করোনাভাইরাসের নতুন রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সাথে মিশে গিয়ে নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন সৃষ্টি করলে বিপদের কারণ হতে পারে
করোনাভাইরাসের নতুন রূপান্তরিত ধরন ওমিক্রন ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সাথে মিশে গিয়ে নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট বা ধরন সৃষ্টি করলে বিপদের কারণ হতে পারে বলে মনে করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা: মো: নজরুল ইসলাম। গতকাল শনিবার তার সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি নয়া দিগন্তকে এই সাক্ষাৎকারটি দেন।
বলা হচ্ছে ওমিক্রন খুব মারাত্মক লক্ষণ প্রকাশ করে না। তাহলে এর জন্য কি খুব গুরুত্ব দেয়া উচিত?
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম : এখন পর্যন্ত ওমিক্রন সম্বন্ধে খুব বেশি কিছু আমরা জানি না। করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি সম্বন্ধে অবশ্যই আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। করোনার নতুন এই ধরনটিকে অবশ্যই ঠেকাতে হবে। বাংলাদেশে ভাইরাসটি যেন আসতে না পারে সেজন্য সম্ভাব্য সব রাস্তা বন্ধ করে দিতে হবে। করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটিতে মারাত্মক কোনো হুমকি না থাকলেও মানুষকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা আগের যেকোনো ভ্যারিয়েন্টের চেয়ে এর বেশি।
: ওমিক্রন নাকি সর্দি কাশির ভাইরাসের মতো শেষ পর্যন্ত দুর্বল হয়ে যাবে?
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম : হতে পারে, কিন্তু ওমিক্রন সম্বন্ধে চূড়ান্ত কথা বলার সময়তো এখনো আসেনি।
সর্দি-কাশির ভাইরাসও কি খুবই সাধারণ? সর্দি-কাশির ভাইরাসে বড়দের আক্রান্ত করলে প্যারাসিটামলে তিনি সুস্থ হয়ে যেতে পারেন; কিন্তু শিশুদের বেলায় তা হয় না। এই সর্দি-কাশির সাধারণ ভাইরাসই শিশুদের মৃত্যু ঘটাতে পারে। এই ভাইরাসটিতেই শিশুদের শেষ পর্যন্ত নিউমোনিয়া হয়ে থাকে এবং সময় মতো চিকিৎসা না হলে শিশুদের মৃত্যু পর্যন্ত হয়। সে কারণ ওমিক্রনকে সর্দি-কাশির ভাইরাসের মতো বলে এর প্রতি গুরুত্ব কমিয়ে দেয়া উচিত নয়। এই নতুন ভাইরাসটিকেও অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে যতক্ষণ না বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না দেয় যে, ‘ওমিক্রন খুবই সাধারণ একটি ভ্যারিয়েন্ট, একে গুরুত্ব দেয়ার প্রয়োজন নেই।’
ওমিক্রনে মানুষের অবস্থা যদি খুব খারাপ না হয়, এটা যদি সাধারণ মানুষ জেনে যায় তাহলে তারা নিজেরাই একে কম গুরুত্ব দেবে না?
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম : সাধারণ মানুষ জেনে গেলে হতে পারে। এটা ঠিক এখন পর্যন্ত ওমিক্রন সম্বন্ধে যেসব তথ্য এসেছে তার মধ্যে একটি হলো, ‘ওমিক্রন খুবই দ্রুত ছড়ায়। এটা আক্রান্তের দেহে মৃদু লক্ষণ প্রকাশ করে।’ কিন্তু এসব তথ্যই শেষ নয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কিংবা ওমিক্রন নিয়ে যেসব গবেষক গবেষণা করছেন তাদের গবেষণা শেষ হয়নি। তারা কিন্তু চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি। অতএব চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসা পর্যন্ত সবার অপেক্ষা করা উচিত।
ওমিক্রনের বিরুদ্ধে মানুষের দেহে কি প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে উঠবে?
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম : প্রচলিত যে টিকাগুলো আছে সেগুলো যে একেবারেই প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলবে না তা কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো গবেষক বলেননি। তা ছাড়া আমাদের দেহে কী ধরনের প্রতিরোধক্ষমতা রয়েছে আমরা তা জানি না। ওমিক্রনে আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হলে বুঝতে হবে দেহে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠেছে। তা ছাড়া যারা ডেল্টায় আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হয়েছেন তাদের দেহে যে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে ওঠে তাতেও কিছুটা কাজ দেবে বলে আমি মনে করি। কারণ ওমিক্রন ও ডেল্টাÑ দুটোই করোনাভাইরাসের ভ্যারিয়েন্ট।
প্রচলিত টিকা কি ওমিক্রনকে ঠেকাতে পারবে না?
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম : ওমিক্রন সম্বন্ধে গবেষণা শেষ হয়নি। যেহেতু দুটোই করোনাভাইরাস, সে কারণে কিছুটা সুরক্ষা দিতেই পারে প্রচলিত টিকাগুলো। তা ছাড়া ওমিক্রন আক্রান্ত করার পর মানুষের মধ্যে এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক্ষমতা গড়ে উঠতে পারে। আমাদের সামনে এ দিকটাও রয়েছে। কিন্তু যদি এটা ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের সাথে মিশে গিয়ে নতুন আরেকটি ভ্যারিয়েন্ট সৃষ্টি করে তাহলে বিপদ।
স্বাস্থ্যবিধি মানার ব্যাপারে আরো কঠোরতা অবলম্বন করা উচিত বলে আপনি মনে করেন?
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম : করোনা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।
ওমিক্রন অপেক্ষাকৃত কম মারাত্মক এসব কথা ভেবে স্বাস্থ্যবিধি মানা বন্ধ করে দিলে হবে না। সরকার থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মাস্ক পরা বন্ধ করতে না বলা পর্যন্ত আমাদের সবাইকে মাস্ক পরতে হবে। বাইরে থেকে ঘরে এলে অথবা মুখ স্পর্শ করার আগে হাত ধোয়া অথবা স্যানিটাইজার দিয়ে হাত জীবাণু মুক্ত করার স্বাস্থ্যবিধি অবশ্যই আমাদের মেনে চলতে হবে।