বিশ্ব মাতবে ইউরোর আনন্দে

আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইউরো ২০২০।

আজ থেকে শুরু হচ্ছে ইউরো ২০২০।ছবি: এএফপি

বিশ্ব মাতবে ইউরোর আনন্দে

২০১৮ বিশ্বকাপ যেন এখন দূর অতীতের স্মৃতি!

ফুটবলে বিশ্বশ্রেষ্ঠত্বের প্রশ্নে এই ধরাধামকে বুঁদ করে রাখা টুর্নামেন্টটার বছর তিনেকই হলো। কিন্তু করোনাভাইরাস এসে গত দেড় বছরে বিশ্বকে এমন নাজেহাল করে দিয়েছে যে তিন বছরই যেন অনন্তকাল! এর মধ্যে ক্লাব ফুটবল কোনো রকমে চলেছে বটে। চ্যাম্পিয়নস লিগ হয়েছে, ইউরোপের লিগগুলোর কিছু গত মৌসুমে বাতিল হয়ে গেলেও এবার সব কটিই শেষ হতে পেরেছে। অনেক নাটকও দেখেছে লিগগুলো। কিন্তু জাতিতে জাতিতে ফুটবল–শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই, এক মাস ধরে ফুটবল উন্মাদনা, শত হিসাব-নিকাশ আর জল্পনা-কল্পনা—আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের মজা লিগ-চ্যাম্পিয়নস লিগে কোথায়!

তিন বছর পর ইউরোপ মোহিত হতে যাচ্ছে সে বিনোদনে।

ইতালি–তুরস্ক ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে ইউরো
ইতালি–তুরস্ক ম্যাচ দিয়ে মাঠে গড়াবে ইউরো

আনন্দযজ্ঞে বাধো বাধো ভাব আছে বটে। ১১ ভেন্যুতে দর্শক থাকবে, তবে দর্শকের সংখ্যায় বিধিনিষেধ আছে। করোনার সময় বলে কথা! হাঙ্গেরির বুদাপেস্টেই শুধু গ্যালারির শতভাগে দর্শক থাকার অনুমতি মিলেছে। বাকি ১০ ভেন্যুতে দর্শক কোথাও অর্ধেক, কোথাও চার ভাগের এক ভাগ। জার্মানির মিউনিখে সবচেয়ে কম, ২২ শতাংশের কাছাকাছি। কিন্তু যত শতাংশই হোক, দর্শক ফিরছে তো! করোনাকালে শূন্য ভুতুড়ে গ্যালারিতে ফুটবল দেখতে দেখতে বিরক্ত মনের জন্য এ-ই অনেক।

রোমের স্তাদিও অলিম্পিকোতে আজ যখন ইতালি আর তুরস্কের ম্যাচ দিয়ে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায় বাজবে ইউরোর বাঁশি, ইউরোপ ছাপিয়ে বিশ্ব মেতে উঠবে ফুটবলানন্দে। এত দিন পর বড় টুর্নামেন্টের স্বাদ মিলছে বলে! করোনা গত বছর এই স্বাদ পেতে দেয়নি, কিন্তু সেটা নিয়ে তো এখন আর আক্ষেপ করে লাভ নেই। প্রকৃতির খেয়াল বরং এই যে, যে ইতালি থেকে গত বছরের শুরুর দিকে ইউরোপে করোনা ভয়াল থাবা বসিয়েছিল, সেই ইতালির রোমেই শুরু হচ্ছে ইউরোপের ফুটবলের ‘গ্ল্যাডিয়েটর’দের লড়াই।

এক মাস ধরে, ১১ ভেন্যুতে, ৫১ ম্যাচজুড়ে ২৪ দলের এই লড়াইয়ের শেষে ইংল্যান্ডের ফুটবল–তীর্থ ওয়েম্বলির মঞ্চ বিজয়মাল্য পরাবে কার গলায়?

ঘুরেফিরে পুরোনো নামগুলোই থাকছে আলোচনায়। বর্তমান ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল এবার আসছে তর্ক সাপেক্ষে তাদের ইতিহাসের সবচেয়ে প্রতিভাবান দল নিয়ে। যে দলে ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো নামের এক সর্বজয়ীও আছেন। বর্তমান বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্স আছে, এমবাপ্পে-গ্রিজমানদের পাশে ছয় বছর পর করিম বেনজেমাকেও ফিরিয়ে তারা ২০১৮ বিশ্বকাপের চেয়েও শক্তিশালী। এই দুই দলের সঙ্গে জার্মানি মিলিয়ে গ্রুপ ‘এফ’ হয়ে আছে মৃত্যুকূপ।

এর বাইরে চোখ ফেরাবেন? রবার্তো মানচিনির অধীনে সর্বশেষ ৮ ম্যাচে জয়সহ টানা ২৭ ম্যাচে অপরাজিত ইতালি দলে বড় তারকা তেমন নেই, কিন্তু মানচিনির ছোঁয়ায় দারুণ গোছানো ফুটবলে দাপুটে দলটা। নিঃসন্দেহে এবারের ইউরোর ‘ডার্ক হর্স’ ইতালি। ২০১৮ বিশ্বকাপে জায়গা করে নিতে না পারা আজ্জুরিরা এবার ইউরোতে নীলকে আনন্দের রং করে নিলে অবাক হবেন না যেন!

র‍্যাঙ্কিংয়ের বিচারে সময়ের সেরা বেলজিয়ামকে ডি ব্রুইনা-হ্যাজার্ডদের সোনালি প্রজন্ম শেষ পর্যন্ত কোনো শিরোপা দিয়ে যেতে পারে কি না, গত ইউরো-বিশ্বকাপের মতো সে আলোচনাও আছে। স্পেন-হল্যান্ডের মতো পরাশক্তি থাকবে, গত বিশ্বকাপের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকেও উড়িয়ে দেওয়া যায় না। আর ইংল্যান্ডকে না রেখে তো ফেবারিটের তালিকাই হয় না! বেশির ভাগ সময়ই সেটা ইংলিশ মিডিয়ার জোরে, এবার গ্যারেথ সাউথগেটের অধীনে দারুণ-তরুণ ফুটবলারদের একটা প্রজন্মও আছে। ৫৫ বছর ধরে প্রতি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টে ‘ফুটবল কামিং হোম’ আওয়াজ তুলে গলা শুকিয়ে ফেলা ইংলিশদের এবার শ্যাম্পেন উৎসবে গলা ভেজানোর পালা?

ভবিষ্যদ্বাণী করে কে ঝামেলায় পড়তে চায়!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *