অপরাধী ইউনুস যখন ক্ষমতার মসনদে, বিচারের বাণী তখন ডুকরে কাঁদে
এম ডি আব্দুল ওয়াহিদ কিরন, যুক্তরাজ্য থেকে
আজ বাংলাদেশে এক দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি রাষ্ট্রক্ষমতায়। এখানে কোনও ‘যদি’, ‘কিন্তু’ বা ‘সম্ভবত’ নেই—এটা আদালতের রায়ে প্রমাণিত। ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে শ্রম আদালত ড. ইউনুস ও তার কয়েকজন সহযোগীকে ছয় মাসের সশ্রম কারাদণ্ড এবং পাঁচ হাজার টাকা করে জরিমানা করে। অভিযোগ ছিল, শ্রমিকদের ন্যায্য অংশ—লভ্যাংশ থেকে বঞ্চিত করা এবং শ্রম আইন লঙ্ঘন।
অনেকে এ রায়কে রাজনৈতিক প্রতিহিংসা মনে করে মন্তব্য করেছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, মামলাটি দায়ের হয়েছিল ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে—তিন বছর আগে। এ সময়ের মধ্যে মামলার সব শুনানি হয়েছে, ড. ইউনুসের আইনজীবীরা সর্বোচ্চ সুযোগ পেয়েছেন, বিচার প্রক্রিয়া ছিল স্বচ্ছ ও দীর্ঘ। প্রতিহিংসার প্রশ্ন যদি থেকেই থাকে, তাহলে মামলা তিন বছর ধরে টানিয়ে রাখার কোনও কারণ থাকতো না।
আরও বিস্ময়কর বিষয় হলো—ড. ইউনুস এই রায়কে ক্ষমতার চেয়ারে বসে বাতিল করিয়ে ফেলেছেন। এটি স্পষ্টতই আইনের শাসনকে পাশ কাটিয়ে ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি দৃষ্টান্ত।
দুর্নীতির মামলায় প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও বিচারের গতি থেমে গেছে
শুধু শ্রমিকদের অধিকারই নয়, ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে আরও গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ‘মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর অর্থ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে অর্থ পাচার এবং অনৈতিক লেনদেনের প্রমাণসহ মামলা হয়েছিল। যেখানে শ্রমিকদের আইনজীবী ও প্রতিনিধি গোষ্ঠীকে ২৫ কোটি টাকা ‘ম্যানেজ’ করার প্রমাণ ডকুমেন্টেড। একটি বিদেশি ব্যাংকে ৬ কোটি টাকার অস্বচ্ছ লেনদেনও এই মামলার অংশ। এসব অভিযোগ আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেও দুর্নীতির শীর্ষ উদাহরণ হতে পারত। কিন্তু ক্ষমতায় বসেই মামলাগুলো গায়েব করে দেওয়া হয়েছে।
কর ফাঁকি মামলার ইতিহাস: আট বছর ধরে চলা বিচার প্রক্রিয়া
২০১৫ সালে ড. ইউনুসের বিরুদ্ধে কর ফাঁকির অভিযোগে মামলা শুরু হয়। দীর্ঘ আট বছর শুনানি শেষে আপিল বিভাগ ২০২৩ সালে রায় দেন, এবং তাতে বাধ্য হয়ে তিনি ১২ কোটি টাকা পরিশোধ করেন। অথচ আজ, সেই ব্যক্তি ক্ষমতায় বসেই এক ঝটকায় ৬৬৬ কোটি টাকা কর মওকুফ করে দিয়েছেন—আইনের তোয়াক্কা না করেই।
প্রশ্ন শুধু একজন ব্যক্তির নয়, একটি রাষ্ট্রের নীতির
এখানে প্রশ্ন ড. ইউনুসের ব্যক্তি হিসেবে জনপ্রিয়তা বা আন্তর্জাতিক খ্যাতির নয়। প্রশ্ন হলো—একজন দণ্ডপ্রাপ্ত ব্যক্তি কীভাবে রাষ্ট্রক্ষমতায় বসেন এবং নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করেন? এমন নজির শুধু আইনের অপমানই নয়, দেশের সার্বিক নৈতিক অবস্থানকেও প্রশ্নবিদ্ধ করে।
বাংলাদেশের জনগণের উচিত এখনই প্রশ্ন তোলা—আমরা কীভাবে এমন এক ব্যবস্থাকে মেনে নিচ্ছি, যেখানে দণ্ডিত অপরাধীরা ক্ষমতার চূড়ায় বসে আইনের শাসনকে নিয়ন্ত্রণ করে?

