ইউনূস-নাহিদের চিত্রনাট্যে সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদের দুর্দান্ত অভিনয়
এম ডি মারজানুল ইস্ললাম, যুক্তরাজ্য
পুরান ঢাকার আলিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ দাবি করেছেন- গুলিবিদ্ধ হয়ে তার ডান চোখ নষ্ট হয়েছে। তার এই অভিযোগকে কেন্দ্র করে মামলা হয়েছে দুই থানায়, দুই শহরে, দুইজন আলাদা বাদীর পক্ষ থেকে- কিন্তু ঘটনাটি, সময়টি ও ‘ভিকটিম’ একজনই!
প্রথম মামলা হয়েছে ঢাকার শাহবাগ থানায়- ৩০ এপ্রিল ২০২৫। বাদী এম এ হাশেম রাজু, যিনি নিজেকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার কমিশনের বাংলাদেশ শাখার সভাপতি হিসেবে পরিচয় দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ৪ আগস্ট সকাল সাড়ে ১১টায় ঢাকার পরীবাগে সংঘটিত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী তিনি নিজে। মামলায় প্রধানমন্ত্রীর নামসহ অভিযুক্ত করা হয়েছে ২০১ জনকে, যাদের মধ্যে রয়েছেন সাংস্কৃতিক অঙ্গনের পরিচিত মুখ মেহের আফরোজ শাওন, জায়েদ খানসহ সাংবাদিক, ব্যবসায়ী ও পেশাজীবীরাও।
যাহোক, এ পর্যন্ত ঠিকই ছিল।
তবে ১৭ জুন চট্টগ্রামের খুলশী থানায় আরেকটি মামলা দায়ের করেন স্বয়ং ভিকটিম সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ। মামলায় বলা হয়েছে, ১ আগস্ট থেকে ৮ আগস্ট পর্যন্ত তিনি ছিলেন চট্টগ্রামে। আর ৪ আগস্ট সকাল ১১টায় তিনি গুলিবিদ্ধ হন নিউমার্কেট মোড়ে। একইসঙ্গে, ৫ আগস্ট দুপুর ২টায় তিনি আবারও হামলার শিকার হন ওয়াসা মোড়ে।
প্রশ্ন উঠেছে- একজন মানুষ একসঙ্গে দুটি শহরে গুলিবিদ্ধ হন কীভাবে?
একই ব্যক্তি, একই তারিখ, একই সময়—কিন্তু দুটি শহর। ঢাকা ও চট্টগ্রামের মাঝখানে প্রায় ২৫০ কিলোমিটার দূরত্ব। সেখানে পৌঁছাতেই লাগে কমপক্ষে ৬-৮ ঘণ্টা। অথচ সাইফুদ্দীনের ভাষ্য অনুযায়ী, তিনি তখন ছিলেন চট্টগ্রামে-তাও আবার পরপর দুটি স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন।
বিভ্রান্তি এখানেই শেষ নয়। ১৩ এপ্রিলের আরেক ঘটনায় তিনি শাহবাগ থানায় মামলা করেছেন চট্টগ্রাম সমিতির পন্টন মোড়ে হামলার অভিযোগে, যেখানে আসামি করা হয়েছে ঢাকার ৯ জনকে। একটি শহরের ঘটনায় অন্য শহরের থানায় মামলার এমন উদাহরণ আগে কমই দেখা গেছে।
এ এক ভয়ানক ‘মেটিকুলাস প্ল্যান-বি’- যেখানে সুপরিকল্পিত রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আওয়ামী লীগ ও আওয়ামী পন্থী লোকজনদের ধ্বংস করতে মাঠে নামানো হয়েছে একঝাঁক মুখোশধারী চরিত্র, যারা কখনো সাংবাদিক, কখনো মানবাধিকারকর্মী, আবার কখনো ‘ভিকটিম’ পরিচয়ে শুধু মামলাই করে যাচ্ছে।
সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ শুধু একজন মামলার বাদী নন- তিনি যেন একটি ‘আইনি প্রপস’ (legal prop), যাকে ব্যবহার করে প্রয়োজনমতো যে কোনো থানায়, যে কোনো ঘটনার ওপর ভিত্তি করে, যখন খুশি যেকোনো কারো বিরুদ্ধে মামলা করানো যায়। এমন ‘প্রপস’ একটিমাত্র নয়- ড. ইউনূস ও নাহিদ ইসলামের মদদে এরকম শত শত ‘সাইফুদ্দীন মুহাম্মদ এমদাদ’ তৈরি হয়েছে, যারা একই ছকে সাজানো নাটকে অভিনয় করে যাচ্ছেন।
যখন দেখা যায়, এসব মামলার আসামির তালিকায় রাজনীতিক, সাংবাদিক, শিল্পী ও মানবাধিকারকর্মীরা, আর মামলার বাদী সাইফুদ্দীন সরাসরি প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস ও নাহিদ ইসলামের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছেন- তখন আর বুঝতে বাকি থাকে না, এই মিথ্যা মামলাগুলোর মূল পরিকল্পনাকারী কারা।

