সরকার ‘ডিপেন্ডেন্সি সিনড্রোমে’ ভুগছে: জাফরুল্লাহ

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দিচ্ছেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। 

সরকারের ভুল নীতির কারণে চিকিৎসাব্যবস্থা পর্যুদস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, সরকারের ভুল নীতির কারণে দেশে মৃত্যুহার বেড়েছে। সরকার ভুল পথে হাঁটছে, সংশোধন করছে না।
রাজধানীর ধানমন্ডির গণস্বাস্থ্য নগর হাসপাতালের বীর উত্তম মেজর এ টি এম হায়দার মিলনায়তনে আজ রোববার বেলা পৌনে দুইটার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন জাফরুল্লাহ চৌধুরী। ‘করোনা মোকাবিলা, শ্রমিকদের হয়রানি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধসহ সার্বিক পরিস্থিতি বিষয়ে জরুরি’ এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সরকার ‘ডিপেন্ডেন্সি সিনড্রোমে’ ভুগছে মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘দেশে ক্যাপাসিটি আমরা বাড়াতে চাই না। আমরা আমদানি করতে চাই। ভারতপ্রীতি, ভারত ডিপেন্ডেন্সি বাড়াতে চাই। ২০০ টন অক্সিজেন এসেছে। এটাকে ডিপেন্ডেন্সি সিনড্রোম

সভাপতির বক্তব্যে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, টিকার বিষয়ে সরকার সত্য প্রকাশ করছে না। কত টিকা আছে, কত ডলার দিয়ে করোনার টিকা কিনেছে, সরকার বলছে না। রাশিয়ার সরকার আট ডলারে টিকা দিতে চেয়েছে। স্বাস্থ্যব্যবস্থা একেবারেই ভেঙে পড়েছে।

এই সরকারের কোনোরকম জবাবদিহি নেই উল্লেখ করে জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘সরকারের উচিত সত্য কথা বলা শেখা। আর কত দিন পালাগান গাইবে? অন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে ছোট করা ছাড়া সরকারের আর কোনো কাজ আছে বলে মনে হয় না। সরকার আজ যা বলছে, কাল তা মানছে না। সরকার লকডাউন দিয়েছে, নিজেই তা মানছে না।’

‘এই সরকারের কাছে আমরা নিরাপদ নই’ বলে মন্তব্য করেছেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। তিনি বলেন, এই সরকারের উদ্দেশ্য মানুষকে কষ্ট দেওয়া। এতে তাদের কিছু যায়–আসে না। মানুষকে বাঁচানোর চেয়ে আর বড় কোনো উন্নয়ন নেই।

মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘গত ১৬ মাসে দেশের চিকিৎসাব্যবস্থা উন্নত করার কোনো ব্যবস্থাই করতে পারেনি সরকার। হাসপাতালগুলোতে আইসিইউ নেই, কিছু নেই। এদিকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলছেন, পৃথিবীতে সবাই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ দেয়, আপনারা তো আমাকে ধন্যবাদ দেন না। কত বড় স্টুপিড। এখন পর্যন্ত ১৭ জেলায় কোনো হাই ফ্লো নাজাল ক্যানুলা নেই।’

একদিকে সরকার বলছে কারখানা খুলবে, যোগ না দিলে চাকরি যাবে না, আরেক দিকে মালিকপক্ষ বলছে, কাল কাজে যোগ দিতে হবে, নইলে চাকরি থাকবে না। এমন তুঘলকি কাণ্ড চলছে গতকাল থেকে। কোনো দায়িত্বশীল সরকার এমন করতে পারে না।

কল্যাণ পার্টির সভাপতি মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ মুহাম্মদ ইব্রাহিম বলেন, সরকারের অদূরদর্শিতা, জনগণের প্রতি তুচ্ছতাচ্ছিল্য মনোভাব ও সরকারের বাণিজ্যিক স্বার্থের কারণে জনজীবন বিপর্যস্ত। সরকার শিক্ষাব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে চাইছে। এ জাতিকে মেধাহীন করতে চাইছে সরকার।

লিখিত বক্তব্য পাঠকালে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘দেশে নিম্ন আয়ের মানুষের জীবনে নাভিশ্বাস পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। শ্রমিকদের প্রতি সরকার এবং মালিকপক্ষের আচরণে আমরা স্তম্ভিত। পোশাক কারখানার শ্রমিকদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দিয়ে স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করা উচিত।’

জোনায়েদ সাকি বলেন, জনগণের ভোট ছাড়া আমলানির্ভর এই সরকার যে জনগণ এবং বিশেষভাবে শ্রমিকদের প্রতি কী পরিমাণ দায়িত্বহীন, শ্রমিকদের এরা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে, তার আরেক বিভৎস দৃশ্য ঘটেছে গতকাল।

সরকারের কাজের সমন্বয় নেই উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সাবেক ভিপি নুরুল হক বলেন, পোশাকশিল্প খোলা, শ্রমিকদের ঢাকায় আনার বিষয়ে সরকারের কোনো পরিকল্পনা ছিল না। রাস্তায় হেঁটে, ট্রাকে-পিকআপে ঝুলে বিভিন্নভাবে ভোগান্তিতে পড়ে শ্রমিকেরা আসছেন। যখন এগুলো নিয়ে তীব্র প্রতিবাদ হচ্ছে, তখনই গণপরিবহন চালুর সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। এটা স্পষ্ট বার্তা সমন্বয়হীনতার। তিনি বলেন, গত বছরের শুরু থেকে লকডাউন দেওয়া, শ্রমিকদের আনা–নেওয়া, থাকা, এ পর্যন্ত পাঁচবার এমন সমন্বয়হীন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এর খেসারত জনগণকে দিতে হয়েছে, এখনো দিচ্ছেন।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, ৬ আগস্ট বেলা তিনটায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক নাগরিক সমাবেশ ও পদযাত্রা অনুষ্ঠিত হবে। এ কর্মসূচি থেকে সবার কাছে খাদ্য পৌঁছানো, শ্রমিকদের-শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়া, স্বাস্থ্যব্যবস্থায় ঘাটতি পূরণ করা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আদালত ও গণপরিবহন খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *