দেশের বাজারে আর ৬২টি উজি বিক্রি হবে, এরপর আর না
আমদানি করা পয়েন্ট টু টু ক্যালিবারের উজি আগ্নেয়াস্ত্রগুলো বৈধ লাইসেন্সধারী ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে পারবেন আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীরা। গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ এ–সম্পর্কিত একটি নির্দেশনা জারি করেছে।
জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি) জি এস এম জাফরুল্লাহ প্রথম আলোকে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, বৈধ লাইসেন্সধারীদের কাছে বিক্রির অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে এর জন্য আগে অনুমতি নিতে হবে।
২৭ সেপ্টেম্বর জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে জারি হওয়া নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পয়েন্ট টু টু ক্যালিবারের উজি আগ্নেয়াস্ত্র বাংলাদেশে নতুন করে আমদানি নিষিদ্ধ করেছে সরকার। তবে ইতিমধ্যে আমদানি করা ১২১টি পয়েন্ট টু টু ক্যালিবারের উজি আগ্নেয়াস্ত্রের মধ্যে ৬২টি উজি রাইফেল এখনো বিক্রি হয়নি। জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে আগে অনুমতি নিয়ে বৈধ লাইসেন্সধারীদের কাছে এগুলো বিক্রি করা যাবে। এই অস্ত্র বিক্রির পর ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নজরদারি অব্যাহত রাখবে।
উজি হচ্ছে ওপেন বোল্ট ও ব্লোব্যাক পরিবারভুক্ত একটি অস্ত্র। এর ছোট আকৃতির সংস্করণগুলো ‘মেশিন পিস্তল’ নামে পরিচিত। এটি পিস্তলের মতো হাতের মুঠোয় স্থাপন করে ব্যবহার করা যায়। ইসরায়েলি সশস্ত্র বাহিনীতে কর্মরত মেজর উজিয়েল গাল ১৯৪০ সালের দিকে এর নকশা করেন। তাঁর নামানুসারে অস্ত্রটির নামকরণ হয় ‘উজি’। তুলনামূলকভাবে হালকা এবং প্রতি মিনিটে গুলির হার অনেক বেশি হওয়ায় অস্ত্রটি বেশি জনপ্রিয়।
সরকারের এ সিদ্ধান্তের কথা জননিরাপত্তা বিভাগ থেকে পুলিশ মহাপরিদর্শক, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক, প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর (ডিজিএফআই), জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর (এনএসআই), বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনী, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের মহাপরিচালক, সব বিভাগীয় কমিশনার, পুলিশের বিশেষ শাখা অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, সব রেঞ্জের উপপুলিশ মহাপরিদর্শক, সব জেলা ম্যাজিস্ট্রেট, পুলিশ সুপার, বাংলাদেশ আর্মস ডিলার্স অ্যান্ড ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদককে দেওয়া হয়েছে।বিজ্ঞাপন
গত বছরের ২০ আগস্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি) মোহাম্মদপুর থেকে মিনাল শরীফ নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। ওই সময় তাঁর বাসা থেকে লাইসেন্স করা উজি আগ্নেয়াস্ত্র জব্দ করা হয়। অস্ত্রটি উদ্ধারের পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়। তদন্তে পুলিশ জানতে পারে, ছয়টি অস্ত্র আমদানিকারী প্রতিষ্ঠান উজি আগ্নেয়াস্ত্র আমদানি করেছে। ২০১৫ সাল থেকে পয়েন্ট টু টু ক্যালিবারের ওই অস্ত্রগুলো আমদানি করা হয়।
তোলপাড়ের কারণ এই অস্ত্র সামরিক বাহিনী ব্যবহার করে, এবং এটি আধা স্বয়ংক্রিয় (সেমি অটোমেটিক) আগ্নেয়াস্ত্র। এর গায়ে পিস্তল লেখা হলেও এটি মূলত রাইফেল। এ ধরনের অস্ত্র বৈধ ভাবে এনে বিক্রি হচ্ছে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সেটি তখন পর্যন্ত জানা ছিল না।
ওই সময়ে প্রথম আলোয় এ নিয়ে একটি প্রতিবেদন ছাপা হয়। ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে অস্ত্র বিক্রির প্রতিষ্ঠান এমএইচ আর্মস কোম্পানির মালিক রাজধানীর পুরানা পল্টনের মোকারম হোসেন খানের কাছে নোটিশ পাঠানো হয়। এতে মোকারম হোসেন লিখিত বক্তব্য দেন। তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে উত্তরা ব্যাংকের রমনা শাখার মাধ্যমে তিনি এসব অস্ত্র আমদানি করেন। আমদানি করা পণ্য হিসেবে এসব অস্ত্র নিয়মিত শুল্ক পরিশোধ করে ঢাকার কাস্টম হাউস থেকে খালাস করে বিক্রির জন্য গুদামজাত করেন।
বুধবার রাতে মোকারম হোসেন খানের সঙ্গে কথা হয় প্রথম আলোর। তিনি বলেন, ‘আমরা আরও ছয় মাস আগেই অস্ত্রগুলো বিক্রির অনুমতি চেয়েছিলাম। প্রায় এক বছর নিবিড় তদন্তের পর অবশেষে সরকার এগুলো বিক্রির অনুমোদন দিয়েছে। কিন্তু লাইসেন্সধারী ক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হলে আবারও মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিয়েছে।’
এই আগ্নেয়াস্ত্র বিক্রেতা আরও বলেন, ২০১৬ সালে সরকার আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা প্রকাশ করে। ওই নীতিমালা অনুযায়ী পয়েন্ট টু টু ক্যালিবারের আগ্নেয়াস্ত্র বেসরকারি পর্যায়ে বিক্রি করায় কোনো বাধা নেই। এই অস্ত্রটির আবিষ্কারক ইসরায়েল হলেও, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এটি তৈরি করে। বাংলাদেশের আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবসায়ীরা এই অস্ত্র এনেছেন জার্মানির ওয়ালথার কোম্পানি থেকে। এর বাইরেও ইতালির বেরেটা এই অস্ত্র তৈরি করে থাকে।