মতামত

ক্ষমতায় বসে বিচার ব্যবস্থার উপর ডঃ ইউনুসের খবরদারি

এম ডি আব্দুল ওয়াহিদ কিরন, যুক্তরাজ্য থেকে

৮ আগস্ট ড. মুহাম্মদ ইউনুস প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন। তার ঠিক আগের দিন, ৭ আগস্ট, শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় তার ছয় মাসের কারাদণ্ড ও ৫ হাজার টাকা জরিমানার রায় বাতিল করা হয়। এরপর ১২ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলার কার্যক্রমও বাতিল হয়ে যায়। আর ৩ অক্টোবর বাতিল করা হয় গ্রামীণ কল্যাণের ৬৬৬ কোটি টাকার কর সংক্রান্ত রায়।

অর্থাৎ, মাত্র তিন মাসের মধ্যে ড. ইউনুস ও তার প্রতিষ্ঠান একের পর এক মামলায় দায়মুক্তি পান, কোনো পূর্ণাঙ্গ বিচারিক প্রক্রিয়া ছাড়াই। তিনি সব সময় দাবি করে এসেছেন, এসব মামলা শুধুমাত্র তাকে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে করা হয়েছিল। এবার আমরা সংক্ষেপে মামলাগুলোর সময়রেখা দেখি:

  • শ্রম আইন লঙ্ঘন মামলা: শুরু হয় সেপ্টেম্বর ২০২১-এ। দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে জানুয়ারি ২০২৪-এ রায় হয়। অর্থাৎ প্রায় আড়াই বছর ধরে চলেছে।
  • দুদকের দুর্নীতির মামলা: উচ্চ আদালতের নির্দেশে তদন্ত শুরু হয় আগস্ট ২০২২-এ। মামলা দায়েরের ছয় মাস পর চার্জ গঠন হয় জানুয়ারি ২০২৪-এ। নিয়মমাফিক চললে, এই মামলাটিও দীর্ঘ সময় নিয়ে নিষ্পত্তি পেত।
  • কর ফাঁকির মামলা (গ্রামীণ কল্যাণ): শুরু ২০১৭ সালের অক্টোবরে। চূড়ান্ত রায় আসে ২০২৪ সালের আগস্টে, অর্থাৎ সাত বছর পর।
  • ব্যক্তিগত কর ফাঁকি মামলা: শুরু ২০১৫ সালে, নিষ্পত্তি হয় ২০২৩-এ। সেখানে তাকে সাড়ে ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করতে হয়।

ড. ইউনুস যেভাবে দ্রুততার সাথে সকল মামলা বাতিল করিয়ে নিচ্ছেন, তাতে মনে প্রশ্ন জাগে—যদি এসব মামলা তাকে শুধু হয়রানির জন্যই করা হতো, তাহলে সেগুলো বছরের পর বছর ধরে চলল কীভাবে? একইভাবে, যদি রাষ্ট্র চায়ত তাকে সাজা দিতে, তাহলে সেই উদ্দেশ্য পূরণ করতেও তো এমন ‘দ্রুত ব্যবস্থা’ নেওয়া যেত!

বর্তমানে দেশের সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে বিচারিক আদালত, এমনকি অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিস—সবই ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে বলে অভিযোগ আছে। তারপরও কোনো মামলাকে নিয়মতান্ত্রিক বিচারিক পথে এগোতে দেওয়া হচ্ছে না। কেন? কারণ ড. ইউনুস জানেন, প্রকৃত বিচার হলে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হবেই।

সুতরাং, নৈতিকতার কথা বলার আগে ড. ইউনুস সাহেব, আয়নায় নিজের মুখটা একবার দেখুন। যে চেহারা দেখবেন, তা একজন নির্ভেজাল ভণ্ডের!