মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কে আসছে ফেনসিডিল

গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে খবর ছিল, চুয়াডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলে করে মাদক ব্যবসায়ীরা ফেনসিডিল নিয়ে ঢাকায় আসছে। তথ্য যাচাই করে চক্রের এক সদস্যকে চিহ্নিতও করা হয়। তাকে গ্রেপ্তারে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় ওতপেতে থাকে ডিবির দল। আগাম তথ্যে পাওয়া চুয়াডাঙ্গা-ল ১১-২৮২৩ নম্বরের মোটরসাইকেলটি চালকসহ আটকও করা হয়। কিন্তু তাতে কোনো মাদক পাওয়া যায় না! উল্টো চালক সিরাজুল ইসলাম তাকে হয়রানি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন। এতে অবাকও হয় অভিযানে থাকা ডিবির দলটি। শেষ পর্যন্ত মিস্ত্রি দিয়ে তার মোটরসাইকেলের জ্বালানি ট্যাঙ্ক খুলে বের করা হয় ৭০ বোতল ফেনসিডিল।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর যাত্রাবাড়ী এলাকা থেকে সিরাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে ডিবির গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। এরপর তাকে রিমান্ডে জিজ্ঞাসাবাদ করলে চুয়াডাঙ্গা টু ঢাকা রুটে মোটরসাইকেলে ফেনসিডিল পাচারের অভিনব তথ্য বেরিয়ে আসে। সিরাজুল ডিবির জিজ্ঞাসাবাদে বলেছে, শুধু সে একাই এতে জড়িত নয়। ১২টি মোটরসাইকেলে চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকায় পাচার করা হচ্ছে ফেনসিডিল। চুয়াডাঙ্গার দর্শনা সীমান্তের এক মাদক ব্যবসায়ী এসব দেখভাল করে। তার বেতনভুক্ত বাহকরা সপ্তাহে পাঁচ দিন মোটরসাইকেলের জ্বালানির বিশেষ ট্যাঙ্কে করে ঢাকায় ফেনসিডিল নিয়ে আসছে।
ডিবি কর্মকর্তারা বলছেন, নানা কৌশলে বিভিন্ন বাহনে ও পণ্যের ট্রাকে করে ফেনসিডিল পাচার হয়। এমনকি লাশবাহী অ্যাম্বুলেন্সও ফেনসিডিল পাওয়া গেছে। তবে সিরাজুলের ফেনসিডিল বহনের কৌশল এখন পর্যন্ত নতুন। নতুন এই পাচার চক্রটি মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্ক আলাদা করে এর ভেতর বিশেষ চেম্বার তৈরি করে। সেই চেম্বারে ফেনসিডিল ঢুকিয়ে তা বন্ধ করে বহন করা হয়। এতে মোটরসাইকেলটি তল্লাশি করে বাইরে থেকে কিছুই বোঝা যায় না, ট্যাঙ্ক খুললেও শুরুতে কিছু বোঝার সুযোগ থাকে না।
ডিবির গুলশান বিভাগের উপকমিশনার মশিউর রহমান সমকালকে বলেন, মাদক ব্যবসায়ীরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতে নানা সময়ে নানা কৌশল নিয়ে থাকে। একসঙ্গে বেশি ফেনসিডিল বহন করে গ্রেপ্তার হলে ক্ষতি বেশি হওয়ায় ফেনসিডিল ব্যবসায়ীরা এখন অল্প অল্প করে মাদক বহন করছে। ফেনসিডিল বহনকারী সিরাজুল চুয়াডাঙ্গা থেকে মোটরসাইকেলে ফেনসিডিল পাচারের প্রতি চালানে পাঁচ থেকে ছয় হাজার টাকা পেত। ওই চক্রের অন্য সদস্যদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ওই অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া ডিবির ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের এডিসি জুনায়েদ আলম সরকার সমকালকে বলেন, মোটরসাইকেলটির ট্যাঙ্ক খুলে মিস্ত্রির মাধ্যমে নিচের অংশটি আলাদা করা হয়। এরপর সেখানে আলাদা চেম্বার তৈরি করে ফেনসিডিল বহনের জন্য জায়গা করে চক্রের সদস্যরা। বোতল ঢোকানো যাবে- এমন জায়গা রেখে পুরোটা ঝালাই করে দেওয়া হয়। অন্য অংশে জ্বালানি ভরা হয়। চুয়াডাঙ্গা থেকে ঢাকায় আসতে ছয় থেকে সাত ঘণ্টা লাগে। জ্বালানি ট্যাঙ্কে আলাদা চেম্বার তৈরি করায় পথে কয়েক দফা জ্বালানি নিতে হয়। এভাবে সাত লিটার জ্বালানি খরচ করে মোটরসাইকেল চালকরা ঢাকায় পৌঁছে।
ডিবির এই কর্মকর্তা বলেন, অভিনব পদ্ধতিতে মোটরসাইকেলের ট্যাঙ্কে ফেনসিডিল পাচার চক্রের মূল হোতাকে চিহ্নিত করে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। এই ধরনের অন্য কোনো চক্র রয়েছে কিনা, তাও তদন্ত করা হচ্ছে।
গ্রেপ্তার সিরাজুল ডিবিকে বলেছে, দর্শনা থেকে প্রতি বোতল ফেনসিডিল তারা ৯০০ থেকে এক হাজার টাকায় কেনে। এগুলো ঢাকায় পাইকারি এক হাজার ৬০০ থেকে এক হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি করে। তবে খুচরা প্রতি বোতল ফেনসিডিল দুই হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *