হরতাল আহ্বান যৌক্তিক: মির্জা ফখরুল

নিজস্ব প্রতিবেদক

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

হেফাজতে ইসলামের শান্তিপূর্ণ মিছিলে হামলা ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে বিএনপি, ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল তিন দিনের পৃথক কর্মসূচি দিয়েছে। ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আগামীকাল রোববার সারা দেশে বিক্ষোভ করবে। পরদিন ২৯ মার্চ ঢাকাসহ সব মহানগরে বিক্ষোভ সমাবেশ এবং ৩০ মার্চ সব জেলা সদরে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে বিএনপি।

আজ শনিবার বিকেলে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই কর্মসূচি ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘যেকোনো শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের গণতান্ত্রিক অধিকার অস্বীকার করাটাই অগণতান্ত্রিক। আমরা আজ যে প্রতিবাদগুলো করতে যাচ্ছি, সেটা হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে।’

হেফাজতে ইসলামের ডাকা রোববারের হরতালে বিএনপির সমর্থন থাকবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা কিন্তু যেটা প্রতিবাদ করছি, বিক্ষোভ মিছিল করছি তা হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের দিনে মানুষকে হত্যা করার জন্য। খুব সুনির্দিষ্ট করে বলছি যে প্রতিটি সংগঠনের প্রত্যেকটি নাগরিকের অধিকার আছে যেকোনো বিষয়ে প্রতিবাদ করার বা তার মত প্রকাশ করার। সেই মত প্রকাশ করার ক্ষেত্রে যখন গুলি করা হয়েছে, আমরা সেটার প্রতিবাদ করছি। আমরা সেটার বিরুদ্ধে কর্মসূচি ঘোষণা করছি।

বিএনপির মহাসচিব বলেন, এখানে একটা জিনিস মনে রাখতে হবে যে প্রত্যেকটি নাগরিকের কিন্তু ন্যায়সংগত সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে ভিন্নমত পোষণ করার। সেখানে তারা যদি কোনো কর্মসূচি দেয় বা হরতালের আহ্বান করে, সেটা যৌক্তিক তো বটেই, একই সঙ্গে সরকার যদি তা প্রতিহত করার অগণতান্ত্রিক হুমকি দেয়, সেটা একেবারে হঠকারী ব্যবস্থা। সরকারের কাছ থেকে এ ধরনের কথা আসতে পারে না। এ জন্য এখানে যদি কোনো অবাঞ্চিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, তার সব দায়দায়িত্ব সরকারকেই বহন করতে হবে।

২৬ মার্চ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর দিনে প্রতিবাদী মিছিলে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায় বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, গতকাল স্বাধীনতার ৫০ বছর পূরণের দিন। সমগ্র দেশের মানুষ যখন স্বাধীনতাযুদ্ধের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছে এবং এই ৫০ বছরে তারা কী অর্জন করেছে, বিষয়টি নিয়ে যখন ভাবছিল, ​ঠিক সেই সময়ে একটি সংগঠনের শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের নির্বিচার গুলিবর্ষণ, লাঠিপেটা এবং একই সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা–কর্মীদের আক্রমণে বায়তুল মোকাররম, চট্টগ্রাম ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় যে রক্ত ঝরেছে, এটা নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এই স্বাধীনতার দিনে মানুষকে হত্যা করা ইতিহাসে আর কখনো ঘটেনি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম জানান, শান্তিপূর্ণ মিছিলে পাঁচজনকে হত্যার ঘটনায় জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দল আজ সারা দেশে প্রতিবাদ মিছিল করেছে। এসব মিছিলে গাজীপুর, হবিগঞ্জ, মানিকগঞ্জে, ফরিদপুর, নারায়ণগঞ্জে পুলিশ পেছন থেকে লাঠিপেটা করে বহু নেতা-কর্মীকে আহত করেছে এবং গ্রেপ্তার করেছে। এ ছাড়া জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে ভাসানী অনুসারী পরিষদের মিছিল থেকে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে হবিগঞ্জে মনজুরুল কিবরিয়া, আদনান ফারহাদ, গাজীপুরে শামীম মিসির, মাসুদ মোল্লা, বেলায়েত হোসেন, মানিকগঞ্জের রাকিব হোসেন, ফরিদপুরে ইলিয়াস হোসেন, মুরাদ আহমেদ, হেমায়েত উল্লাহসহ বিভিন্ন স্থানে নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তারের নিন্দা জানিয়ে অবিলম্বে তাঁদের মুক্তির দাবি করেন তিনি। হবিগঞ্জে পুলিশি হামলায় গুলিবিদ্ধ জহিরুল হকসহ বিভিন্ন স্থানে আহত হওয়ার ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল।

এর আগে বেলা তিনটায় দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল বৈঠক হয়। বৈঠকে দলের মহাসচিব ছাড়াও স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন, জমির উদ্দিন সরকার, মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী ও ইকবাল হাসান মাহমুদ উপস্থিত ছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *