ওসি মোয়াজ্জেমেরও শাস্তি হওয়া উচিত ছিল: সালমা আলী

ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার মামলায় অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাসহ ১৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আলোচিত এ হত্যা মামলার রায় নিয়ে সমকালের সঙ্গে কথা বলেছেন মানবাধিকার কর্মী ও আইনজীবী সালমা আলী

মাত্র ৬১ কার্যদিবসের মধ্যে নুসরাত হত্যা মামলার রায় ঘোষণা সত্যিই যুগান্তকারী একটি পদক্ষেপ। এর তদন্তও শেষ হয়েছে মাত্র ৩৩ কার্যদিবসে। এটা এতটাই স্পর্শকাতর মামলা ছিল যেখানে ভিকটিম, সাক্ষীদের নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত ছিল। কিন্তু পুরো মামলাটাই খুব ইতিবাচকভাবে সম্পন্ন হয়েছে। 

এটি নিঃসন্দেহে একটি যুগান্তকারী রায়। গোটা দেশের মানুষ এ রায়ের জন্য অপেক্ষা করেছে। নুসরাত যখন অত্যাচারের শিকার হয়েছে তখন সে প্রশাসন, নিজের প্রতিষ্ঠান, সমাজের কারও কাছ থেকে সাহায্য পায়নি। কিন্তু তার হত্যার ঘটনায় প্রতিটি ক্ষেত্রে সে নিজেই সাক্ষ্য রেখে গেছে। এ হত্যা মামলার প্রতিটি অপরাধী সমান অপরাধী। কেউ পার পাওয়ার মতো নয়। একজন কেরোসিন তেল নিয়ে এসেছে, একজন গায়ে আগুন দিয়েছে, আরেকজন চেপে ধরেছে। কী নৃশংস, ভয়াবহ ব্যাপার। আদালত এখানে আবেগপ্রবণ হয়ে কোনো সিদ্ধান্ত নেয়নি। সাক্ষী-প্রমাণ সবকিছুই এখানে আয়নার মতো পরিষ্কার। 

ওসি মোয়াজ্জেমেরও এ মামলায় অবশ্যই শাস্তি হওয়া উচিত ছিল। তার নাম না থাকলে অন্তর্ভুক্ত করা উচিত। একটা থানা কিন্তু গল্পকে ঘুরিয়ে দিতে পারে। কিন্তু গল্প ঘোরানোর দরকার ছিল না। নুসরাতের সঙ্গে যা ঘটেছে সেটা প্রতিরোধে ওসি যদি সময় মতো পদক্ষেপ নিতেন তাহলে হয়তো এ ঘটনা ঘটতো না। তা না করে তিনি উল্টো নুসরাতকে হয়রানি করেছেন। তার আচরণ আসামিদের উৎসাহিত করেছে। সুতরাং, ফাঁসি বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড না হলেও তার বড় ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত। কোনোভাবেই তাকে ছাড় দেওয়া যাবে না। 

নিম্ন আদালতের এ রায় যাতে উচ্চ আদালতেও বহাল থাকে সেটাই দাবি করবো। অল্প সময়ের মধ্যে যাতে আসামিদের ফাঁসির আদেশ কার্যকর করা হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। দেশে-বিদেশে এ রায় ফলাও করে প্রচার করতে হবে, যাতে আর কোনো নারী এমন ঘটনার শিকার না হয়। 

আমার মতে, নুসরাতের নামে সরকারের পক্ষ থেকে একটা পদক চালু করা উচিত। সমাজে প্রতিবাদী, সাহসী নারীদের এ পুরস্কার দেওয়া হবে। তাদেরকে অনুপ্রেরণা দেবে এ পুরস্কার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *