং উসকানিমূলক কথা প্রচার করেছিলেন তারা। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সংহতি জানাতে অন্যান্য শিক্ষকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলে তারা। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক কাঠামো থাকার পরও তারা নিয়মতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করেছেন।
পরে ওই শিক্ষকরা কারণ দর্শানো নোটিশের জবাব দেন। অপসারণের কথা জানিয়ে এরপর গতকাল তাদের চূড়ান্ত নোটিশ দেওয়া হয়। এই নোটিশে বলা হয়, গত ১৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে শিক্ষকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে। তাই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মোতাবেক তাদের অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই শিক্ষার্থীর বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবিতে আমরণ অনশন কর্মসূচিতে আজ সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্বালন করেন সাধারণ শিক্ষার্থী ও খুলনা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। ছবি: স্টার
নোটিশে বলা হয়, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় কেন অপসারণ করা হবে না, আগামী ২১ জানুয়ারির মধ্যে তা জানাতে হবে।
এ ব্যাপারে বাংলা বিভাগের প্রভাষক শাকিলা আলম ডেইলি স্টারকে বলেন, আজ রাত সাড়ে ১২টায় আমাকে ইমেইলে নোটিশ দেওয়া হয়েছে। বেলা ১১ টার দিকে বাসায় চিঠি এসেছে। সেখানে সিন্ডিকেটের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী অপসারণের কথা জানানো হয়েছে এবং ২১ জানুয়ারির মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়েছে। নোটিশের জবাব দেওয়ার জন্য আমাদের কমপক্ষে ১০ দিন সময় দেওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপউপাচার্য অধ্যাপক হোসনে আরা ডেইলি স্টারকে বলেন, ছাত্র আন্দোলনের সময়ে তারা যা করেছিলেন তা উল্লেখ করেই ব্যাখ্যা চাওয়া হয়েছিল। তাদের ব্যাখ্যা সন্তোষজনক না হওয়ায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। তারা তদন্ত কমিটিকে বক্তব্য দিতে হাজির হননি। সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন মেনেই যথাযথ প্রক্রিয়ায় ওই শিক্ষকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
এর আগে গত ১৩ জানুয়ারি দুই শিক্ষার্থীকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করেছে খুবি কর্তৃপক্ষ। আন্দোলনের সময় শিক্ষকদের সঙ্গে অসদাচরণ, তদন্ত ও একাডেমিক কার্যক্রমে বাধা দেওয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে। তারা হলেন—বাংলা ডিসিপ্লিনের মোহাম্মদ মোবারক হোসেন নোমান (১৮তম ব্যাচ) এবং ইতিহাস ও সভ্যতা ডিসিপ্লিনের ইমামুল ইসলাম (১৭তম ব্যাচ)। সাজা প্রত্যাহারের দাবিতে এরই মধ্যে অনশনের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের দাবি ১৫ জানুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে প্রশাসনকে ২৪ ঘণ্টা সময় দেন শিক্ষার্থীরা। প্রশাসন শাস্তি প্রত্যাহার না করায় ১৭ জানুয়ারি সন্ধ্যা থেকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে তারা আমরণ অনশন শুরু করেছেন।
আজ এই কর্মসূচিতে সাধারণ শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। খুলনা নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও সন্ধ্যায় ছাত্রদের সঙ্গে মোমবাতি জ্বালিয়ে আন্দোলনে সংহতি জানান।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ইমামুল ইসলাম ডেইলি স্টারকে বলেছেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বেচ্ছাচারিতা করছে। যতক্ষণ প্রশাসন তাদের সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসছে, আমাদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না করছে করছে, ততক্ষণ আমরা অনশন চালিয়ে যাব।’