প্রত্যাবাসন গতি নিয়ে শঙ্কা বিশ্লেষকদের
বৈদেশিক সম্পর্ক এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলেছেন, নিকটতম প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমারে শান্তি, স্থিতিশীলতা দেখতে চাই। আমরা দেশটির জনগণের ভোটাধিকারের যথাযথ মর্যাদা দেখতে চাই। তারা বলেন, বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া মিয়ানমার থেকে জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে কাজ চলছিল।
বেসামরিক সরকারের অংশগ্রহণ থাকায় এ নিয়ে প্রত্যাশা ছিল। সেনাবাহিনীর সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতা দখল করায় প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার গতি নিয়ে শঙ্কা তৈরি হতে পারে। পরিস্থিতির হয়তো উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হবে না। তবে আলোচনার অগ্রগতি আমরা প্রত্যাশা করি। পাশাপাশি আর কোনো রোহিঙ্গা নাগরিক যাতে বাংলাদেশে প্রবেশ করতে না পারে সে ব্যাপারে সতর্ক থাকা প্রয়োজন। সোমবার যুগান্তরকে দেওয়া তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তারা এসব কথা বলেন।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ শফিউল্লাহ বলেন, সেনাবাহিনী মিয়ানমারের রাষ্ট্রক্ষমতা নিয়েছে। এটা বাংলাদেশের জন্য খুব ভালো খবর নয়। আগামী এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এ সময়ে রোহিঙ্গা নিয়ে কোনো আলোচনাই হবে না। সেনাবাহিনীকে আন্তর্জাতিক চাপ সামলাতে হবে। অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও মোকাবিলা করতে হবে। এগুলো করতেই হিমশিম খাবে। সেনাবাহিনীর এই রাষ্ট্রক্ষমতা নেওয়াটা ভালো লক্ষণ নয়। তবে আমরা চাই পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে গণতন্ত্র বজায় থাকুক।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, আমাদের সঙ্গে রোহিঙ্গা নিয়ে যে সমস্যা সহসাই তার কোনো সমাধান হচ্ছে না। কারণ এই সেনাবাহিনীই তাদের মিয়ানমার থেকে ভাগিয়েছে। সেনাবাহিনীর কাছে রোহিঙ্গা কোনো ইস্যু নয়। তারা মনে করে রোহিঙ্গারা বহিরাগত। তাদের ভাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই তাদের কাছে আর কী আশা করা যায়।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব শমসের মবিন চৌধুরী যুগান্তরকে বলেন, মিয়ানমারে যে সামরিক অভ্যুত্থান হয়েছে ব্যক্তিগতভাবে আমি এর নিন্দা জানাই। এই সামরিক হস্তক্ষেপের কোনো যুক্তি ছিল না। যদিও তাদের সংবিধান সম্পূর্ণ নয়। এই সংবিধানে সামরিক হস্তক্ষেপের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। বিশ্বের আর কোনো সংবিধানে এমন কোনো ঘটনা নেই। এটা একটি অদ্ভুত সংবিধান।
আমার কাছে মনে হয়েছে, এখন হয়তো অং সান সু চি বিদেশি চাপে রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনে সাড়া দিতেন। হয়তো বলতেন কিছু লোক ফিরিয়ে আনি। এজন্যই হয়তো তাদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। কেননা রোহিঙ্গা নিধনের মূল হোতাই তো সেদেশের সেনাবাহিনী।
রাষ্ট্রের প্রধান চারটি বিভাগই এখন সেনাবাহিনীর হাতে। তাই আপাতত রোহিঙ্গা প্রত্যাবর্তনের কোনো সুযোগ দেখি না। তবে সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখলের পর বাংলাদেশ সরকার যে প্রতিক্রিয়া দিয়েছে সেটি আরও শক্ত ভাষায় হওয়া উচিত ছিল। রোহিঙ্গা নিয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন হবে না।
সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বলেছেন, এতদিনও সেনাবাহিনীই প্রকৃত অর্থে মিয়ানমারের ক্ষমতায় ছিল। সামনে ছিল একটা ‘মেকি সিভিলিয়ান’ সরকার। এখন সরিয়ে দিয়ে সরাসরি ক্ষমতা নিয়েছে। এতদিন সিভিল গভর্নমেন্ট দিয়ে কাজ করিয়েছে। এখন হয়তো হচ্ছে না।
তাদের মত অনুযায়ী হয়তো সবকিছু পাচ্ছে না। তাই সরানো হলো। তবে রোহিঙ্গা নিয়ে চিন্তার ক্ষেত্রে বড় কোনো পরিবর্তন আসবে না। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের যে সম্পর্ক সেটি সেনাবাহিনীই এতদিন নিয়ন্ত্রণ করত। এখনো করবে। তাই বড় কোনো পরিবর্তন হবে না।