পিকে হালদারের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ

প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা পাচারের অভিযোগ নিয়ে বিদেশে পালিয়ে থাকা এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংক ও রিলায়েন্স ফাইন্যান্স লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রশান্ত কুমার হালদার ওরফে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে রেড নোটিশ জারি করেছে ইন্টারপোল। বাংলাদেশ পুলিশের ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরো (এনসিবি) অর্থাৎ ইন্টারপোলের ঢাকা শাখার অনুরোধে এ নোটিশ জারি করা হয়।

পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (গণমাধ্যম ও জনসংযোগ) সোহেল রানা জানান, বাংলাদেশ পুলিশের ইন্টারপোল শাখা যথাযথ প্রক্রিয়া মেনে প্রয়োজনীয় সব নথিপত্রসহ ইন্টারপোল সদরদপ্তরে আবেদনটি পাঠায়। ইন্টারপোলের একটি বিশেষ কমিটি আবেদন ও এর সঙ্গে সংযুক্ত ডকুমেন্টস ও কাগজপত্র পর্যালোচনা করে এটি অনুমোদন করে। ইন্টারপোলের কেন্দ্রীয় ওয়েবসাইটে প্রকাশের পাশাপাশি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ইন্টারপোলের শাখাগুলোতেও পাঠানো হয়েছে এই রেড নোটিশ। এটি আগামী পাঁচ বছরের জন্য জারি থাকবে। তবে প্রয়োজনে আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মেয়াদ নবায়ন হতে পারে।

পুলিশ সদরদপ্তর জানায়, রেড নোটিশে পিকে হালদারের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনের  দায়ের করা মামলায় দুদক আইন ২০০৪ এর ২১(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।

এর আগে গত ৫ জানুয়ারি পিকে হালদারের মা লীলাবতী হালদারসহ ২৫ জনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন হাইকোর্ট। তাদের বিদেশ যাওয়া ঠেকাতেও ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এর পাশাপাশি তদন্তের প্রয়োজনে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন অনুসারে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করতে পারবে বলেও জানানো হয়েছে।

পিকে হালদারের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি নানা কৌশলে নামে-বেনামে অসংখ্য কোম্পানি খুলে শেয়ারবাজার থেকে বিপুল পরিমাণ শেয়ার কেনেন এবং ২০১৪ সালের নির্বাচনের আগে-পরে আত্মীয়, বন্ধু ও সাবেক সহকর্মীসহ বিভিন্ন ব্যক্তিকে পর্ষদে বসিয়ে অন্তত চারটি ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ন্ত্রণ নেন।

ওই চার প্রতিষ্ঠান হলো- ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস (আইএলএফএসএল), পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানি (বিআইএফসি)। এসব কোম্পানি থেকে তিনি ঋণের নামে বিপুল অংকের টাকা সরিয়ে বিদেশে পাচার করেছেন বলে তদন্ত সংশ্নিষ্টরা জানিয়েছেন। এরমধ্যে আইএলএফএসএল গ্রাহকদের অভিযোগের মুখে গত বছরের শুরুতে পিকে হালদারের বিদেশ পালানোর পর দুদক তার ৩০০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের তথ্য দিয়ে মামলা করে।

এদিকে পিকে হালদার গত ২৮ জুন আইএলএফএসএলের বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালকের কাছে তার দেশে ফেরার জন্য ব্যবস্থা নিতে আবেদন করেন। আদালত তাতে অনুমতি দিলেও পিকে হালদার না ফেরায় ইন্টারপোলের মাধ্যমে তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির অনুরোধ জানানো হয়।

ঢাকার জজ আদালত এরইমধ্যে পিকে হালদারের সব স্থাবর সম্পত্তি ক্রোক করারও আদেশ দিয়েছেন। আর পলাতক অবস্থায় তার বক্তব্য বা সাক্ষাৎকার গণমাধ্যমে প্রচারের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকোর্ট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *