সালথার ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় আ.লীগ নেতারা, ৫ মামলায় ১৭ হাজার আসামি

প্রতিনিধি

ফরিদপুরের সালথায় তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ির গ্যারেজ থেকে তোলা ছবি

ফরিদপুরের সালথায় তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত বিভিন্ন স্থাপনা পরিদর্শন করেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সালথা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়ির গ্যারেজ থেকে তোলা ছবি আলীমুজ্জামান

ফরিদপুরের সালথা উপজেলায় গত সোমবার রাতের সহিংস তাণ্ডবে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা আজ বৃহস্পতিবার পরিদর্শনে গেছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা। ওই দিন মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ও বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালে হামলা, ইউএনওর বাড়িতে হামলা করে গ্যারেজে আগুন দেওয়া, সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়ে ও গাড়িতে হামলা-অগ্নিসংযোগের ঘটনায় আরও চারটি মামলা হয়েছে। আগের মামলাসহ মোট পাঁচ মামলায় ১৭ হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে। পুলিশ আজ বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ঘটনার সঙ্গে জড়িত অভিযোগে মোট ২৬ জনকে গ্রেপ্তার করেছে।

আওয়ামী লীগের ছয়জন কেন্দ্রীয় নেতা সহিংসতায় বিধ্বস্ত সালথা উপজেলা আজ পরিদর্শনে যান। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নেতারা এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠকে বসেন। ওই সময় জেলা প্রশাসক অতুল সরকার, পুলিশ সুপার মো. আলিমুজ্জামান, ইউএনও হাসিব সরকার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) মারুফা সুলতানা খান উপস্থিত ছিলেন।

যাঁরা এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত এবং যাঁরা ইন্ধন দিয়ে পেছনে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন, তাঁরা যে দলেরই নেতা হোন বা যত বড় হুজুরই হোন; কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না

সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ

পরে বেলা দেড়টার দিকে নেতারা উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক সমাবেশে বক্তব্য দেন। ওই সভায় বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাংসদ লে. কর্নেল (অব.) মুহাম্মদ ফারুক খান, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সাংসদ বাহাউদ্দিন নাছিম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ এবং আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মীর্জা আজম।

সাংসদ মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, সোমবার রাতে সালথা উপজেলায় যাঁরা রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস ও জ্বালাও-পোড়াও করেছেন, তাঁদের প্রত্যেককে খুঁজে খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনা হবে। একজনও রেহাই পাবেন না। যাঁরা এ ঘটনায় সরাসরি জড়িত এবং যাঁরা ইন্ধন দিয়ে পেছনে থেকে কলকাঠি নেড়েছেন, তাঁরা যে দলেরই নেতা হোন বা যত বড় হুজুরই হোন; কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। যাঁরা এ ঘটনা ঘটিয়েছেন তাঁরা আইনের দৃষ্টিতে সন্ত্রাসী, নাশকতা সৃষ্টিকারী, তাঁদের প্রত্যেককে আইনের আওতায় এনে কঠোর শাস্তি দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হবে, রাষ্ট্রের শক্তির কাছে কোনো শক্তি খাটে না।

যে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে, তাতে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৬১ জনের। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ জনকে।

সালথার সহিংস ঘটনায় নতুন করে আরও চারটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে পুলিশের করা মামলাসহ মোট মামলার সংখ্যা পাঁচ। যে নতুন চারটি মামলা হয়েছে, তার একটি করেছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মাতুব্বর। এ মামলায় ২৫ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং অজ্ঞাতনামা আরও ৭০০ থেকে ৮০০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আরেকটি মামলা করেছেন ইউএনওর গাড়িচালক মো. হাশমত আলী। তিনি ৫৮ জনের নাম উল্লেখ করেছেন এবং ৩ থেকে ৪ হাজার অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। আরেকটি মামলা করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) কার্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী সমীর বিশ্বাস। এ মামলায় ৪৮ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে এবং ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। অপর মামলাটি করেছেন উপজেলা সহকারী কমিশনারের (ভূমি) গাড়িচালক মো. সাগর সিকদার। এ মামলায় ৪২ জনের নাম উল্লেখ করে ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার উপপরিদর্শক মুহাম্মদ মিজানুর রহমান বাদী হয়ে ৮৮ জনের নাম উল্লেখ করে এবং ৩ থেকে ৪ হাজার ব্যক্তিকে অজ্ঞাতনামা দেখিয়ে থানায় হামলা ও সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে প্রথম মামলাটি করেন। এ পর্যন্ত যে পাঁচটি মামলা করা হয়েছে, তাতে নাম উল্লেখ করা হয়েছে ২৬১ জনের। অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে ১৬ হাজার ৮০০ জনকে।

ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও তদন্ত) জামাল পাশা বলেন, সালথায় সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে আরও ১৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ নিয়ে গ্রেপ্তারের সংখ্যা দাঁড়াল ২৬। এর মধ্যে ১১ জনকে গতকাল বুধবার ১০ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে সোপর্দ করা হলে আদালত প্রত্যেকের দুই দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন। আজ বাকি ১৫ জনকে সাত দিন করে রিমান্ড চেয়ে জেলার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতে সোপর্দ করা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *