এসকে সুর ও শাহ আলমের ব্যাংক হিসাব তলব
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমসহ পাঁচজনের ব্যাংক হিসাব তলব করা হয়েছে। এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা-সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স সেল (সিআইসি) থেকে ব্যাংকগুলোতে পাঠানো এক চিঠিতে সম্প্রতি এই হিসাব তলব করা হয়। দায়িত্বে থাকাকালীন এই প্রথম বাংলাদেশ ব্যাংকের বড় কোনো কর্মকর্তার হিসাব তলব করা হলো। ইতোমধ্যেই এসকে সুর ও শাহ আলমের দেশ ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিভিন্ন সংস্থা। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
এনবিআরের চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, এসকে সুর চৌধুরী, তার স্ত্রী সুপর্ণা চৌধুরী, শাহ আলম, তার দুই স্ত্রী – শাহিনা আক্তার শেলী ও নাসরিন বেগমের ব্যাংক হিসাব তিন কার্যদিবসের মধ্যে পাঠাতে হবে। সুনির্দিষ্টভাবে যেসব তথ্য পাঠাতে হবে, সেগুলো হচ্ছে – হিসাব খোলার ফর্ম, সর্বশেষ স্থিতি, লেনদেনের পরিমাণ এবং এফডিআরসহ হিসাবে মোট টাকার পরিমাণ।
প্রসঙ্গত, চলতি মাসের প্রথম দিকে কর্মকর্তাদের অনিয়ম-দুর্নীতি খতিয়ে দেখতে উচ্চ পর্যায়ের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সাম্প্রতিক সময়ে কয়েক কোটি টাকা ঘুষের বিনিময়ে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার লোপাটের তথ্য চাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরী, সাবেক মহাব্যবস্থাপক ও বর্তমান নির্বাহী পরিচালক মো. শাহ আলমসহ পাঁচ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সে বিষয় এবং নন-ব্যাংক আর্থিক খাতে বিভিন্ন সময় অনিয়মের সঙ্গে আরও যত কর্মকর্তা জড়িত থাকার অভিযোগ উঠেছে – সেসব বিষয় খতিয়ে দেখতে এই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি বুধবার বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘুষ নেওয়ার যে অভিযোগ উঠেছে, এর সত্যতা যাচাইয়ে ডেপুটি গভর্নর একেএম সাজেদুর রহমান খানের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে ঘুষ কেলেঙ্কারির অভিযোগ ওঠায় গত ৪ ফেব্র“য়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব থেকে নির্বাহী পরিচালক শাহ আলমকে সরিয়ে দেওয়া হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের (বিবি) সাবেক ডেপুটি গভর্নর এসকে সুরসহ পাঁচ কর্মকর্তা পিকে হালদারের সঙ্গে দুর্নীতিতে জড়িয়েছেন। অবৈধ সুবিধা দেওয়ার নামে হালদারের কাছ থেকে তারা ঘুষ নেন সাড়ে ৬ কোটি টাকা। জালজালিয়াতির তথ্য গোপন করে তারা পিকের পক্ষে নিরীক্ষা রিপোর্ট দেন। এদের কাঁধে ভর দিয়ে বছরের পর বছর আর্থিক খাতে জালিয়াতি, অনিয়ম-দুর্নীতি করে গেছে পিকে হালদারচক্র।
ঘুষের বিষয়টি নথিতে ‘কিছু ভিআইপির জন্য মূল্যবান গিফট ক্রয় করা হয়েছিল’ মর্মে উল্লেখ রয়েছে। এছাড়া অডিট প্রতিবেদনেও (হুদা ভাসি প্রতিবেদন) এর উল্লেখ আছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেফতার পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী গত সোমবার ঢাকার সিএমএম আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে এসব কথা তুলে ধরেন। এরপর পিকে হালদারের অনিয়ম-দুর্নীতির সাক্ষী উজ্জ্বল কুমার নন্দীকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে সোমবার আদালতে হাজির করেন অনুসন্ধান কর্মকর্তা দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান।
মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. আতিকুল ইসলাম পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দীর ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি গ্রহণ করেন। এর আগে আদালতে পিকে হালদারের অন্যতম সহযোগী ও ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) রাশেদুল হকের দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে উঠে আসে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য। ঢাকার সিএমএম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন রাশেদুল হকও।
এর আগে দুদক তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেয়। গত ২ ফেব্র“য়ারি রাশেদুল হক আদালতে দেওয়া জবানবন্দিতে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের সদ্য অবসরে যাওয়া ডেপুটি গভর্নর এসকে সুর চৌধুরীকে ‘ম্যানেজ’ করে পিকে হালদার অর্থ লোপাট করেছেন।
এছাড়া বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিআইএফএম’র (ডিপার্টমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যান্ড মার্কেটস) বিভাগের উচ্চ পর্যায়ের একজন কর্মকর্তাকে একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা করে দেওয়া হতো। এই টাকা প্রতিষ্ঠান থেকে ক্যাশ হিসাবে উত্তোলন করে ‘বিবিধ’ খরচ দেখানো হতো। যাতে ঘুষের টাকার কোনো প্রমাণ না থাকে।