আফগানিস্তানের বিপর্যয় এড়াতে জি-২০ নেতাদের অঙ্গীকার

যুদ্ধপরবর্তী আফগানিস্তানকে চরম অর্থনৈতিক সঙ্কট, মানবিক বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা থেকে বাঁচানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন উন্নত দেশগুলোর জোট জি-২০-এর নেতারা।

তবে দেশটিতে তারা সাহায্য পৌঁছাতে চান আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে।

আফগান অর্থনীতি রক্ষায় শত কোটি ডলারের সাহায্য দিতে জাতিসঙ্ঘের আহ্বানের পর বিশ্বনেতারা মঙ্গলবার একটি ভার্চুয়াল সম্মেলনে মিলিত হন।

এতে জার্মানির চ্যান্সেলর অ্যাঞ্জেলা মার্কেল বলেছেন, দেশটিকে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়তে দেয়া ঠিক হবে না।

প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন জোর দিয়ে বলেছেন, সেখানে যেসব সাহায্য দেয়া হবে, তা দিতে হবে স্বাধীন আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মাধ্যমে, সরাসরি তালেবানের হাতে নয়।

সম্প্রতি আন্তর্জাতিক সেবা সংস্থাগুলোর আফগানিস্তানে বড় ধরনের মানবিক বিপর্যয়ের আশঙ্কা প্রকাশের মধ্যে এ ধরনের অঙ্গীকার ব্যক্ত করলেন জি-২০ নেতারা।

গত মধ্য আগস্টে তালেবানের ক্ষমতা নেয়ার পর ইতোমধ্যে কয়েক মিলিয়ন ডলারের জরুরি খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা এসেছে আফগানিস্তানে।

নতুন প্রতিশ্রুতির মধ্যে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডের লেয়েন বলেছেন, আফগানিস্তান ও প্রতিবেশী যেসব দেশ শরণার্থীদের গ্রহণ করছে, তাদের জন্য এক শ’ বিলিয়ন ডলার সহায়তা দেয়া হবে।

চ্যান্সেলর মার্কেল গত মাসের নির্বাচনে অংশ নেননি, ফলে নতুন সরকার গঠিত হওয়ার পর তাকে সরে যেতে হবে। কিন্তু তিনি আফগানিস্তানের জন্য ৬০০ মিলিয়ন ইউরো সহায়তা দেয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

সাংবাদিকদের তিনি বলেছেন, ‘পুরো আফগানিস্তানের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়লে তাতে আমাদের কারও কোনো উপকার নেই।’

‘দেশটি বিপর্যয়ের মুখোমুখী হয়ে পড়লে তখন আর মানবিক সহায়তাও দেয়া যাবে না। কিন্তু চার কোটি মানুষ যদি অর্থনীতি ভেঙ্গে পড়ার কারণে চরম বিশৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে, সেটা তো আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের লক্ষ্য হতে পারে না,’ বলেছেন মার্কেল।

জাতিসঙ্ঘের সহায়তা দেয়া সব প্রতিষ্ঠানে তালেবানের অংশগ্রহণ থাকা উচিত বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

মার্কেল জোর দিয়ে এটাও বলেছেন যে, এক্ষেত্রে মেয়ে ও নারীদের অধিকারের বিষয়েও সম্মান দিতে হবে।

ভার্চুয়াল সম্মেলনটির আয়োজক ইতালির প্রধানমন্ত্রী মারিও দ্রাঘিও মার্কেলের বক্তব্যের সাথে একমত পোষণ করেছেন।

তিনি বলেছেন, তালেবানের সাথে জি-২০ দেশগুলোর যোগাযোগ করতে হবে। কিন্তু এর মানে এটা ইসলামপন্থী তালেবান সরকারকে স্বীকৃতি দেয়া নয়।

তবে জি-২০ দেশগুলোর সব শীর্ষনেতা এ ভার্চুয়াল সম্মেলনে উপস্থিত হননি। তা সত্ত্বেও বৈঠকে অংশ নেয়া সব সদস্যই আরো বেশি সহায়তা দিতে সম্মত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন ইতালির প্রধানমন্ত্রী দ্রাঘি।

চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন তাদের প্রতিনিধি ।

আফগানিস্তান যাতে আল-কায়েদা বা ইসলামিক স্টেট-এর মতো উগ্রবাদী গোষ্ঠীর স্বর্গরাজ্যে পরিণত না হয়, সেটা নিশ্চিত করার ব্যাপারেও আলোচনা করেছেন বিশ্বনেতারা। এছাড়া বিদেশি নাগরিক ও দেশ ছাড়তে আগ্রহী আফগানদের বিষয়েও আলোচনা করেছেন তারা।

শীর্ষনেতাদের এই বৈঠক এমন সময়ে হলো যখন দাতব্য সহায়তা, সন্ত্রাস প্রতিরোধ ও আফগানিস্তান থেকে বিদেশিদের সরিয়ে আনার বিষয়ে কাতারে আলোচনায় বসেছেন পশ্চিমা ও আফগান কর্মকর্তারা।

আফগানিস্তান থেকে বিদেশী সেনা প্রত্যাহার ও তালেবানের ক্ষমতা নেয়ার পর এই প্রথম দু’পক্ষের সরাসরি আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *