অপুষ্টি থাকলে করোনা তীব্র হয়

ইয়েমেনের একটি হাসপাতালে অপুষ্টিতে ভোগা শিশু। ছবিটি গত ডিসেম্বরে তোলা।
ইয়েমেনের একটি হাসপাতালে অপুষ্টিতে ভোগা শিশু। ছবিটি গত ডিসেম্বরে তোলা। 

অপুষ্টির সঙ্গে করোনার তীব্র লক্ষণের সম্পর্ক আছে। অপুষ্টির ইতিহাস আছে, এমন শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা করোনায় আক্রান্ত হলে তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি বা তাদের রোগের লক্ষণ তীব্র হয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া করোনা রোগীদের নিয়ে এক গবেষণায় এমনটা দেখা গেছে।

গবেষকেরা বলছেন, করোনায় আক্রান্ত হলে নানা ধরনের অপুষ্টিজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয়। আবার অপুষ্টির শিকার শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে করোনার তীব্রতা বেশি দেখা দেয়। এটি একটি হতবুদ্ধ হওয়ার মতো পরিস্থিতি। বিখ্যাত বিজ্ঞান সাময়িকী ন্যাচার গত সপ্তাহে ‘লং-টার্ম ইফেক্টস অব ম্যালনিউট্রিশন অন সিভিয়ারিটি অব কোভিড-১৯’ শিরোনামে বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ প্রকাশ করেছে।
গবেষণায় যুক্তরাষ্ট্রের ৫৬টি হাসপাতালে করোনায় আক্রান্তের পর ভর্তি হওয়া ৮ হাজার ৬০৪ জন শিশু ও ৯৪ হাজার ৪৯৫ জন বয়স্ক ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়। শিশুদের গড় বয়স ছিল ছয় বছর। অন্য ব্যক্তিদের বয়স ছিল ১৮ থেকে ৭৮ বছরের মধ্যে। তারা ২০২০ সালের মার্চ থেকে জুনের মধ্যে বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিল। পুষ্টির ইতিহাস জানতে গবেষকেরা ২০১৫ থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত এসব রোগীর স্বাস্থ্য তথ্য ঘেঁটে দেখেন।

হাসপাতালে ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে ৫১৭ জনের জীবন রক্ষায় ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়। এর মধ্যে ১৮টি শিশু মারা যায়। আর তিনজনের ভেন্টিলেটর ব্যবহারের আগেই মৃত্যু ঘটে। গবেষকেরা ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা ও না করা মোট ৫২০ জন শিশুকে তীব্র করোনার লক্ষণের শ্রেণিভুক্ত করেন। শিশুদের মধ্যে ১৬৪ জনের বা ১ দশমিক ৯ শতাংশের অপুষ্টির ইতিহাস ছিল। গবেষকেরা বলছেন, মাঝারি তীব্রতায় ভোগা শিশুদের ১ দশমিক ৫ শতাংশের অপুষ্টি ছিল। আর তীব্র লক্ষণে ভোগা শিশুদের ৭ দশমিক ৫ শতাংশের অপুষ্টি ছিল।

বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ১১ হাজার ৪২৩ জনকে করোনার তীব্র লক্ষণযুক্ত রোগীর শ্রেণিতে ফেলা হয়। তাঁদের মধ্যে ৯ হাজার ৯৫৩ জনের জীবন রক্ষায় ভেন্টিলেটর ব্যবহার করা হয়েছিল। বয়স্ক ব্যক্তিদের মধ্যে ৩ হাজার ২৩৬ জনের মৃত্যু ঘটে। বয়স্ক ব্যক্তিদের ২০১০ জনের বা ২ দশমিক ১ শতাংশের অপুষ্টির ইতিহাস ছিল। মাঝারি তীব্রতায় ভোগা বয়স্ক ব্যক্তিদের ১ দশমিক ৮ শতাংশের অপুষ্টি ছিল। আর তীব্র লক্ষণে ভোগা বয়স্ক ব্যক্তিদের ৪ শতাংশের অপুষ্টি ছিল।

 অপুষ্টিতে ভোগা এই শিশুরা রয়েছে করোনার ঝুঁকিতে।
অপুষ্টিতে ভোগা এই শিশুরা রয়েছে করোনার ঝুঁকিতে। 

প্রবন্ধের শুরুতে গবেষকেরা বলেছেন, সামাজিক দূরত্ব, আংশিক বা সর্বাত্মক লকডাউন, কোয়ারেন্টিনের বিরূপ প্রভাব পড়েছে অর্থনীতিতে, যা অপুষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়েছে। অনেক পরিবারের আয় কমে গেছে। স্কুল বন্ধ থাকায় অনেক শিশুর পরিপূরক খাদ্য পাওয়া বন্ধ হয়েছে। লকডাউনের কারণে খাদ্য সরবরাহও বাধাগ্রস্ত হয়েছে। এসব অপুষ্টি বাড়িয়েছে।

প্রবন্ধে সাম্প্রতিক অন্যান্য গবেষণার উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়েছে, করোনা বয়স্ক ব্যক্তিদের অপুষ্টি উসকে দিচ্ছে এবং নানা শারীরিক জটিলতা তৈরি করছে। এটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে অপুষ্টি রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কমাচ্ছে, হাসপাতালে অবস্থান দীর্ঘায়িত করছে, মৃত্যু বাড়াচ্ছে। অপুষ্টিতে ভোগা ব্যক্তি যেকোনো রোগে আক্রান্ত হলে পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি ঘটে। করোনাও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়।
গবেষণা ফলাফলকে গুরুত্বপূর্ণ বলে বর্ণনা করেছেন দেশের শীর্ষস্থানীয় পুষ্টিবিদ ও আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশের (আইসিডিডিআরবি) নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মহামারি শুরুর আগে দেশে পুষ্টি পরিস্থিতি সন্তোষজনক অবস্থায় ছিল না। পরিস্থিতির অবনতি কতটা হয়েছে, তা জানতে জরুরি ভিত্তিতে সমীক্ষা হওয়া দরকার। পুষ্টি পরিস্থিতির উন্নতি ঘটাতে নিম্ন আয়ের ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠীকে খাদ্য সরবরাহসহ সরকারের বিভিন্ন কাজের সঙ্গে বেসরকারি উদ্যোগকে যুক্ত হতে হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *