র্যাব কী শেখ হাসিনার রক্ষী বাহিনী? মুজিবীয় রক্ষী বাহিনীর মর্মান্তিক পরিণতি থেকে কোনো সুশিক্ষা নিতে পেরেছে কী বর্তমান আওয়ামী লীগ?
এই প্রতিবেদন পূর্ব্বর্তীতে “মার্কিন সরকার দ্বারা র্যাব নিষিদ্ধ কিন্তু আওয়ামী লীগ এর র্যাব-এর প্রতি সমর্থন অনড়ঃ পাঠকেরা কী ভাবছেন?” শিরোনামে ২৩ জুলাই ২০২২ এ প্রথম প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেতনে উঠে আসা বিষয়গুলোর বর্তমানে প্রাসঙ্গিকতার প্রেক্ষিতে এবং আরো অনেক পাঠকের মন্তব্য যা নির্দিষ্ট সময়সীমার ভেতর না পাওয়ার কারণে অপ্রকাশিত ছিল সেগুলোসহ বর্ধিত পরিসরে আপডেট আকারে এই প্রতিবেদনটি পুনর্লিখিত ও পুনঃপ্রকাশিত হলো।
টেকনাফ উপজেলার আওয়ামী কাউন্সিলর একরামের হত্যকাণ্ডের পেছনে র্যাবের সুস্পষ্ট ভূমিকা একটি অডিও রেকর্ডিং এর মাঝে সংরক্ষিত না থাকলে র্যাব এর বিচার-বহির্ভূত রাজনৈতিক ও অরাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকবার বিষয়টি একটি গুজব বা জল্পনা বলে পাশ কাঁটানোর সুযোগ ছিলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও সর্বোপরি, আওয়ামী সরকারের। কিন্তু বিধি বাম! এই রেকর্ডিং ফাঁস হয়ে যাওয়াতে র্যাব এর ভূমিকা নিয়ে এই প্রথম সুদৃঢ় আলামত হাজির করা গেল এবং আন্তর্জাতিক মহল গুরুত্বের সাথে এই ব্যাপারগুলো নিতে বাধ্য হলো। এরই প্রেক্ষিতে মার্কিন সরকার থেকে শুরু করে বিভিন্ন উন্নত বিশ্বের (বিশেষ করে পশ্চিমা সরকারী প্রকাশিত নথি-পত্রে) সরকারী/বেসরকারী রিপোর্টে র্যাব এর নিন্দা লক্ষ্য করা যায়।
সাম্প্রতিক সময়ে আওয়ামী শাসন-ব্যবস্থা ও বাংলাদেশে গণতন্ত্রের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিনি সরকারের কঠোর ভূমিকা সাধারণ মানুষের মাঝে নতুন আশার সঞ্চার করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিশেষ করে র্যাব-কে নিয়ে মার্কিন সরকারের নিষেধাজ্ঞামূলক পদক্ষেপ আওয়ামী সরকারের জন্যে একটি বিশাল ধাক্কা এবং আওয়ামী সরকারের আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তিতে কুঠারাঘাতের শামিল। এই ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে দু-দুটো বিতর্কিত এবং প্রশ্নসাপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন এবং সে-নির্বাচনগুলোতে নিরঙ্কুশ বিজয় আওয়মী সরকারের রাজনৈতিক ও আইনী মূল্যবোধ নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে তীব্র সমালোচনার সুযোগ করে দিয়েছে। এটি অনস্বীকার্য যে মার্কিন সরকার এবং মার্কিন সরকারের মিত্রদের র্যাব-এর ব্যাপারে অবস্থান আওয়ামী সরকারের নির্বাচন আয়োজন ও বিজয়ের যে কৌশল তা পরবর্তী নির্বাচনে কায়েম করার ক্ষেত্রে বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।
এমাতাবস্থায়, বিএনপি ও অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো বাংলাদেশে প্রকৃত গণতন্ত্র ফেরত আসবার একটা সম্ভাবনা দেখতে পাচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যেও কিছুটা আশার সঞ্চার হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ এবং মার্কিন-ভারত সম্পর্ক অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করবে বলে ধরে নেয়া যায়।
৪ এপ্রিল ২০২২ এ বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তি হয়। তবে বার্ষিকী ঘিরে আসল ধুমধাম ছিল দেশগুলির মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ভবিষ্যত নিয়ে। ডিসেম্বর ২০২১ এ মার্কিন সরকারের সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী ইউনিট, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র্যাব) বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। র্যাব বিশ্বাসযোগ্যভাবে জড়িত বিচারবহির্ভূত হত্যা, নির্যাতন এবং জোরপূর্বক গুমের ক্ষেত্রে। কিন্তু এখন এটি পরিষ্কার যে কাউন্সিলর একরাম হত্যাকান্ড এক্ষেত্রে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
বিবিসি সূত্রে জানা যায় বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার ডি হাস বলেছেন, র্যাবের উপর থেকে যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হলে মানবাধিকার রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সংস্কার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এ দুটো বিষয় নিশ্চিত হলে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের জন্য আবেদন করা যাবে। ঢাকার বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কর্মরত কূটনীতিক সংবাদদাতাদের সংগঠন ডিক্যাব আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মঙ্গলবার এসব কথা বলেন মার্কিন রাষ্ট্রদূত মি. হাস।
“প্রেসিডেন্ট বাইডেন এটা পরিষ্কার করেছেন যে মানবাধিকার এবং মানবাধিকার রক্ষা হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতির কেন্দ্রবিন্দু,” বলেন মি. হাস। “র্যাব এবং তার কিছু কর্মকর্তার উপর আমরা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছি, এটা তার ফলাফল।”
র্যাব এবং তার কিছু কর্মকর্তার উপর আমেরিকা যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেটি প্রত্যাহার করার জন্য বাংলাদেশ সরকার দেন-দরবার করছে।
এই নিষেধাজ্ঞার জন্য ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের কোন কোন নেতা বিরোধী রাজনৈতিক দল বিএনপিকে দোষারোপ করে বক্তব্য দিয়েছে। মার্কিন রাষ্ট্রদূত বলেন, র্যাবের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে এবং ভবিষ্যতে যাতে এ ধরণের মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা না ঘটে সেজন্য সংস্কার নিশ্চিত করতে হবে। তিনি বলেন, এটা এমন কোন বিষয় নয় যে তালিকা ধরে কাজ করতে হবে। এ দুটি মৌলিক বিষয় নিশ্চিত করতে হবে।
২০২১ এর ডিসেম্বর মাসে ‘গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ছয়জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র।এতে বলা হয়, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবসের দিনে মার্কিন অর্থ দফতরের ফরেন অ্যাসেটস কনট্রোল অফিস (ওএফএসি) বিভিন্ন দেশের মোট ১০টি প্রতিষ্ঠান ও ১৫ জন ব্যক্তির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে – যারা মানবাধিকার লংঘন এবং নিপীড়নের সাথে সংশ্লিষ্ট।বিজ্ঞপ্তিটিতে বলা হয়, বাংলাদেশের বেসরকারি সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে যে র্যাব এবং অন্যান্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থা ২০০৯ সাল থেকে প্রায় ৬০০টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, ৬০০-রও বেশি লোকের অদৃশ্য হয়ে যাওয়া, এবং নির্যাতনের জন্য দায়ী।
কিছু রিপোর্টে আভাস পাওয়া যায় যে এসব ঘটনায় বিরোধীদলীয় সদস্য,সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মীদের টার্গেট করা হয়েছে – বলা হয় বিজ্ঞপ্তিতে।
এতে ‘গুরুতর মানবাধিকার লংঘনমূলক কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত থাকার’ অভিযোগে বাংলাদেশের বিশেষ পুলিশ র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) এবং এর ৬ জন কর্মকর্তার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করার কথা বলা হয়। এতে বলা হয়, “বাংলাদেশে মাদকবিরোধী অভিযানের সময় র্যাবের বিরুদ্ধে গুরুতর মানবাধিকার লংঘনের ব্যাপক অভিযোগ – আইনের শাসন, মানবাধিকার, মৌলিক স্বাধীনতা, ও বাংলাদেশের জনগণের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে হেয় করার মাধ্যমে – মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা স্বার্থকে হুমকির মুখে ফেলছে।”
পুলিশের এলিট ফোর্স র্যাব ও এর কর্মকর্তাদের উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেবার ইস্যুটিকে বাংলাদেশের উপর আমেরিকার একটি ‘চাপ সৃষ্টি’র কৌশল হিসেবে দেখেন একজন বিশ্লেষক। এর পেছনে চীন ও রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের ভাল সম্পর্ক, কোয়াড নামের এক মার্কিন নেতৃত্বাধীন জোটে বাংলাদেশের যোগ না দেয়া – এমন নানা কারণে আমেরিকার দৃষ্টিভঙ্গি বদলের একটি যোগসাজশ রয়েছে বলে মনে করেন যুক্তরাষ্ট্রে পাবলিক ইউনিভার্সিটি সিস্টেমের স্কুল অফ সিকিউরিটি এন্ড গ্লোবাল স্টাডিজের অধ্যাপক সায়ীদ ইফতেখার আহমেদ। ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনমূলক কাজে জড়িত থাকার’ অভিযোগে র্যাব ও এর ছয়জন বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র যে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তার ফলে বাংলাদেশের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে কি ধরনের প্রভাব পড়তে পারে অনেকেই সেই প্রশ্ন তুলছেন। যদিও বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের বক্তব্য, সম্পর্কে প্রভাব পড়বে কি না, সেটা “ডিপেন্ডস অন ইউএসএ”, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভর করে। কিন্তু প্রফেসর আহমেদ মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের মাধ্যমে ইতিমধ্যেই সম্পর্কে প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতি যদি আগামীতে চীন ও রাশিয়ার দিকে আরও ঝুঁকে পড়ে তাহলে “ভবিষ্যতে আরও কিছু নিষেধাজ্ঞার” মুখোমুখি হওয়ার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না প্রফেসর আহমেদ। তিনি বলেন, “পুরো বিষয়টি নির্ভর করবে আগামীতে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও পররাষ্ট্রনীতির কার্যক্রমের উপর”।
প্রথম আলোর বরাতে জানা যায় খুব সম্প্রতি বিচারবহির্ভূত হত্যা আর গুমের অভিযোগে এবার র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাছে চিঠি লিখেছেন ইউরোপীয় পার্লামেন্টের সদস্য ইভান স্টেফানেক। কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, স্লোভাকিয়ার ইউরোপীয় পার্লামেন্ট সদস্য ইভান স্টেফানেক ২০ জানুয়ারি বাংলাদেশ প্রসঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের পররাষ্ট্র ও নিরাপত্তা নীতিমালাবিষয়ক জ্যেষ্ঠ প্রতিনিধি এবং ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জোসেপ বোরেলের কাছে একটি চিঠি লিখেন। ওই চিঠিতে তিনি র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার প্রসঙ্গটি উল্লেখ করেছেন।
বাংলাদেশ সরকার-এর অবস্থান এখন প্রধানতঃ আমেরিকা বিরোধী ও রাশিয়াপন্থী। এই অবস্থান এর পেছনে যে র্যাব-এর নিষেধাজ্ঞার ভূমিকা রয়েছে, তার আঁচ পাওয়া যায় সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যে –
৭ জুলাই ২০২২ এ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত আটতলা অফিস ভবন উদ্বোধন এবং ‘বঙ্গবন্ধু কূটনৈতিক উৎকর্ষ পদক’ প্রদান অনুষ্ঠানে (ভার্চ্যুয়াল) প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নবনির্মিত ভবনের হলরুমে আয়োজিত অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে অংশ নেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই প্রভাবটা শুধু বাংলাদেশ না, এটা আমি মনে করি আমেরিকা, ইউরোপ, ইংল্যান্ড থেকে শুরু করে সারা বিশ্বব্যাপী এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। মানুষ কিন্তু কষ্ট ভোগ করছে। এটা আসলে সবার, উন্নত দেশগুলোকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা উচিত। আমেরিকার এটা বিবেচনা করা উচিত। তারা যে স্যাংশন দিচ্ছে তাতে তাদের দেশের লোকও কষ্ট পাচ্ছে। সেদিকেও তাদের দৃষ্টি দেওয়া উচিত বলে আমি মনে করি। ’ রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে কেন্দ্র করে রাশিয়ার ওপর আমেরিকার স্যাংশনের সমালোচনা করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এই স্যাংশন যাদের বিরুদ্ধে দিচ্ছেন তাদেরকে আপনারা ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাচ্ছেন। কিন্তু আসলে কতটুকু তারা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? তার চেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সাধারণ মানুষ হচ্ছে সব দেশে। উন্নত দেশ, উন্নয়নশীল দেশ সব দেশের মানুষই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। নিম্নআয়ের দেশ সব দেশেই কিন্তু কষ্ট পাচ্ছে। করোনা মহামারি থেকে কেবল আমরা একটু উদ্ধার হচ্ছিলাম। তখনই এই যুদ্ধ আর স্যাংশন। যেটা সত্যিই আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জও মোকাবিলা করতে হবে। ’
স্পষ্টতঃই ভারত ও রুশ সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা ধারণ করছে আওয়ামী সরকার বর্তমানে। তা না হলে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের সবচেয়ে বড় ক্রেতা মার্কিন রাষ্ট্রের র্যাব-নিষেধাজ্ঞা এভাবে অমান্য করা সম্ভব হতো না। কিন্তু সরকারের এই হিসেব ভুল বলে আমরা মনে করি। আমরা মনে করি এটা একটা মোক্ষম সুযোগ ছিল র্যাবকে সংকুচিত করে দেয়ার, বিলুপ্ত করবার। কিন্তু র্যাব-এর বিতর্কিত সমস্ত কাজের সুফলভোগী (?) সরকার, কারণ তাদের মানবাধিকারবিরোধী কার্যক্রম সরকারকে ক্ষমতায় থাকতে সাহায্য করেছে, এবং বিরোধী দলগুলোকে দূর্বল করেছে। সেক্ষেত্রে র্যাবকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টাকে স্বার্থসংশ্লিষ্ট ছাড়া অন্য কোনোভাবে দেখবার সুযোগ নেই। এখন মূল কথা হলো, এই ঘটনাগুলোতে, ২০২৩ সালের নির্বাচনের সমীকরণে কোনো পরিবর্তন আসবে কি? যতদিন নির্বাচন আওয়ামী সরকারের অধীনে হবে, ততদিন আসলে সমীকরণ একই থাকবে। মার্কিন সরকার যদি তাদের নিষেধাজ্ঞায় ভারতকে অন্ততঃ সাথে না পায়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের সম্ভাবনা খুবই ক্ষীণ।
কিন্তু এখানে বিশেষভাবে যে বিষয়টি লক্ষণীয় তা হলো র্যাব এর যে পৃষ্ঠপোষকতা আওয়ামী সরকার করে চলেছে তা-র আদৌ কোনো সুবিবেচনাপ্রসূত ব্যাখ্যা নেই। কেননা কোনো আইন প্রয়োগকারী সংস্থার বিরূদ্ধে যদি আলামত সহকারে মারাত্মক অপরাধ সংগঠনের অভিযোগ থাকে, তাহলে সে সংগঠন বা সংস্থাকে আইনের মুখোমুখি করে ভেঙ্গে দেয়া বা যথাযথ শাস্তি দেয়াটাই কাম্য এবং এতে আওয়ামী সরকারের রাজনৈতিক ক্যাপিটাল অতো বেশি খরচ হয়না। অথচ আওয়ামী সরকার যেভাবে র্যাব-এর যাবতীয় অপরাধ ঢাকার জন্যে তৎপর, তা-তে একটি উপসংহার-ই প্রযোজ্য এবং তা হলো – র্যাব দ্বারা কৃত সমস্ত অপরাধ এর পেছনের সিদ্ধান্ত এসেছে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক হাতিয়ার হিশেবে। এক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের দ্বারা র্যাব এর যে ব্যাবহার, তা-কে শেখ মুজিবুর রহমানের কুখ্যাত রক্ষী বাহিনীর সমগোত্রীয় বলা যায় বলে অনেকেই ভাবছেন। রক্ষী বাহিনী যেমন শেখ মুজিবের একনায়কতান্ত্রিক বাকশালী মানসিকতার পেশীবহুল প্রতিভূ ছিল, তাঁর-ই কন্যা বর্তমান প্রধানমন্ত্রীও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে র্যাবকে তার নিজের রক্ষী বাহিনী বানিয়েছেন বলে অভিমত সুধী মহলের। মুজিবীয় বাকশালী শক্তির বহিঃপ্রকাশ ছিলো রক্ষী বাহিনী, এবং তাঁর পতনের সূচনা এবং ধরণ উদঘাটন করতে গিয়ে অনেকেই রক্ষী বাহিনী গঠনকেই দায়ী করে থাকেন। এমনটিই কী হবে শেখ হাসিনার-ও? র্যাব-ই কী ডেকে আনবে তার পতন?
আমরা আমাদের সুপ্রিয় পাঠকদের আহবান করেছি আমাদের জানাতে র্যাব-এর বিষয়ে মার্কিনি সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে তারা কী ভাবছেন এবং বাংলাদেশের প্রকৃত গণতান্ত্রিক রাজনীতির চর্চা আন্তর্জাতিক মহলের ওপরে কতটুকু নির্ভরশীল বলে তারা মনে করেন। এই ব্যাপারে কিছু মন্তব্য বাছাঁই করে আমরা এই প্রতিবেদনের সাথে জুড়ে দিলাম এবং যাদের মন্তব্য ছাঁপাতে পারিনি, তাদের মনক্ষুণ্ণ না হওয়ার অনুরোধ রইলো। (২৩ জুলাই ২০২২ এ সঠিক সময়সীমার ভেতরে মন্তব্য না পাঁঠাতে পারার কারণে যাদের মন্তব্য আমরা তখন ছাঁপতে পারিনি, তাদের মধ্য থেকে নির্বাচিত মন্তব্য অন্তর্ভুক্ত করা হলো)
নির্বাচিত পাঠক মন্তব্যঃ
মোঃ আব্দুল মুমিন (২৪ / জগন্নাথপুর, সুনামগঞ্জ, সিলেট) – র্যাব সংক্রান্ত ব্যাপারে আপনাদের পর্যবেক্ষণ আমার সাথে মিলে যায়। র্যাব-কে সরকারী পুলিশি সন্ত্রাসী-বাহিনী বলাটা বোধকরি অত্যুক্তি হবে না। বাংলাদেশে র্যাব যে পরিমাণ অপরাধ করেছে, চিহ্নিত অপরাধীরাও ততটুকু করেছে বলে জানা নেই। যেকোনো সন্ত্রাসীর দ্বারা আক্রান্ত হলে মানুষ যেমন আতঙ্কিত হয়, র্যাব এর মুখোমুখি হলেও তা-ই। এতে বোঝাই যায় বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের কাছে র্যাব-এর অবস্থান কোথায়। কিন্তু র্যাব-কে ছাঁড়া এইসব অবৈধ সরকার অচল যেকারণে মার্কিনি বিরোধিতা স্বত্ত্বেও র্যাব-এর পৃষ্ঠপোষকতা জারি রেখেছে। আমি নিজে এদের দ্বারা ভোগান্তির শিকার। আমার নামে যে মিথ্যে মামলার বরার দিয়ে র্যাব আমাদের বাসায় হানা দিয়েছে, চাঁদা চেয়েছে, তা তো এমনি এমনি হয়নি। মজ্জাগত দূর্নীতি থেকে হয়েছে। আমার এই মন্তব্যে হয়তো আমি বিপদগ্রস্ত হবো আরো, কিন্তু মুখ না খুললে সারাজীবন এইসব অরাজকতা সয়ে যেতে হবে। শেখ মুজিব বাংলাদেশ কী নিজের ত্রাস কায়েম করবার জন্যে চেয়েছিলেন? রক্ষী বাহিনী গঠন, বাকশাল – এগুলো কোনো সুস্থ প্রকৃতির মানুষের কাজ হতে পারে? শেখ হাসিনাও র্যাব-এর মাধ্যমে রক্ষী বাহিনীর অরাজকতা ও বাকশালী নৈরাজ্য তৈরি করছেন।
আশরাফ হোসেন – র্যাবকে নিষিদ্ধ করায় আমিও অনেকের মতো আশাবাদী হয়েছিলাম এই ভেবে যে সরকারের কিছুটা হলেও শুভবুদ্ধির উদয় হবে। কিন্তু গত কয়েক মাসে সরকার যেভাবে ফিরিস্তি দিয়ে যাচ্ছে র্যাব এর কর্মকাণ্ডকে সমর্থন করে, তাতে সে আশার যে গুঁড়ে বালি, বলাই বাহুল্য। র্যাব এক সময়ে হয়তো ভাল উদ্দেশ্যেই তৈরি করা হয়েছিলো, কিন্তু গত এক যুগ ধরে র্যাব এর নেট ইম্প্রেশন খুবই জঘন্য। মানুষ চোর-ডাকাতকে না যতটা ভয় করে, র্যাবকে তার চেয়ে বেশি ভয় করে। চোর ডাকাত না হয় কিছু একটা নিয়ে যাবে, কিন্তু র্যাব এর হাতে পড়া মানে একজন সাধারণ মানুষের নিশ্চিত জীবন তছনছ। আর রাজনৈতিক ব্যাপারে হলে তো কথা-ই নেই। র্যাব রাজনৈতিক গুম হত্যা, এক্সট্রা জুডিশিয়াল কিলিং এর এক্সপার্ট বাহিনী। সুতরাং আমি অবাক হইনি মার্কিন সরকারের অবস্থানে। কিন্তু আওয়ামী নির্লজ্জতায় ভয়ঙ্কর অবাক হয়েছি ও আহত হয়েছি। তবে তা কোনো নতুন অনুভূতি নয়, এই যা বাঁচোয়া। ২০২৩ সালের নির্বাচন নিয়ে আশাবাদী হতে পারছিনা। আবারো সমূহ দূর্নীতি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। শেখ মুজিবের কিছু ভাল গুণ হয়তো ছিল, কিন্তু শেখ হাসিনা যেভাবে র্যাবকে খুন খারাবির জন্যে ব্যবহার করছে, তা-তে শেখ মুজিব এবং তার রক্ষী বাহিনী এবং শেখ হাসিনা ও তার র্যাবকে ধিক্কার জানানো ছাঁড়া উপায় নেই কোনো। শেখ পরিবার বিশেষ করে শেখ মুজিবের বাকশালী নীচুতা বাংলাদেশকে ডুবিয়ে ছাঁড়বে।
ফারজানা পারভীন (৩৬ / কোতোয়ালী, চট্টগ্রাম) – আপনাদের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে মন্তব্য আহবান দেখে নিজেকে ধরে রাখতে পারলাম না বিষয়বস্তুর সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকার কারণে। আমি বেশ কিছুদিন ধরে যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশে যাতায়াতরত আছি আমার এক আত্মীয়ের চিকিৎসা সংক্রান্ত কারণে। আমার সর্বশেষ বাংলাদেশ ভ্রমণে আমি র্যাব দ্বারা আক্রান্ত হই। ডাকাত, চোর, বাটপার, সন্ত্রাসীর মুখোমুখি হলে যেমন ত্রাসের সৃষ্টি হয় মানুষের মনে, র্যাব এর সামনে পড়ে আমার ঠিক তেমন লেগেছে। একটি এনজিওর সাথে সংশ্লিষ্টতার জের ধরে আমাকে হঠাত একদিন এসে জিজ্ঞাসাবাদ। বলা নেই কওয়া নেই, টাকা চেয়ে বসলো। কোনোমতে কিছু টাকা দিয়ে পালিয়ে এসেছি এখানে। র্যাব সন্ত্রাসীর চেয়েও জঘন্য। এবং এই সরকারের অধীনে এরা ভাড়াটে খুনী ছাড়া কিছুই নয়। ইলিয়াস আলী থেকে শুরু করে অনেক রাজনৈতিক ও ব্যাবসায়িক গুম হত্যা, অপহরণ, অত্যাচার – এই সবই এই র্যাব এর কারসাজি। আমার মনে হয় মার্কিন অবস্থান যদি শক্ত হয়, আওয়ামী দোসরেরা পালিয়ে বেড়ানোর জায়গা পাবেনা। আশা করছি র্যাব-কে আওয়ামী লীগ নিজের স্বার্থেই বিলুপ্ত করবে। কিন্তু আওয়ামী লীগকে বিলুপ্ত করবে কে? শেখ মুজিবের রক্ষী বাহিনী যে তার হীনমন্যতা তুলে ধরেছিল, সেটা শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিকতা-ভিত্তিক র্যাব-বিজিবি-নির্ভর স্বৈরাচার দেখলে বোঝা যায়। শেখ মুজিব এর যাবতীয় কৃতিত্ব বাংলাদেশ স্বাধীন এর ব্যাপারে ম্লান হয়ে যায় তার বাকশালী ও রক্ষী বাহিনী-মূলক সিদ্ধান্তের কারণে। তিনি ৭৫ এ একজন খলনায়ক ছিলেন। যেমন হাসিনা আমাদের সময়ের খলনায়িকা।
মোঃ মইন উদ্দীন চৌধুরী (৩৯ / বায়েজীদ, চট্টগ্রাম) – আমি কখনো এমনভাবে হতাশ হয়ে পড়বো বাংলাদেশকে নিয়ে, সেটা কল্পনাতীত ছিল। কিন্তু প্রবাসের অভিজ্ঞতা এই বলে যে বাংলাদেশের অবস্থা নিম্নগামী এবং এটা বিভিন্নভাবেই। র্যাবকে আজীবন ভয় পেয়ে এসেছি। বিএনপি সরকারের এক কুখ্যাত সৃষ্টি এই র্যাব বিএনপির-ই কত রাজনীতিবিদের কাল হয়েছে তার ইয়ত্তা নেই। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম থেকে শুরু করে আরো অনেক নেতা-কর্মীর গুমের পিছনে মানুষ সরাসরি র্যাবকে দায়ী করে। র্যাব আতঙ্ক জাগায় সাধারণ মানুষের মনে। আসামী, দুর্বৃত্তদের মনে নয়। কেন? কারণ র্যাব একটি চাদাঁবাজ প্রকৃতির আধা সামরিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। র্যাব এর সাথে ছাত্রলীগ এর ধর্ষক বাহিনীর পার্থক্য কি? মনে হয়না খুব বেশি পার্থক্য দেখানো যাবে। আমি সুতীব্র হতাশা নিয়ে লক্ষ্য করছি বাংলাদেশ ২০২৩ এর সালের নির্বাচনেও ভুক্তভোগী হবে আওয়ামী চুরি-রাহাজানির এবং যতই আন্তর্জাতিক মহল থেকে ধিক্কার আসুক র্যাব বা অন্যান্য ব্যাপারে, আওয়ামী সরকারের এতে কোনো বোধোদয় হবে না। রক্তাক্ত বিপ্লব ছাড়া পরিবর্তন সম্ভব না। কিন্তু সেটিও যেন না করা যায়, সে ব্যবস্থাও করে রেখেছে এই সরকার বিরোধী দলগুলোকে নপুংসুক করে রেখে। সবকজন নেতা-কর্মীর বিরূদ্ধে মামলা, মোকদ্দমা, উদ্দেশ্যপ্রোণোদিত। মার্কিন ও পশ্চিমা বিশ্বের উপরো পুরোপুরি ভরসা রাখা যায়না। একমাত্র ভারত ও রাশিয়ার অক্ষশক্তি যদি ব্যবস্থা নেয়, তাহলেই কিছু সম্ভব। শেখ মুজিব এর আমল আমার জন্মের আগে। সে-ব্যাপারে মন্তব্য করাটা দুষ্কর। কিন্তু শেখ হাসিনার একনায়িকাতান্ত্রিক যে মনোভাব, যেকোনো ভাবে ক্ষমতা কুক্ষিগত করা, গদি আকঁড়ে ধরে থাকা র্যাব-বিজিবি কে খুনী সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করে, এগুলো বলে দেয় যে আমাদের পূর্ব প্রজন্ম কেন শেখ মুজিবের মৃত্যুতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল।
নুঝাত রহমান (১৯ / গোলাপগঞ্জ, সিলেট) – যে বিষয়ে আমার অভিজ্ঞতা আছে তা হলো আওয়ামী লীগ কর্তৃক বিভিন্ন অন্যায়, হয়রানি বা হেনস্থার শিকার হওয়ার। ছাত্রলীগের ছেলেদের হাতে ইভ-টিজিং-এর শিকার হয়েছি অনেকবার, হয়েছি নিরুপায় লাঞ্ছিত। আমি ছাত্রলীগকে যতটা ঘৃণা বা অপছন্দ করি, র্যাবকে তারচেয়েও বেশি ভয় পাই। কেন? কারণ র্যাবএর হাতে রয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আইনী ঢাল, যেটার যথেচ্ছ ব্যবহার করে গুম হত্যা, অপহরণ, চাদাঁবাজি – কী করেনি তারা? র্যাবকে অবিলম্বে নিষিদ্ধ করা উচিৎ। একই পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ ছাত্রলীগের ক্ষেত্রেও। ছাত্রলীগ কী পরিমাণ নারীর সম্মানহানি করেছে, করেছে ধর্ষণ, তার কোনো ইয়ত্তা নেই। অথচ র্যাব ও ছাত্রলীগ রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় তাদের নষ্টামি সমানে চালিয়ে যাচ্ছে যাতে মাথা হেঁট হয়ে যায় বাংলাদেশী হিসেবে। তবে আওয়ামী লীগ সরকারের যবনিকাপাত না হলে এই সমস্ত লজ্জাজনক অধ্যায় ঘটতেই থাকবে। র্যাব শেষ হয়ে গেলেও র্যাব-এর মতো আরো এক কিলিং মেশিন তৈরি করা হবে। আমার খুবই কষ্ট লাগে এই দেশটার জন্যে। মুক্তিযোদ্ধারা কী কারণে প্রাণ অকাতরে বিলিয়ে দিলেন এই দেশের জন্যে, কে জানে। শেখ মুজিব যে বাংলাদেশের ইতিহাসে দিন শেষে একজন বিপদজনক চরিত্র হয়ে থাকবেন, সেটা শেখ হাসিনার র্যাব-কে সন্ত্রাসী বাহিনী হিসেবে ব্যবহার করা আর শেখ সাহেব এর নিজস্ব গুন্ডা রক্ষী বাহিনীর কার্যক্রম ঐতিহাসিক তুলনার মাধ্যমে দেখলেই বোঝা যায়।
মোঃ জাকির হোসাইন (৩০ / শরীয়তপুর, বাংলাদেশ) – আমার বক্তব্য এই ব্যাপারে সংক্ষিপ্ত। র্যাব একটি বাকশালী অন্যায় এর প্রতীক। যদিও র্যাব এর জন্ম বিএনপির হাতে, র্যাব এর দুর্নীতিকরণ এর পুরোটাই আওয়ামী দুঃশাসনামলে। আমি একথাও বলতে পারি যে আওয়ামী যত হত্যা, খুন, খারাবী, অপহরণ আছে যা রাজনৈতিক, তার পুরোটারই এক্সিকিউশান করেছে এই র্যাব। যে কারণে র্যাব-এর চরিত্রহীনতা আওয়ামী সরকারর জন্যে গাত্রদাহের কারণ। কেননা র্যাব এর ব্ল্যাকলিস্টিং আওয়ামী লীগের, বিশেষ করে শেখ হাসিনার ও শেখ পরিবারের নিজস্ব চারিত্রিক দূর্বলতাকেই প্রকাশ করে। শেখ মুজিব নিজেও এই চারিত্রিক ত্রুটির শিকার যার ফসল বাকশাল, রক্ষী বাহিনী। মার্কিন সরকার যদি এক্ষেত্রে ভারত সরকারের ভেড়াতে পারে, তাহলে আওয়ামী লীগের দিন শেষ। রাহাজানিমূলক নির্বাচন করে আর পার পাবে না তারা ধরেই নেয়া যায়।
এম ডি আরমান হোসেন, (৩২, ঢাকা) –র্যাবের উপর মার্কিন যে নিষেধাজ্ঞা সেটি যথার্থ হয়েছে এবং আমি মনে করি এর মধ্য দিয়ে পশ্মিমা দেশগুলো একটি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দিনের পর দিন এই বাকশালী আওয়ামীলীগ সরকারের গুম-খুন আমাদের অসুস্থ করে দিয়েছে এবং আমরা মনে করছি আমরা এক ভয়াবহ সময়ে বাস করছি। শেখ হাসিনাকে নির্মূল করতে হবে একই সাথে র্যাব-পুলিশ-সেনাবাহিনী এই সমস্ত বাহিনীতেও ব্যাপক রদ-বদল করতে হবে। এইসকল অসাধ্য অফিসারদের দিয়ে বাংলাদেশ চলতে পারেনা। মুজিবের যেই দশা হয়েছে তার মেয়েরও একই দশা হওয়া উচিৎ বলে আমি মনে করি।
জোবায়ের হোসেন – শেখ পরিবারের বাংলাদেশকে নিজস্ব সম্পত্তি ভাববার প্রবণতা নস্যাত করে দিতে হবে। এজন্যে এদের যেকোনো ভাবে গদি-ছাঁড়া করতে হবে। এটি রাজনৈতিকভাবে না হলে, বলপ্রয়োগ করে হলেও করতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের মাধ্যমে অর্জিত। এরশাদের স্বৈরশাসনের অবসান-ও রক্তাত আন্দোলনের ফসল। ৯৬’-এর আন্দোলন-ও উদাহরণ হিসেবে দেখানো যায়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করবার জন্যে মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী আওয়ামী লীগকে যদি বাংলাদেশকে বাঁচানোর জন্যে নিকেশ করে দিতে হয়, সে-ই সই। আর যে লোক ঐ মামলা দিলেন, তাকে রাজাকার-দের মতো করে ট্রিট করা হবে। সাধু সাবধান!”
ইউসুফ আহমেদ (৩৪, সুনামগঞ্জ, সিলেট) – র্যাব একটি সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজমূলক আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। এই ব্যাপারে দ্বিমত করবে এমন মানুষ মনে হয়ে দেশে বিদেশে খুব কম। মার্কিন সরকার এত বছর ধরে র্যাব এর কুকীর্তি সম্পর্কে জানতো না, শুধু সাম্প্রতিক সময়ে জেনেছে, এবং জানতে পেরে বিবেকের তাড়নায় র্যাবকে ব্ল্যাকলিস্ট করেছে, সমীকরণ আমার এত সহজ মনে হয়না। আমার ধারণা আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ভারত ও আমেরিকা। কিন্তু রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণ নিয়ে বাংলাদেশ এবং ভারতের যে ভূমিকা, তা মার্কিন গাত্রদাহের কারণ হয়েছে বলে বোঝা যায়। যে কারণে, মার্কিন সরকারের প্রতিশোধমূলক চাল হচ্ছে র্যাবকে নিয়ে ও গণতন্ত্রের অভাব নিয়ে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া। দুটো ব্যাপার-ই যথার্থ। বাংলাদেশে একদল কেন্দ্রিক গণতন্ত্র জারি আছে। কিন্তু এই ব্যাপারে অবস্থান নিয়ে মার্কিন সরকার বিপাকে ফেলতে চাচ্ছে আসলে ভারতকে। এখন আওয়ামী লীগের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ভারত। কতদিন এটি চলে সেটাই দেখার বিষয়। ভারত মার্কিন সম্পর্কের উন্নতি ঘটলে এবং মার্কিন অবস্থান র্যাব বিষয়ে অপরিবর্তিত থাকলে আওয়ামী লীগের শনির দশা হবে ২০২৩ এর নির্বাচনে। যা তাদের প্রাপ্য। আওয়ামী লীগ বাকশালী রাজনীতি কায়েম করেছে। শেখ মুজিবের একনায়কতন্ত্র তার কন্যা এসে একনায়িকাতন্ত্রে পরিণত করেছেন। রক্ষী বাহিনী ছিল তার পোষা সন্ত্রাসী বাহিনী, র্যাব-ও তা-ই। র্যাব সন্ত্রাসী হয়ে সে কায়েমকৃত রাজত্বে ভৃত্যসুলভ ভূমিকা পালন করেছে। আওয়ামী মূল্যবোধ কতটুকু দেওলিয়া হলে ব্ল্যাকলিস্টেট একটা বাহিনীকে বাচাঁনোর জন্যে এমন কাঙ্গালের মতো আচরণ করে!! বিচিত্র এ সেলুক্যাস!
এম ডি তোফায়েল হোসেন – আওয়ামীলীগের ভাড়া খাটা খুনী হচ্ছে র্যাব। এই দলের যে ব্যাক্তিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তা কি মিথ্যে? না, মিথ্যা নয়। সবই সত্য। এই খুনে আওয়ামীলীগ আর খুনে র্যাবকে নির্মূল করাটাই এখন সময়ের দাবী। র্যাবের অফিসার তোফায়েল কিংবা বেনজীর তো মানুষকে গুম করতো, খুন করতো। এসব সব কিছুর-ই বিচার করতে হবে। গুম হবে একরাম এর মতো মানুষেরা। সামান্য বিবেক থাকলে শেখ হাসিনা নিজেই নিজেকে আইনের হাতে সোপার্দ করতো। কিন্তু তা হবে কেন? সেও হয়তো তার বাপ-এর মতো কোনো পরিণতির জন্যে অপেক্ষা করে বসে আছে। শেখ মুজিবের ভুলের মাশুল এখনো দিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
আব্দুল আদুদ (৫৩, সিলেট) – আমার নিজের কিছু ব্যক্তিগত অভিজ্ঞটা আছে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ক্ষমতার অপব্যবহারকে নিয়ে। সেগুলো নিয়ে খুব বেশি কিছু বলছিনা। কিন্তু এ-ব্যাপারে সন্দেহ নেই যে ক্ষমতা আকঁড়ে ধরে রাখার জন্যে শেখ হাসিনা যেমন র্যব-বিজিবি দিয়ে বাংলাদেশকে জিম্মি করে রেখেছে খুন-খারাবী করে, শেখ মুজিব-ও কিন্তু তা-ই করেছেন রক্ষী বাহিনী দিয়ে, বাকশাল দিয়ে। আমি জানিনা মার্কিন সরকারের এই হস্তঃক্ষেপ কোনো কাজে আসবে কিনা। খুব হতাশ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে।
এম ডি জিল্লুর রহমান- র্যাব প্রসঙ্গে মার্কিন সরকারের যে দৃঢ় অবস্থান, সেটা প্রশংসনীয়। কিন্তু এতে খুব বেশি কিছু হবে বলে মনে হয় না। আওয়ামী লীগের কিলিং মেশিন হলো র্যাব। রাজনৈতিক যত গুম হত্যা, অপহরণ, ক্রসফায়ার আছে, সব র্যাব করে দেয়। একারণেই র্যাব এত প্রশ্নবিদ্ধ। ২০২৩ সালের নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের যে অনঢ় অবস্থান এখনো, সেটা এটা নির্দেশ করছে যে ভারত-তোষণ তাদের টিকিয়ে রেখেছে। এবং ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতা যতদিন চলবে, সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন আশা করা বোকামী হবে এবং শেখ পরিবারের জুলুম চলতেই থাকবে ততদিন।
আমাদুর রাহমান চৌধুরী (৩৩, সিলেট) – আপনাদের সাহসিকতার বাহবা দেই। এই প্রসঙ্গগুলো তো এখন ব্রাত্য। বাংলাদেশে সবাই এখন আওয়ামী লীগার। চীন এর মতো অবস্থা। মার্কিন সরকারের এই ধরণের পদক্ষেপ সরকারের জন্যে লজ্জার বটে, কিন্তু লজ্জা থাকতে হবে তো! এই শেখ পরিবারের চরিত্রে এটি নেই। নাহলে শেখ মুজিব বাকশাল এবং রক্ষী বাহিনীর মতো উন্মাদনা ঘটায় না, শেখ হাসিনাও সেটা থেকে শিক্ষা না নিয়ে থাকেনা।
জনি চন্দ্র সাহা – শেখের কন্যা শেখের মতো পরিণতি চায়, এটা সুস্পষ্ট। বাংলাদেশের ইতিহাসে গণতন্ত্রকে ভুলন্ঠিত করবার অযোগ্যতা বাপ-মেয়ে দুজনেই সমানভাবে দেখিয়েছেন। রক্ষী বাহিনী আর র্যাব – আমি তো কোনো পার্থক্য দেখিনা। আমার মনে হয়না সুষ্ঠু কোনো নির্বাচন হওয়ার আশা আছে। এরা উতখাত না হলে যাবেনা।
রাবেয়া আখতার (৩৬, চাঁদপুর) – এমন বিষয়ে নিজের দেশকে নিয়ে মন্তব্য করছি। ভীষণ লজ্জার ব্যাপার। আন্তর্জাতিক মহলের আরো সোচ্চার হওয়া উচিৎ কেননা বাংলাদেশের সবচেইয়ে বড় সন্ত্রাসী হলো আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো, বিশেষ করে র্যাব। র্যাব এর হাতে পড়া আর জীবন নষ্ট হয়ে যাওয়া একই ব্যাপার। আমি কল্পনাও করতে পারিনা শেখ মুজিবের কুখ্যাত রক্ষী বাহিনী কেমন অত্যাচার করেছিলো বাংলার মানুষের ওপর কিন্তু শেখ হাসিনার বিকৃতাচরণ দেখে কিছুটা আঁচ পাওয়া যায়।
রেদোয়ানুর রহমান – ধিক্কার শেখ পরিবারকে। ধিক্কার শেখ হাসিনাকে! ধিক্কার শেখ মুজিবকে! ধিক্কার তাদের স্বৈরতান্ত্রিক মানসিকতাকে! র্যাব-রক্ষী বাহিনীর ভেতর কোনো পার্থক্য নেই আসলে। মার্কিন সরকারের টনক অনেক আগে নড়া উচিৎ ছিলো।
বজলুল করিম (৪৬, মৌলভীবাজার) – আমার নিজস্ব তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে র্যাব-পুলিশ এদের নিয়ে। কিন্তু সেগুলোকে একপাশে রেখে কিছুটা অবজেক্টিভ হওয়ার চেষ্টা করছি। মার্কিন সরকারের এই নিষেধাজ্ঞার পরেও আওয়ামী সরকারের এই বেহায়াপনা আসলে সব প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেয়। র্যাব একটা খুনী চক্র যার প্রধান পৃষ্ঠপোষক শেখ হাসিনা যেমন তার পিতা ছিলেন রক্ষী বাহিনীর পুরোধা। গণতন্ত্রকে হত্যা করবার জন্যে শেখ মুজিব আর শেখ হাসিনার বেশি কিছু লাগে না আসলে।
ইমরুল কায়েস – র্যাব বিষয়ে আমার চিন্তাধারা আরো নেতিবাচক হয়েছে আগের তুলনায়। মার্কিন সরকারের আরো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া উচিৎ। শেখ মুজিব এবং শেখ হাসিনা এরা কেউ কখনো বাংলাদেশকে ভালবাসেনি। ক্ষমতাকে ভালবেসেছে। না হলে রক্ষী বাহিনী বা র্যাবকে পৃষ্ঠপোষকতা করতে পারতো না। খুনীকে পালন করা আর খুনী হওয়ার মধ্যে পার্থক্য নেই। দুজনেই সে হিসেবে খুনী।
সোহেলা আহসান চৌধুরী (৪১, ঢাকা) – র্যাব নিয়ে একজন নারীবাদী মানবাধিকার বিষয়ে সচেতন মানুষ হিশেবে বলতে পারি বাংলাদেশের মানুষ র্যাব নিয়ে যতটা না ভীত, চোর-ডাকাত নিয়েও ততটা না। মার্কিন সরকারের পদক্ষেপ প্রশংসনীয়, কিন্তু বিলম্বিত। শেখ হাসিনার অগণতান্ত্রিক আচরণ দেশকে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। আমি বুঝতে পারিনা শেখ পরিবারের কাছে আর কতো নিগৃহীত হবে বাংলাদেশ?
মোঃ রাজু আহমেদ ইমন (২৩, সিলেট) – আজ বাংলাদেশ এর যে অবস্থা, তার জন্যে শেখ পরিবার, বিশেষ করে শেখ মুজিব সরাসরি দায়ী। তার সাথে পলপট বা অন্য কোনো স্বৈরাচারের পার্থক্য কী? সে বাকস্বাধীনতা ক্ষুণ্ণ করেছে, নিজস্ব সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, শেখ হাসিনাও হুবহু বাপের পদাঙ্ক অনুসরণ করেছে র্যাব-কে দিয়ে আর বিরোধী দল বিহীন নির্বাচন আয়োজন করে। মার্কিন সরকারের এই ভূমিকা অনেক আগে নেয়া উচিৎ ছিলো। অনেক দেরী হয়ে গেছে। অনেক প্রাণ বাঁচানো যেত।
উম্মা কুলসুম নার্গিস বানু – জাতিসংঘের হস্তঃক্ষেপ দরকার। শেখ হাসিনাকে আন্তর্জাতিক ফৌজদারী আদালতে বিচার করা উচিৎ। শেখ মুজিব তার শাস্তি পেয়ে গেছে। কিন্তু যা ক্ষতি করার করে ফেলেছে।
আমীন আল আকবার (৩৩, ঢাকা) – শেখ পরিবার থেকে কী আশা করবেন? তারা গণতন্ত্র হত্যা করে অভ্যস্ত। শেখ মুজিব নামক তথাকথিত বঙ্গবন্ধুকে দেখুন। বাকশাল, রক্ষী বাহিনী, বিরোধী দল দমন, কি সে করেনি, যা বা যার সমগোত্রীয় কাজ শেখ হাসিনা করেনি? মার্কিন সরকার এই সামান্য পদক্ষেপে কোনো কাজ হবে না।
সমরুন নেসা (৭৫, সিলেট) – আমার পারিবারিক সহায় সম্পত্তি নিয়ে বেশ কিছু ঝামেলার মধ্যে পড়েছি এবং এই সমস্যাগুলো বিবাদমান। জমি-জমা সংক্রান্ত এইসব সমস্যা মোকাবিলা করতে গিয়ে আমি মুখোমুখি হয়েছি র্যার এর নৃশংসতার। আমার স্বয়-সম্পত্তি যারা হাতিয়ে নিতে চায়, তারা র্যাবকে নিযুক্ত করেছে ভাড়াঁটে গুন্ডার মতোএবং র্যাবকে দিয়ে বারবার হয়রানি করেছে আমাকে ও আমার জমি-জমার যারা দেখভাল করছে তাদের। আমি একজন অরাজনৈতিক মানুষ। কিন্তু নিজে যখন এইসব জুলুমের মুখোমুখি হই, তখন রাজনৈতিক হয়ে ওঠা ছাঁড়া উপায় থাকেনা। র্যাবকে যারা পেলে পুষে এমন সন্ত্রাসী বাহিনীতে পরিণত করেছে তাদের সবাইকে ধিক। মার্কিন সরকার ঠিকই করেছে এই জুলুমবাজ বাহিনীকে নিষিদ্ধ করে। সামান্য লজ্জা যদি এই শয়তান আওয়মী পাণ্ডাদের থাকতো, তাহলে তারা সসম্মানে পদত্যাগ করে এই র্যাবকে বিলুপ্ত করতো। কিন্তু এই হাসিনার বাংলাদেশে কী এটা সম্ভব? মনে হয়না। আমি মুজিবের শাসন দেখেছি। দেখেছি হাসিনার শাসন। এরা অপশাসক এবং স্বৈরচারী মনোভাবাপন্ন। বাংলাদেশকে নিজের সম্পত্তি ভাবার মানসিকতায় নিমজ্জিত। র্যাব আজকের রক্ষী বাহিনী। যথার্থ তুলনা। ২০২৩ এর নির্বাচনে আওয়ামী ভরাডুবি ঘটুক, র্যাব এর অত্যাচার শেষ হোক, এই আশাই এখন সম্বল।
মোহাম্মাদ শহীদুল ইসলাম জায়গীরদার (৩৭ / মোল্লার গাঁও, দক্ষিণ সুরমা, সিলেট) – আমি আগে লিখেছি আমার ছোট ভাই এর ব্যাপারে। আমার ছোট ভাই শিবিরের একজন মোটামুটি পরিচিত নেতা আমাদের এলাকায়। সে এরই মধ্যে হাজত খেটেছে অসংখ্যবার। মামলা রয়েছে বেশ কয়েকটা। আমাদের বাড়িতে সবচেয়ে আতঙ্কের সময় হলো যখন আমার ছোট ভাই বা আমার খোঁজে র্যাব হানা দেয়। র্যাবকে যতটুকু না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর একটা অংশ মনে হয়, তারচেয়ে বেশি মনে হয় সরকারী দলের একটা বর্বর কমান্ডো দল। তাদের চাদাঁবাজিরও শেষ নেই। সেটার জ্বলন্ত সাক্ষ্য আমরা। আমি মনে করিনা ২০২৩ সালের নির্বাচন খুব সহজ হবে আওয়ামী লীগ এর জন্যে। জামায়াত ও বিএনপিকে তারা পিঁষে ফেলেছে একেবারে কিন্তু মার্কিন সরকার র্যাবকে নিষিদ্ধ করে আওয়ামী সরকারের সামনের নির্বাচনে চুরি-ডাকাতি করবার রাস্তা কিছুটা হলেও রোধ করেছে বলে আশা করা যায়। এখন বাংলাদেশের সরকারের সামনে দুটো রাস্তা। হয় ভারত তোষণ নয়তো মার্কিন সমর্থন। ভারত তোষণে কতদূর লাভ আছে এই সরকারের সন্দেহ হয়। মোদী এমনিতেই মুসলমানদের দেখতে পারেনা। দিন শেষে বাংলাদেশ একটি মুসলিম দেশ এবং ভারত এই ব্যাপারটি পছন্দ করে না। জামায়াত এখনো সক্রিয়, এখনো তেজস্বী। একটু যদি নিরপেক্ষ নির্বাচন হয় মার্কিন সরকারের মদদে, তাহলে আওয়ামী দুঃশাসনের যবনিকাপাত হতে দেরী নেই খুব। কিন্তু আমার মনে হয় শেখ মুজিবের রক্ত যে কয়দিন বাংলাদেশ অপশাসনে ব্যস্ত, সে কয়দিন কিছু হবে না আসলে। শেখ মুজিবের অপরাধ ঢাকার মেশিন ছিল বাকশাল, ছিল রক্ষী বাহিনী, র্যাব-বিজিবিও সে ভূমিকা-ই পালন করে চলেছে শেখ হাসিনার জন্যে। কিন্তু শেষরক্ষা কী হবে?
শাকিরিন আক্তার নাহিন (২৩ / শাহপরান, সিলেট সদর, সিলেট) – আমি র্যাব এবং পুলিশ নিয়ে ভীষণ ভীত ও সন্ত্রস্ত। র্যাব মূলতঃ সন্ত্রাস এর জন্ম দেয় মানুষের মনে এবং আমি এর ব্যতিক্রম নই। র্যাব মূলতঃ খুনী ও গুমকারী সন্ত্রাসবাহিনী হিসেবে পরিচিত এবং ভারত সরকার যদি আওয়ামী সরকারকে অন্যায় সমর্থন দেয়া বন্ধ করে, তাহলে মার্কিন সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপ করা উচিৎ এই র্যাব-পৃষ্ঠপোষক সরকারের অবস্তানের জন্যে। র্যাব এর সাথে ছাত্রী-নির্যাতনকারী ছাত্রলীগের কোনো পার্থক্য নেয়। দুটো সংগঠনই ধর্ষণে বিশ্বাসী। যেকোনোভাবে, যেকোনোপ্রকারে। আর এই চলমান ধর্ষণের প্রধান বেনেফিশিয়ারী হলো আওয়ামী লীগ। কারণ তার ক্ষমতায় অবৈধ নির্বাচনের মাধ্যমে গা-জোয়ারি করে থেকে যাওয়াটা নির্ভর করে র্যাব ও ছাত্রলীগের মস্তানির ওপর। ২০২৩ সালের নির্বাচনের পটপরিবর্তনের জন্যে শুধু মার্কিন সরকারের র্যাব সংক্রান্ত অবস্থান যথেষ্ঠ নয়। কারণ এই সরকার লজ্জাহীন।
নুরুল ফারুক শাকের – বাংলাদেশ এখন এক অন্ধকার কারাগারের মত দেশ হয়ে গেছে। আমেরিকা যেই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে এটা সম্পূর্ণ সঠিক এবং সময় উপযোগী। আমি মনে করি র্যাবের সমস্ত অফিসারদের বিচারের কাঠ গড়ার দাঁড় করাতেই হবে। এই ছাড়া আর উপায় নেই। বিশেষ করে বেনজিরের ফাঁসি দিয়ে দিতে হবে।
নিজাম উদ্দীন দোদন – আমি আবারো বলছি আমেরিকার উচিৎ বাংলাদেশে আওয়ামী দুর্নীতির পুরো চিত্র তুলে ধরা আরো কিছু পর্বে। হাসিনা একজন খুনী, এই ব্যাপারে আমার কোনো সন্দেহ নেই। আওয়ামী সরকার অসংখ্য রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের জন্যে দায়ী। অরাজনৈতিক মৃত্যুর জন্যেও। হাজার হাজার মানুষেরমৃত্যু হাসিনা পরিবারের রক্তলিপ্সাকে নিশ্চিত করে। এমন অত্যাচার দিনের পর দিন করে যাবে, আর একটা কিছু বললে লিখলে আমরা রাষ্ট্রবিরোধী হয়ে গেলাম? হাসিনা আর শেখ পরিবার হলো সবচেয়ে বড় রাষ্ট্রদোহী পাষণ্ড।
জিশান তানভীর মোস্তফা – র্যাব এর এই নিষিদ্ধকরণ অনেক বিলম্বিত। এ ধরণের বাহিনী থাকাটা একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্যে লজ্জাজনক। কিন্তু সে লজ্জা কী শেখের মেয়ের আছে? সে আর তাঁর পরিবার ব্যস্ত কিভাবে বাংলাদেশের প্রতিটা জিনিসে তাদের নাম ঢুকিয়ে দেয়া যায়। র্যাব নিয়ে মার্কিন সরকারের যে অবস্থান, সেটা সামান্য আত্মসম্মান থাকলে যেকোনো সরকারের জন্যে গভীর লজ্জার ব্যাপার হতো! কিন্তু, এরা সব বেহায়া! দিনের পর দিন সার্বভৌমত্ব ও মার্কিন সরকারের বিভিন্ন ব্যার্থতার জিকির তুলে নিজেদের লজ্জা ঢাকার চেষ্টা করছে, অথচ মার্কিন সাহায্য ছাড়া অচল, বেহায়ার মতো চেয়ে থাকে কবে মার্কিন ওর্ডার আসবে, ত্রাণ আসবে। মার্কিন সরকারকে সাধুবাদ দেবো অবশেষে টনক নড়েছে! ২০২৩ সালের নির্বাচন এখন ভারতের পা ধরে না থাকলে আওয়ামী দালালদের জন্যে খুব সমস্যা হয়ে যাবে! তবে, আমি বলবো আমি এমন পরিবর্তন চাই যে পরিবর্তন এর মাধ্যমে বাংলাদেশে সমকামীতা আর অপরাধ বলে গণ্য হবে না, ইসলাম বা অন্য কোনো ধর্ম রাষ্ট্রীয় ধর্ম হিসেবে বিবেচিত হবে। ইন ফ্যাক্ট, রাষ্ট্রীয় ধর্ম বলে কিছু থাকবেনা। হিজড়া ও উভকামীদের সমকামীদের সাথে সমস্ত সামাজিক, রাজনৈতিক ও আইনী অধিকার দেয়া হবে। কিন্তু, হায়! এমন কী হবে কখনো? জানিনা।
মো; মাহফুজুর রাহামান (২০ / সুনামগঞ্জ, সিলেট) – সরাসরি মূল প্রসঙ্গে চলে যাই। র্যাব একটি সরকারী সন্ত্রাসী বাহিনী যারা সরকারের হয়ে বিভিন্ন খুন-খারাবী করে থাকে এবং মাঝে মাঝে নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের চেষ্টা করে নিজেদের অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, ও ব্যক্তিগত স্বার্থ-লোভ চরিতার্থ করবার জন্যে। এই বিষয়গুলো সবার-ই জানা এবং যেকোনো সাধারণ মানুষকে স্বাধীনভাবে এই ব্যাপারে মতামত প্রকাশ করবার সুযোগ দিলে এই মনোভাব ব্যক্ত করা হবে, এই বিষয়ে সন্দেহ নেই। আমি নিজে ছাত্রলীগ, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন ষন্ডার সাথে বহুবার দ্বন্দে জড়িয়েছি, হয়েছি নিগৃহীত, লাঞ্ছিত। হেনস্থা, হয়রানিও কম হয়নি। আমার জানের হুমকি ছিল সবসময়, কিন্তু র্যাব যখনই দেখেছি, তখনই আত্মা কেঁপে উঠেছে ভয়ে। কারণ র্যাব-এর হাতে পড়া মানে নিশ্চিত মৃত্যু, অথবা হারিয়ে যাওয়া। মার্কিন সরকারের সাহসের আমি তারিফ করি, কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য এই তাদের এই সিদ্ধান্ত অনেক দেরীতে নেয়া হয়েছে। যতদিন ভারতের বিজেপি হিন্দুবাদী সরকার এই আওয়ামী সরকারকে তোষণ করে যাবে, ততকাল মার্কিন সরকারের বিভিন্ন হুমকি-ধমকিতে কাজ হবে বলে মনে হয়না। কিন্তু মার্কিন সরকার যদি এই অবস্থান ধরে রাখতে পারে আগামী নির্বাচন পর্যন্ত, তাহলে আওয়ামী নির্বাচনের জারি-জুরি, ভোট ডাকাতি ধূলিস্যাৎ হয়ে যাবে। আমি আন্তর্জাতিক মহলকে আরো সোচ্চার হতে বলি বাংলাদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘনের এইসব গুরুতর বিষয়ে। পরিশেষে জানাই যে আপনাদের মতো সংবাদ মাধ্যম আছে বিধায় এখনো দেশকে নিয়ে আশায় বুক বাঁধি, স্বপ্ন দেখি।
