এক সাবান বিক্রি ৫ লাখ টাকায়!

দলে সদস্য সংখ্যা চার থেকে পাঁচজন। লেখাপড়া না জানা বোকাসোকা মানুষের বেশে তারা বিভিন্ন সড়কে ঘুরে বেড়ায়। এই ভেক ধরেই তারা কোনো একজনকে টার্গেট করে। কথায় কথায় সেই ব্যক্তিকে লোভের ফাঁদে ফেলা হয়। এরপর বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা দেওয়ার নামে তার কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয় পাঁচ লাখ টাকা। বিনিময়ে মুদ্রার বান্ডিল হিসেবে যে পুঁটলি দেওয়া হয়, সেটি খুলে তিনি পান খবরের কাগজে মোড়ানো একটি সাধারণ সাবান! পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে সাবান কেনার বিষয়টি যখন তিনি বুঝতে পারেন, ততক্ষণে প্রতারকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

দিনের পর দিন এমন প্রতারণা চালিয়ে আসছে কিছু চক্র। তেমনই এক চক্রের দুই সদস্যকে সম্প্রতি সৌদি আরবের মুদ্রা রিয়ালসহ গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। তারা হলো- আজাদুর রহমান মাফুজ ও জাহাঙ্গীর আলম। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে তারা জানিয়েছে, অন্তত পাঁচ বছর ধরে তারা এভাবে মানুষকে ঠকিয়ে আসছে। তাদের কাছ থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ৫০০ রিয়াল, সাবান, কাগজ ও গামছা জব্দ করা হয়।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) ওয়েব বেজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিমের দলনেতা অতিরিক্ত উপকমিশনার আশরাফউল্লাহ সমকালকে বলেন, সর্বশেষ কুমিল্লার এক ব্যক্তিসহ বেশ কয়েকজন এই চক্রের মাধ্যমে প্রতারিত হয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এর ভিত্তিতেই অনুসন্ধানের একপর্যায়ে চক্রের দু’জনকে শনাক্ত করা হয়। রাজধানীর নীলক্ষেতের গিয়াস উদ্দিন আবাসিক এলাকা থেকে ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তারের সময়ও তারা টার্গেট ব্যক্তিকে ফাঁদে ফেলার চেষ্টা করছিল। চক্রের পলাতক দুই সদস্যের নাম-ঠিকানাও জানা গেছে।

প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে ডিবি কর্মকর্তারা জানান, প্রথমে চক্রের একজন সহজ-সরল মানুষ সেজে টার্গেট ব্যক্তির কাছে গিয়ে দুই-তিনটি রিয়াল দেখায়। সেগুলোর দাম কত, কোথায় গেলে রিয়ালের বিনিময়ে টাকা পাওয়া যাবে কিছুই জানা নেই বলে সাহায্য চায়। পাশাপাশি রিয়ালের বিনিময়ে পাওয়া টাকার অর্ধেক তাকে দেওয়ারও প্রস্তাব দেয়। এতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আগ্রহী হলে চক্রের সদস্য জানায়, তার কাছে এমন অনেক রিয়াল আছে। সেগুলো অল্প দামে বিক্রি করতে চায়। প্রথম দফায় সত্যিই কিছু রিয়াল ভাঙিয়ে পাওয়া টাকার অর্ধেক টার্গেট ব্যক্তিকে দিয়ে তার আস্থা অর্জন করে। পরের ধাপে চক্রের অপর সদস্যরাও এর সঙ্গে যুক্ত হয়।

তারা জানায়, মানি এক্সচেঞ্জের ঝামেলায় না গিয়ে তারা বিপুল পরিমাণ রিয়াল হস্তান্তর করবে। এক রিয়াল ভাঙালে ২০ টাকার বেশি পাওয়া যায়, তবে তারা গড়ে পাঁচ টাকায় সেগুলো দিয়ে দেবে। এরপর রিয়াল হস্তান্তরের আগেই তারা ওই ব্যক্তির কাছ থেকে নগদ পাঁচ-ছয় লাখ টাকা নেয়। শেষ মুহূর্তে অবৈধভাবে পাওয়া রিয়াল গোপনে হাতবদলের কথা বলে তড়িঘড়ি করে গামছায় মোড়া পুঁটলি দিয়ে তারা চলে যায়। নিজের বাসা বা নিরাপদ কোনো স্থানে গিয়ে কথিত রিয়ালের বান্ডিল খুলতে গিয়ে প্রকৃত ঘটনা বুঝতে পারেন প্রতারিত ব্যক্তি। কারণ গামছার ভেতর টাকার বান্ডিলসদৃশ বস্তুটি আসলে খবরের কাগজে মোড়ানো সাবান। শুধু তার ওপর-নিচে দুটি রিয়াল লাগানো।

ডিবি সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার আজাদুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলমের বাড়ি গোপালগঞ্জের খুনশি এলাকায়। তাদের বিরুদ্ধে আগের অন্তত তিনটি মামলা রয়েছে। এ ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে আরেকটি মামলা হয়েছে। চক্রের পলাতক সদস্য সুজন ও একরামের বাড়িও গোপালগঞ্জে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *