ভাড়া বাড়িতে রাবি শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু
রিক্তা আক্তার নামের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এক শিক্ষার্থীর রহস্যজনক মৃত্যু হয়েছে। এ ঘটনায় করা হত্যা মামলায় গতকাল শনিবার বিকেলে রিক্তার স্বামী রাবি শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ ইসতিয়াককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। রিক্তা আক্তার এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার জোতপাড়া গ্রামে।
গ্রেপ্তার আব্দুল্লাহ ইসতিয়াককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ইসতিয়াক বিশ্ববিদ্যালয়ের ফলিত গণিত বিভাগের একই শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামে। তাঁরা দুজন ভাড়া বাসায় থাকতেন।
গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশের ধরমপুর এলাকার একটি ভাড়া বাসা থেকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় রিক্তাকে তাঁর স্বামী ও বন্ধুরা রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
রিক্তার ভাই এনামুল হক বলেন, ‘আমার বোন ওই ছেলেকে ভালোবাসত। সে পরিবারকে জানায়, ওই ছেলের সঙ্গে তার বিয়ে দিতে হবে। অন্য কোথাও সে বিয়ে করবে না। আমরা তার সুখের কথা ভেবে ওই ছেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হই। কিন্তু বিয়ের পর ছেলের বাড়ি থেকে কখনো আমার বোনের খোঁজখবর নেওয়া হয়নি। বিয়ের পর ওরা কুষ্টিয়া সরকারি কলেজে ভর্তি হয়। পরে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয় দুজন। ’
এনামুল হক আরো জানান, রাজশাহী আসার পর থেকে তাঁর বোনকে খুব মারধর করতেন ইসতিয়াক। তিন-চার মাস আগেও তাঁকে মারধরের কথা জানিয়েছেন রিক্তা। রিক্তার শরীরে মারধরের অনেক চিহ্ন রয়েছে। এটা আত্মহত্যা নয়, এটা হত্যা।
রিক্তার বাবা লিয়াকত জোয়ারদার বলেন, ‘আমি কৃষক মানুষ। অনেক কষ্টে জীবন যাপন করি। আমার আদরের মেয়েকে অনেক কষ্টে রাজশাহীতে পড়তে পাঠিয়েছি। কিন্তু আজ তার লাশ নিয়ে যেতে হচ্ছে। আমার মেয়ের হত্যাকারীর সর্বোচ্চ শাস্তি চাই। ’
রিক্তার সহপাঠী আহসান হাবীব আদনান বলেন, ‘ঘটনাটি জানার পর রাত পৌনে ৩টার দিকে বিভাগীয় সভাপতির সঙ্গে আমরা ১৫-১৬ জন সহপাঠী রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল গিয়েছিলাম। এ সময় তাঁর সামনেই পুলিশ রিক্তার স্বামীসহ কয়েকজনকে থানায় নিয়ে যায়। রিক্তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসছিল তার স্বামী ও তার বন্ধুরা। ’
আইন বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক হাসিবুল আলম প্রধান বলেন, ‘শুক্রবার রাতেই ঘটনা শোনামাত্র আমি হাসপাতালে উপস্থিত হই। মেয়েটির পরিবার এসেছে। তাঁরা মতিহার থানায় রয়েছেন। আমরা বিভাগ থেকে এই ঘটনার তদন্তের দাবি জানাচ্ছি। ’
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নুর বলেন, ‘আমি রাতে হাসপাতালে গিয়ে ওই ছাত্রীর লাশ মর্গে পড়ে থাকতে দেখি। পরে আমরা তার মৃত্যুর রিপোর্ট পাই। রিপোর্টে হাসপাতালে আনার আগে মারা গেছে বলে জানানো হয়। পরে মতিহার থানার ওসি এসে তার স্বামীকে থানায় নিয়ে যায়। ’
গতকাল বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে রিক্তার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য গোলাম সাব্বির সাত্তার, উপ-উপাচার্য সুলতান-উল-ইসলাম, প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক, রিক্তার বাবা, ভাই, দুলাভাইসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক-শিক্ষার্থী উপস্থিত ছিলেন। এ সময় উপাচার্য বলেন, ‘আমরা রিক্তার বাবার করা হত্যা মামলার আইনি প্রক্রিয়ায় তাঁর পরিবারকে সহায়তা করব। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট দেখে আমরা ছেলেটার ছাত্রত্ব সাময়িকভাবে বাতিল করব। ’
মতিহার থানার ওসি আনোয়ার আলী তুহিন বলেন, ‘ওই শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার বিষয়টি আমাদের কাছে রহস্যজনক মনে হয়েছে। মরদেহ তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রিক্তার বাবা বাদী হয়ে থানায় একটি এজাহার দাখিল করেছেন। এজাহারে রিক্তার বাবা তাঁর মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছেন। এরপর ৩০২ ধারায় আমরা একটি হত্যা মামলা রুজু করেছি। রিক্তার স্বামীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট হাতে পেতে কিছুটা সময় লাগবে। এরপর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ’