দেশ যেভাবে চলছে
এম ডি মহিউদ্দিন মাসুদ, যুক্তরাজ্য থেকে
সাংবাদিক কাজল আজকে মুক্তি পেলেন। প্রায় ৯ মাস আগে কাজল সাহেবের অফিসের সামনে তাঁর মটর সাইকেলে কয়েকজন অচেনা ব্যক্তি ট্র্যাকিং ডিভাইস বসায় (যেইটা আমরা সিসিটিভি ফুটেজে দেখেছিলাম)। এই যে কয়েকজন অচেনা ব্যাক্তি দুইটা শব্দ বললাম, সেইটা বললাম মূলত ভয়ে।যদি সাহস থাকতো তাহলে বুক ফুলিয়ে বলতে পারতাম কাজটা করেছে খোদ আইন শৃংখলা বাহিনীর কতিপয় সদস্য। যদি সাহস থাকতো, তাহলে এও বলতে পারতাম এই পুরো ঘটনার পেছনে ঠিক কোন দুইজন ব্যাক্তির নাম উঠে এসেছে বার বার।যেহেতু সাহস কম তাই ‘মাননীয়’ সাংসদ অপু উকিল আর সাইফুজ্জামান শেখরের নাম অনলাইনে বার বার আসলেও আমরা এসব বলতে পারিনি বা পারিনা। কারন হচ্ছে প্রমাণ নাই। সুতরাং সে কারনেই বলতে হয় অচেনা ব্যাক্তি, কে বা কাহারা, অজ্ঞাতনাম ইত্যাদি শব্দ-টব্দ।
কাজলের গাড়িতে ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগিয়ে তাকে ট্রেস করা, ভারতের সীমান্তে নিয়ে যাওয়া, সেখান থেকে নিজ দেশেই কাজলের অবৈধ প্রবেশের নাটিকা সাজানো এসব আমার কিংবা আপনার মত ছাপোষা কেউ করতে পারবে না। যারা করতে পারে তাদের আপনি চেনেন, আমিও চিনি কিন্তু বলতে পারিনা।কিছু মানুষের ব্যাক্তিগত গ্যাঞ্জাম-ব্যাক্তিগত ক্ষোভ এইসবে রাষ্ট্রের মূল নীতি নির্ধারকেরা আমলে নেন নাই। সুনির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে কাজলের ব্যাপারটা রাষ্ট্রতো পাত্তাই দেয় নাই। কাজলের শক্তি নাই, ক্ষমতা নাই, অর্থ নাই। ফলে পাত্তার ব্যাপারও নাই।ব্যাপারটা যে শেখ হাসিনা জানেন না কিংবা তাঁর সভাসদেরা জানেন না, তাতো না। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর কাছে কি এই ফাইলটা যায় নাই? তিনি জানেন না? অবশ্যই জানেন। এই যে কাজল এখন মুক্তি পেলো, এইটাও কি কি আর বিচারপতিরা আইনের বই দেখে করেছেন? আপনি কি তাই মনে করেন? আইনের বই-টই এই মামলার ম্যাজিস্ট্রেট বা হাকিম সাহেব পড়লে তো জামিন বহু আগেই হয়।
আলোচ্য ব্যাক্তিদের হয়ত আলাদা ভাষ্য রয়েছে। তাঁরা হয়ত মনে করেন যে তাঁরা ক্ষতিগ্রস্থ, ফলে মামলা তাঁরা করতেই পারেন। কিন্তু প্রশ্ন তো আসলে মামলায় না। প্রশ্ন হচ্ছে পুরো প্রক্রিয়ায়।কাজলের নামে যদি দেশের আইন মেনে মামলা হয় তাহলে বলার তো নাই কিছুই কিন্তু মুশকিল হচ্ছে রাষ্ট্র একজনের সাথে একেক আচরণ করে।একজন মানুষ যার মটর সাইকেলে ট্র্যাকিং ডিভাইস লাগানো হলো, যাকে পাওয়া গেলো ভারত সীমান্তে, তার ক্ষেত্রে রাষ্ট্র শুরতেই কি করতে পারতো কিংবা কি করলে আদর্শ স্টেপ হতে পারতো?কাজলের গাড়িতে যারা ট্র্যাকার বসালো, যারা উঠিয়ে নিয়ে গেলো তাদের খুঁজে বের করা। কারা কাজলকে ভারত থেকে বাংলাদেশে ঢুকার গল্প সাজালো তাদের খুঁজে বের করা।কিন্তু সেসব না করে হলো কি? হলো হচ্ছে কাজলকে ৯ মাস জেলে পুরে রাখা হোলো। ২১ বার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করা হোলো।শেখ হাসিনা দুই সাংসদকে ডেকে ক্ল্যারিফিকেশন চাইতে পারতেন। তিনি জানতে চাইতে পারতেন এই পুরো ঘটনায় আওয়ামীলীগ দলটা কিংবা রাষ্ট্রের উপর যেই দাগ লেগেছে সেটা কি করে তারা ঠিক করবে? করেছে কি? না, করে নাই।রাষ্ট্র এসবের কিছুই করে নাই। বসে বসে তামাশা দেখেছে।
কিন্তু এই পুরো ঘটনায় সারা বিশ্ব কিন্তু মাইক্রোস্কোপ লাগিয়ে বসে ছিলো। ইংল্যান্ডের বিখ্যাত পত্রিকা গার্ডিয়ান রিপোর্ট করেছে এটি নিয়ে। পশ্চিম পুরো ব্যাপারটা মনোযোগ দিয়ে দেখেছে। এই যে আমরা রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি-ভাবমূর্তি করি, এই ভাবমূর্তি ঠিক এইভাবে শেষ হয়। হাজারটা পদ্মা সেতু করে উচ্ছাস প্রকাশ করা যায়, হাজারটা মাওয়া সড়ক করে উচ্ছাসিত হওয়া যায়। হাজার উন্নয়নের নজির দেখিয়ে গর্বও করা যায়। কিন্তু, দেশে আইনের শাসন, মানবাধিকার না থাকলে শেষ পর্যন্ত ভেতরটা শূন্য-ই থেকে যায়। পি কে হালদার ১০ হাজার কোটি টাকা মেরে দেশে পালিয়ে যায় কিভাবে? টাকা কি হালদার একা খেয়েছে বলে আপনি মনে করেন?রণ শিকদাররা কিভাবে ব্যাংক ম্যানেজারকে গুলি করে দেশের বাইরে পালিয়ে যেতে পারে? হাজার কোটি টাকা দূর্নীতি করেই বা কিভাবে দরবেশ বাবা প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা হয়? আমি কিংবা আমরা ‘মন্দের ভালো’ নামের একটা সমীকরণে এই সরকারকে সঠিক মনে করে ডিফেন্ড করি।
মৌলবাদের আশংকা, জঙ্গীদের আশংকা, ডানপন্থীদের উত্থান প্রশ্নে, মুক্তিযুদ্ধ কিংবা বঙ্গবন্ধু প্রশ্নে আমরা বার বার আওয়ামীলীগ সরকারকে শত শত ছাড় দিয়ে ফিরি।কিন্তু দিনের শেষে আমার শূন্যতা টা তো আমি টের পাই। দিনের শেষে তো আমি বুঝি উন্নয়নের সাথে সাথে লুটপাট আর দূর্নীতিটা ঠিক কোথায় গিয়ে পৌঁছেছে?একদিকে উন্নয়ন আর অন্যদিকে যখন আইনের শাসন, দূর্নীতি, লুটপাটকে মেলাতে যাই তখন এই সরকারের আর আস্থা থাকেনা।