বি এন পি’র বিক্ষোভ মিছিলে পুলিশের হামলা-মামলা, আহত শতাধিক
২০১৮ সালের ৩০ শে ডিসেম্বরের জাতীয় নির্বাচনকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস উল্লেখ করে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল গতকাল রাজধানীর মিরপুরের রূপনগরে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এইসময় পুলিশের অতর্কিত হামলায় শতাধিক ব্যাক্তি আহত হবার সংবাদ পাওয়া গেছে। এই সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে ঘটনাস্থলেই অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে তাদের দ্রুত হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয় বলে জানা গেছে। এ-ব্যাপারে দেশজুড়ে মিডিয়া কভারেজ হয়েছে। এর ভেতর উল্লেখযোগ্য হচ্ছে রূপনগর থানার এই মামলায় একই পরিবারেরর সাতজনকে আসামী করা হয়েছে পর্যায়ক্রমিকভাবে, যাদের ভেতর একজন দেশেই থাকেননা। এই বিষয়ে অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য।
গণতন্ত্র হত্যা দিইবস উপল্কখ্য বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের উদয়গে মিরপুরের রূপনগরে একটি বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে মহানগর বি এন পি এবং তাদের অঙ্গসংগঠন। সমাবেশকে ঘিরে আগে থেকেই মিরপুর শাহ আলী পুলিশ থেকে শুরু করে রূপনগর, পল্লবী, কালশি, স্টেডিয়াম ইত্যাদি স্থান থেকেও গাড়ি বোঝাই পুলিশের বিশেষ কয়েকটি দলকে মোতায়েন করা হয়। সবা শান্তিপূর্ণভাবে চলার এক পর্যায়ে ভীড়ের মধ্য একদল তরুন পুলিশের বিরুদ্ধে স্লোগান দিলেই সাথে সাথে পুলিশ নির্বিচারে লাঠি চার্জ শুরু করে সভা ছত্র ভঙ্গ করে দেয়। এই সময় পুলিশের লাঠির আঘাতে অনেককে রাস্তায় পড়ে থাকতে দেখা যায় আবার অনেকে আহত অবস্থায় আশে পাশের দোকান-রেস্তোঁরায় আশ্রয় নেয়। এ সময় প্রায় শতাধিক ব্যাক্তির আহত হবার সংবাদ পাওয়া গেছে।
৩০ ডিসেম্বর বিকেলে রূপনগর থানার পুলিশ এই ঘটনায় একটি মামলা দায়ের করে যেখানে শুধু এই বিক্ষোভে অংশ নেয়া বিভিন্ন ব্যাক্ত-ই কেবল নয় প্রবাসে থাকা ব্যাক্তির বিরুদ্ধেও মামলা হয়েছে বলে জানা গেছে (জি.আর. নং – ৫২২০/২০২০)। পরে জানা যায় গ্রেপ্তারকৃতদের দুজনই বিএনপির সাবেক এমপি জহিরউদ্দীন স্বপনের একনিষ্ঠ সমর্থক এবং তারা একই পরিবারের সদস্য। প্রয়াত বিএনপি নেতা আব্দুল মান্নান এর সাথেও পারিবারিক সূত্রে এই পরিবারের ঘনিষ্ঠতা ছিল। এই একই মামলার এজাহার সেদিন সন্ধ্যায় পরিবর্তন করে এতে গ্রেপ্তারকৃত উলিয়ার হোসাইন এর যুক্তরাজ্য প্রবাসী ভাগ্নে মোঃ শহীদুল ইসলাম এর নাম-ও ঢুকিয়ে দেয়া হয় এই অজুহাতে যে জহিরউদ্দীন স্বপনের যুক্তরাজ্য সফরকালে এই শহীদুল ইসলাম তার সাথে সরকারবিরোধী ষড়যন্ত্র করেন এবং ৩০ ডিসেম্বর এর বিক্ষোভে অস্থিরতা সৃষ্টিতে তারো ভূমিকা ছিলো। নাম না প্রকাশ করার শর্তে শহীদুল ইসলাম এর ঘনিষঠ সূত্র জানায় – এইসবই মিথ্যে বানোয়াট। এইসব জেল জুলুমের মুল টার্গেট জহিরউদ্দীণ স্বপনের উপরে চাপ প্রয়োগ করা এবং সাধারণ মানুষকে বিএনপি সমর্থন থেকে নিরস্ত করা।
এজাহার জারি হওয়ার পরেও এই মামলায় উলিয়ার হোসাইন এর আরো তিন ভাগনেকে এবং তার এক সহোদরকে আসামী করা হয় পরবর্তীতে এবং হাজতে সোপার্দ করা হয়। এর ভেতরে অবশ্য উলিয়ার হোসাইন, এনামুল হক, আওলাদ হোসাইন সহ আরো কয়েকজন এর জামিন হয়েছে যদিও শহীদুলের তিন ভাই এখনো কারাগারে অন্তরীন। এই মামলার আসামীদের মধ্যে একই পরিবারের ৭ জনের নাম আমাদের সংবাদ দাতার মাধ্যমে এসেছে যারা জাতীয়তাবাদী দলের সাবেক সাংসদ জহির উদ্দিন স্বপনের ঘনিষ্ঠ লোক বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায় যুক্তরাজ্য প্রবাসী আরেক ব্যাক্তি জনাব মোঃ মইন উদ্দিন চৌধুরীকেও এই মামলার আসামী হিসেবে দেখানো হয়েছে। এই ঘটনায় জনাব শহীদুলের পরিবারের সাথে নবযুগ পত্রিকার পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে জানা যায় শহীদুল গত ১২ বছর ধরেই যুক্তরাজ্যে বসবাস করে আসছেন এমন ঘটনার প্রেক্ষিতে সংশ্লিষ্ঠ থানার কর্তব্যরত পুলিশের কর্মকর্তা এস আই জনাব শহীদ উদ্দিন খানের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই এই শহীদুল, মইন গংরা যুক্তরাজ্য থেকে অর্থ পাঠিয়ে এইসব মিছিল ও বিক্ষোভ সমাবেশের আয়োজন করে আসছে। আসামীদের জিজ্ঞাসাবাদেই এইসব তথ্য পাওয়া গেছে।‘ অর্থ প্রেরণের কোনো রশিদ কিংবা কিভাবে পাঠিয়েছে এই ব্যাপারে প্রশ্ন করলে জনাব খান অত্যন্ত উত্তেজিত হয়ে ওঠেন এবং বলেন, ‘আপনার এইসব প্রমাণ নিয়া কি আমি বইসা আছি? মামলা আদালতে উঠলে দেখবেন। এখন তদন্তের সময় এত কিছু বলা যাবে না।‘
উলিয়ারের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা হলে উলিয়ার হোসাইন বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের রাজনীতি করে আসছে। আমরা এই এলাকার অত্যন্ত সম্মানিত ও জনপ্রিয় পরিবারের মানুষ। আমাদের সাথে বিএনপির সম্পর্ক গত চার দশকের। এই সম্পর্কে ইর্ষান্বিত হয়ে এই সরকার গত এক যুগ ধরেই আমার ও পরিবারের অন্য সদস্যদের ক্রমাগত মামলা-হামলা করে অত্যাচার করেই যাচ্ছে। আমরা যে প্রতিকার চাইবো সেই উপায়ও নেই। আজকে ভোটবিহীন নির্বাচনে ৩ টার্ম এই আওয়ামীলীগের সরকার থাকার কারনে বিচার চাইবার রাস্তাও আমাদের বন্ধ হয়ে গেছে। যেই দেশে প্রধান বিচারপতিকে পালিয়ে অন্য দেশে চলে যেতে হয় সেখানে আইনের শাসনের কথা বলে আমিও আর মামলা খেতে চাইনা’
এই ব্যাপারে স্থানীয় অনেক ব্যাক্তি ও রাজনৈতিক নেতার সাথে কথা বলেও ঘটনার সত্যতা পাওয়া যায়। স্থানীয় এক বি এন পি নেতা, নাম প্রকাশ না করবার শর্তে বলেন, ‘উলিয়ার এই অঞ্চলের পরবর্তী শক্তিশালী নেতা হিসেবে নাম কামিয়েছে। হয়ত তিনি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে পারেন, এই ভয়ে সরকারের পেটোয়া বাহিনী তাদের লোকজনকে উলিয়ার ভাইয়ের ও তার পরিবারের উপর লেলিয়ে দিয়েছে’
এই ব্যাপারে বি এন পি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘সারা দেশ জুড়েই এখন মামলা আর হামলার আতংক। দেশে নেই গণতন্ত্র আর নেই আইনের শাষন। রপনগরে জাতীয়তাবাদী দলের মিছিলে এই হামলার ঘটনা সরকারের নোংরা অত্যাচারের আরেকটি প্রকাশ বৈ অন্য কিছুই নয়।‘