এম ডি কামরুল হাসান – প্রশ্ন হলো দেশে আরও অনেক প্রতিষ্ঠান থাকতে মার্কিন প্রশাসন র্যাবকেই বা কেন বেছে নিলো? উত্তরটা খুবই সহজ। মানুষ সাধারণত শত্রুর দুর্বল জায়গাতেই আঘাত করে, মার্কিন প্রশাসনও তাই করেছে। সেই বিএনপি আমলে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনীটির বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিস্তার অভিযোগ উচ্চারিত হচ্ছিলো। কিন্তু বিএনপি সরকার তাতে গা দেয়নি। মনে পড়ে, সে সময়ে র্যাবের ‘ক্লিন হার্ট অপারেশন’ কে আওয়ামী লীগও কঠিন ভাষায় সমালোচনা করতো, ব্যঙ্গ করে বলতো ‘দিল সাফ অপারেশন’। কিন্তু পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এলো, তারা র্যাবের ওপর অতীতের সরকারের তুলনায় আরও বেশি নির্ভরশীল হয়ে উঠলো। ক্ষমতায় আসার অল্পদিনের মাঝেই ঘটলো এই বাহিনীর সদস্যদের হাতে নারায়ণগঞ্জে ৭ খুনের ঘটনা। সেই যে শুরু, তারপর থেকে সংস্থাটির দিকে মানবাধিকার লঙ্ঘনের তীর উৎক্ষিপ্ত হতেই থাকে। কখনো ক্রস ফায়ারের অভিযোগ, কখনো ঘর থেকে তুলে নিয়ে গায়েব করে দেওয়ার অভিযোগ। অস্বীকার করার উপায় নেই, অনেক ক্ষেত্রে সন্ত্রাস দমনে র্যাব অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করেছে। কিন্তু সেগুলোর সবই বিএনপি আমলে। আওয়ামী আমলে এসে তারা মানবাধিকার লঙ্ঘনের চরম দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সেই সব লিপিবদ্ধ করে বিভিন্ন দেশে তাদের প্রতিবেদন পাঠিয়েছে, যা আমাদের কূটনীতিকরা টেরও পাননি। বস্তুতঃ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের প্রতিবেদনই মার্কিন প্রশাসনকে বাংলাদেশি কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপের ক্ষেত্র প্রস্তুতে সহায়তা করেছে। যদি মার্কিন প্রশাসন থেকে জঙ্গিবাদ বা মাদক পাচারের অভিযোগে কোনো এক বিরোধী দলীয় নেতা বা নেত্রীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হতো তখন আমাদের সরকার বা সরকার সমর্থকরা কি করতেন? নিশ্চয়ই তারা এ কথা বলতেন না যে এটি সাম্রাজ্যবাদী মার্কিন চক্রান্তের ফল। বরং ঢাকঢোল পিটিয়ে তা প্রচার করা হতো। সম্ভব হলে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার হাজারো কপি ছাপিয়ে জনগণের মাঝে বিতরণ করা হতো। তাহলে আজ কেন মার্কিনের বিরুদ্ধে এতো বিষেদগার? যারা আজ মার্কিন সমালোচনায় উচ্চকণ্ঠ তারা কি নিত্যদিন ঘটে যাওয়া ক্রসফায়ারের কিংবা জলজ্যান্ত মানুষ গুম হয়ে যাওয়ার ঘটনাগুলো অস্বীকার করতে পারেন? এ প্রসঙ্গে স্মরণ করা যেতে পারে, যেদিন র্যাব কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার বিষয়টি জানাজানি হলো সেদিনই ‘মায়ের ডাক’ নামে একটি সংগঠনের উদ্যোগে ৪০টি পরিবারের সদস্যরা মানববন্ধন করে। এই মানুষগুলো তাদের পরিবারের আপনজনদের খোঁজ পাচ্ছেন না। এই আপনজনদের বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নামে ঘর থেকে তুলে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু দেখা লাগবে এগুলো কেন? আপনারা শেখ মুজিবের অল্প কদিনের শাসনামল আর শেখ হাসিনার শাসনামল তুলনা করে দেখুন – রক্ষী বাহিনী/র্যাব দিয়ে অরাজকতা ও খুন/খারাবী, বিরোধী দল দমন/নিপীড়ন, একদলীয় নির্বাচন, ইত্যাদি। অসুখটা কোথায় তা বাংলাদেশের মানুষ জানে এখন। অসুখটার অর্ধেক সারিয়ে ফেলা হয়েছে ৭৫ এ, বাকিটা কখন হবে, কে জানে।
এমডি দিদার আহমেদ (২৬, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ, সিলেট) – মার্কিন সরকার কোন ভূ-রাজনীতির অংক কষে র্যাবকে ব্ল্যাকলিস্ট করেছি, বলতে পারিনা। কিন্তু, পদক্ষেপটি একদম সঠিক এবং একটা সপাট চপোটাঘাত আওয়ামী সরকারের স্বৈরতন্ত্রের প্রতি। আওয়ামী রাজনীতি ও শাসন দিন শেষে এমনতরো অবস্থাতেই আসবার কথা। সে শিক্ষা ১৯৭২-৭৫ এবং বাকশালী কু-প্রচেষ্টা আমাদের দেয়। কিন্তু বিচিত্র এই দেশ! যে আর্মি আওয়ামী বাকশালের পতন ঘটালো, সে-ই আর্মির কাঁধে ভর করে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাই আসলো এবং ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখলো দেড় দশক ধরে প্রায়। মার্কিন সরকারের এই নিষেধাজ্ঞা আওয়ামী নির্বাচন-চুরির কৌশলকে বানচাল করবার জন্যে যথেষ্ঠ কি? তা জানিনা। কিন্তু ২০২৩ এর নির্বাচন-এ ভোট-ডাকাতির প্রহসন করা খুব দুষ্কর হয়ে যাবে হাসিনার হায়েনাদের।
সামিয়া খানম তিশা (২৬, গোপিনাথপুর, গোপালগাঞ্জ) – সাধুবাদ নবযুগকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সামনে নিয়ে আসার জন্যে। মূল গণমাধ্যম এইসব ব্যাপারে নিশ্চুপ। একমাত্র প্রান্তীয় কিছু সাহসী সংবাদমাধ্যম এই বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলবার সাহস দেখিয়েছে। আমার মনে হয় আওয়ামী সরকারের দুঃশাসনের সময় ঘনিয়ে এসেছে। আমার সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতা আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর ব্যাপারে সুখকর নয়। হেনস্থা হয়েছে পরিচিত মানুষ অনেক বেশি র্যাব-পুলিশ দ্বারা যতটা না প্রকৃত সন্ত্রাসী/চোর/ডাকাত/চাঁদাবাজদের কাছে। এমন ঘটনা এন্তার এবং মুখে কুলুপ দিয়ে রাখা সংবাদ মাধ্যম এইসমস্ত হয়রানি, হেনস্থা, গুমের কথা গোপন করে, এবং এই গোপন করার মাধ্যমে তাদের স্বার্থ হয়তো সিদ্ধি হয় ঠিকই, কিন্তু গণমানুষ পরাজিত হয়। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা আজ র্যাব-এর কাছে ধর্ষিত।
এমডি কামরান আহমেদ (২৮, বালাগঞ্জ, সিলেট) – আমি নিজে র্যাব এর কাছে লাঞ্ছিত হয়েছি। কোনো অপরাধ না করেই। কিন্তু এমন অসংখ্য মানুষ আছেন যাদের জীবন তছনছ হয়ে গেছে র্যাব-পুলিশের অত্যাচারে। র্যাব এখন বাংলাদেশে আওয়ামী দুর্বৃত্ত। আইন বিশৃঙ্খলা-সৃষ্টিকারী বাহিনী হিসেবে পরিচিত মূলত।
আবু বকর সিদ্দীক (২৫, অঙ্গারিয়া, শরীয়তপুর) – র্যাব প্রসঙ্গে আমার নিজের দেখা কিছু ঘটনা আছে যা যুক্তরাষ্ট্রের সাম্প্রতিক অবস্থানকে বৈধতা দান করে বলে আমি মনে করি। আমি নিজে দেখেছি র্যাব রাজনৈতিক আদেশপুষ্ট হয়ে আমার পরিচির মানুষকে উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আমার পরিচিত মহলে র্যাব চাঁদাবাজি করেছে বিস্তর। আওয়ামী সরকারের আমলে র্যাব এর দৌরাত্ম্য বেঁড়েছে ভয়ঙ্কর। কিলিং স্কোয়াড-এ পরিণত হয়েছে তারা। আওয়ামী দুঃশাসনের প্রধান এনফোর্সার র্যাব। সমস্ত রাজনৈতিক হত্যা অত্যাচার র্যাব দ্বারা সংগঠিত। এটা সুস্পষ্ট। মার্কিন ও অন্যান্য প্রভাবশালী রাষ্ট্রের উচিৎ বাংলাদেশকে বয়কট করা। শাস্তি দেয়া বিভিন্ন সাংশান এর মাধ্যমে। নাহলে এই বিচারহীনতার সংস্কৃতি চলতেই থাকবে।