ছাত্রলীগের বিরোধের মূলে চাঁদাবাজি
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের দুই পক্ষের বিরোধের মূলে রয়েছে হাসপাতাল এলাকায় ওষুধের দোকানে চাঁদাবাজি। এ ছাড়া রয়েছে হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে দালাল ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ। এ জন্য দুই পক্ষই ক্যাম্পাস ও ছাত্রাবাসে আধিপত্য বিস্তারে বারবার মারামারিতে জড়ায়। ছাত্রলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
চমেকে ছাত্রলীগের পক্ষ দুটির মধ্যে একটি সাবেক মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী। দেড় দশক ধরে ক্যাম্পাস নিয়ন্ত্রণ করে আসছে পক্ষটি। এর আগে ২০০৬ সাল পর্যন্ত ক্যাম্পাস ছিল বিএনপি-জামায়াতের নিয়ন্ত্রণে। তিন বছর ধরে নাছিরপন্থীদের বাইরে ছাত্রলীগের আরেকটি পক্ষ সক্রিয় হয়। ওই পক্ষটি শিক্ষা উপমন্ত্রী ও চমেক হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মহিবুল হাসান চৌধুরীর অনুসারী। এই দুই পক্ষ গত দুই বছরে ক্যাম্পাসে অন্তত চারবার সংঘর্ষে জড়িয়েছে। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ তোলে।
জানতে চাইলে মহিবুল হাসান চৌধুরী পক্ষের অনুসারী অভিজিৎ দাশ প্রথম আলোকে বলেন, অপর পক্ষ ওষুধের দোকানের দালাল চক্রকে পৃষ্ঠপোষকতা, ভাসমান দোকানে চাঁদাবাজি ও অ্যাম্বুলেন্স ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করে। দোকানমালিককে চাঁদার ভাগ দিতে হয় ছাত্রলীগের হাবিব-শিমুল পক্ষকে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আ জ ম নাছিরের অনুসারী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান ও সাধারণ সম্পাদক আল আমীন ওরফে শিমুলকে বারবার ফোন করা হলেও তাঁরা ফোন ধরেননি। পরে চমেক ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক প্রীতম সাহাকেও ফোন করা হয়। তিনিও ফোন ধরেননি।
এ বিষয়ে আ জ ম নাছির উদ্দীন মন্তব্য করতে রাজি হননি। অন্যদিকে শারীরিকভাবে অসুস্থ থাকায় মহিবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গেও কথা বলা সম্ভব হয়নি।
সর্বশেষ গত শুক্রবার চমেকের প্রধান ছাত্রাবাসে ছাত্রলীগের দুটি পক্ষের মধ্যে মারামারি হয়। এ সময় দুই ছাত্র আহত হন। এর জেরে পরদিন গত শনিবার সকালে ক্লাসে যাওয়ার সময় হামলা করা হয় অপর পক্ষের মাহাদি জে আকিবের ওপর। দ্বিতীয় বর্ষের এই ছাত্র বর্তমানে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসাধীন। ঘটনার পর কলেজ অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়। রাতের মধ্যে ছাত্রাবাস ছেড়ে যান শিক্ষার্থীরা। এ ঘটনায় কলেজ কর্তৃপক্ষ সার্জারি বিভাগের প্রধান মতিউর রহমান খানকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। কমিটি সাত দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেবে।
ছাত্রলীগের দুই পক্ষের মারামারির ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। শনিবার রাতে কলেজ ক্যাম্পাস থেকে তাঁদের গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁরা হলেন রক্তিম দে (২১) ও এনামুল হোসেন ওরফে সীমান্ত (২১)। দুজনই এমবিবিএস দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। দুজনই এজাহারভুক্ত আসামি। এ ঘটনায় বাদী হয়ে মামলা করেন আকিবের দূরসম্পর্কের ভাই ও চমেক শিক্ষার্থী তৌফিকুর রহমান। মামলায় ১৬ জনের নাম উল্লেখ করে আসামি করা হয়। গ্রেপ্তার দুজনকে পাঁচ দিনের রিমান্ডের আবেদন করা হয়েছে বলে জানান পাঁচলাইশ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সাদেকুর রহমান।
এদিকে আকিবের ওপর হামলাকারীদের বিচার দাবিতে চমেক সর্বস্তরের শিক্ষার্থীর ব্যানারে মানববন্ধন করেছে মহিবুলের অনুসারীরা। চমেক প্রধান ফটকের সামনে গতকাল দুপুরে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন ও সমাবেশ থেকে মাহাদির ওপর হামলার জন্য ছাত্রলীগের অপর পক্ষটিকে দায়ী করা হয়।