শাপলার গণহত্যার সত্য-মিথ্যা
আফরোজা আলীম আশা, যুক্তরাজ্য
বিবিসি বাংলার সাবেক প্রধান সাবির মুস্তফা সম্প্রতি এক সাক্ষাৎকারে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ২০১৩ সালের ৫ ই মে রাতে শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতের সমাবেশে আইন শৃংখলা বাহিনীর অভিযান চলাকালীন কোন গণহত্যা সংঘটিত হয়নি। তিনি এটাও বলেছেনে, অধিকার এনজিও ৬১ জন এবং হিউম্যান রাইট ওয়াচ ৫৮ জন নিহতের দাবি করলেও তারা কোন তালিকা সাংবাদিকদের দিতে পারেনি।
‘হেফাজতের সমাবেশে গণহত্যা হয়েছে’- এই অভিযোগ সৃষ্টির মূল কারিগর হলো বাংলাদেশে ডিপস্টেটের অন্যতম এজেন্ট এবং বর্তমান অবৈধ অন্তর্বর্তী সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত উপদেষ্টা, অধিকার এনজিওর সম্পাদক আদিলুর রহমান।
২০১৩ সালের ৬ ই জুন অধিকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি করা হয় ৫ই মে শাপলা চত্ত্বরে হেফাজতের সমাবেশে আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছে এবং আড়াই হাজারের বেশি মানুষ নিখোঁজ রয়েছে। শুধু ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেই ক্ষান্ত হয়নি, দুনিয়ার তাবৎ মানবাধিকার সংগঠনে এই রিপোর্ট প্রেরণ করা হয়। মূলত অধিকারের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করেই বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ সংক্রান্ত বক্তব্য, বিবৃতি প্রদান শুরু করে।
এই রিপোর্টের বিষয়ে এনজিও ব্যুরো থেকে প্রথমে অধিকারের কাছে জানতে চাওয়া হয় এবং যাচাই বাছাইয়ের জন্য নিহতের নামীয় তালিকা চাওয়া হয়। অধিকার এনজিও ব্যুরোকে সেই তালিকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর তথ্য অধিকার আইনে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পুনরায় অধিকারের কাছে নিহতের নামের তালিকা চাওয়া হয়। অধিকার তখনো তালিকা দেয়নি। বরং বক্তব্য, বিবৃতির মাধ্যমে অপপ্রচার অব্যাহত রাখে।
এ প্রেক্ষিতে ১০ আগস্ট, ২০১৩ সালে গুলশান থানায় দায়েরকৃত একটি জিডিমূলে অধিকারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে পুলিশ এই রিপোর্ট প্রস্তুতে ব্যবহৃত কম্পিউটার ও অন্যান্য ডিভাইস উদ্ধার করে এবং আদিলুরকে নিরাপত্তা হেফাজতে নেয়। জব্দকৃত কম্পিউটারের ফরেনসিক বিশ্লেষণ করে অধিকার থেকে প্রস্তুতকৃত ৬১ জনের একটি তালিকা পাওয়া যায়। এই তালিকাটি বিশ্লেষণ করে দেখা যায় ৬১ জনের মাঝে ৩৪ জনের বিষয়ে প্রদানকৃত তথ্য মিথ্যা, বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রনোদিত। বাকি ২৫ জন নিহতদের মাঝে ছিলো হেফাজতের সমাবেশকে কেন্দ্র করে দেশব্যাপী বিভিন স্থানে সংঘর্ষে নিহতরা, ছিলো নিহত আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরাও।
উদ্দেশ্যপ্রনোদিতভাবে মিথ্যা তথ্য প্রদান করে দেশের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও রাষ্ট্রীয় ভাবমূর্তি নষ্টের অভিযোগে আদিলুর রহমান ও অধিকারের পরিচালক নাসির উদ্দিন এলানের বিরুদ্ধে ৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৩ সালে অভিযোগ পত্র দাখিল করা হয়। এই মামলার কার্যক্রম চলে সুদীর্ঘ ১০ বছর। অবশেষে ২০২৩ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর ঘোষিত রায়ে আদিলুর ও নাসির উদ্দীন এলানের ২ বছরের কারাদণ্ড প্রদান করা হয়। অধিকারের রিপোর্টের বিরুদ্ধে আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন এমন চারজন ব্যক্তি যাদের মৃত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছিলো। অর্থাৎ অধিকারের প্রতিবেদনটি যে সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রনোদিত মিথ্যাচার সেটি সুদীর্ঘ আইনী লড়াইয়েই প্রমাণিত।
মজার ব্যাপার দেখেন, অধিকারের সভাপতি সি আর আবরার ও সম্পাদক আদিলুর রহমান দুইজনই বাগিয়ে নিয়েছে উপদেষ্টা পদ। এটা হলো তাদের দীর্ঘদিনের ষড়যন্ত্রমূলক কাজের পুরুষ্কার। আদিলুর রহমানের প্রতি একটা ওপেন চ্যালেঞ্জ থাকলো। রাষ্ট্রযন্ত্রের সকল উপকরণ তো এখন আপনাদের নিয়ন্ত্রণেই, এখন তাহলে ৬১ জন নিহতের তালিকাটা প্রকাশ করেন, পারলে তাদের পরিবারের সদস্যদের হাজির করেন। তাহলেই তো সব খোলাসা হয়ে যায়।

