নির্ধারিত দরের প্রভাব নেই আলুর বাজারে
আলুর অস্বাভাবিক দাম নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা করে দর পুনর্নির্ধারণ করা হয়েছে। কিন্তু সবার ঐকমত্যে দাম নির্ধারণ হলেও গতকাল বুধবার রাজধানীর বাজারে সেই দরে আলু বিক্রি হয়নি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, আগে তারা বেশি দামে কেনা আলু বিক্রি শেষ করবেন, এরপর নির্ধারিত নতুন দরের আলু বিক্রি শুরু করবেন।
হিমাগার মালিকরাও জানাচ্ছেন, হিমাগারে সংরক্ষণ করা আলু বের করে রাখার এক দিন পর বিক্রি করা হয়। এ কারণে কম দামে হিমাগারের আলু বিক্রি শুরু হবে আজ থেকে।
এদিকে নির্ধারিত দরে আলু বিক্রি না হওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। গতকাল বুধবার এগ্রিকালচার রিপোর্টার্স ফোরাম (এআরএফ) আয়োজিত এক ওয়েবিনারে যোগ দিয়ে তিনি বলেন, ‘বাস্তবতা বিবেচনা করে আলুর দাম আরও পাঁচ টাকা বাড়িয়ে ৩৫ টাকা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ৫০ থেকে ৫৫ টাকা- এটা কোনোক্রমেই গ্রহণযোগ্য নয়।’
তবে রাজধানীর বাজারে গতকাল বুধবারও প্রতি কেজি আলু বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫০ টাকায়। যদিও খুচরায় প্রতি কেজি আলু ৩৫ টাকা দরে বিক্রির জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর। সংস্থাটি আলুর দর পাইকারিতে ৩০ টাকা ও হিমাগার থেকে ২৭ টাকা কেজি নির্ধারণ করে দিয়েছে। কিন্তু নির্ধারিত ওই দরে হিমাগার থেকে এখন পর্যন্ত আলু বিক্রি করা হচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীরা। তারা বলেন, কম দামে আলু পেলে তারাও কম দামে বিক্রি করবেন।
এর আগে বাজারে আলুর দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ায় গত ৭ অক্টোবর কৃষি বিপণন অধিদপ্তর কোল্ড স্টোরেজ পর্যায়ে প্রতি কেজি আলুর দাম ২৩ টাকা, পাইকারিতে ২৫ টাকা এবং খুচরায় ৩০ টাকা নির্ধারণ করে দিয়েছিল। যদিও সেই দামে কেউ আলু বিক্রি করেনি। এখন নতুন দর বেঁধে দিয়ে সেই দামে সব পর্যায়ে আলু বিক্রি নিশ্চিত করতে জেলা প্রশাসকদের অনুরোধ করেছে কৃষি বিপণন অধিদপ্তর।
এমন প্রেক্ষাপটে এআরএফের ওয়েবিনারে ব্যবসায়ীদের উদ্দেশে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘মুনাফা করেন, ?মুনাফা করার জন্যই ব্যবসা করছেন; কিন্তু রাতারাতি বড়লোক হওয়ার চিন্তা করবেন না। মানুষের প্রতি কর্তব্যবোধ থেকে আপনাদের প্রতি বিনীত অনুরোধ, আপনারা সরকারের নির্ধারিত দামে আলু বিক্রি করুন।’ তিনি এ সময় জানান, করোনাভাইরাস মহামারিতে হতদরিদ্র মানুষ ও রোহিঙ্গাদের জন্য বরাদ্দ করা ত্রাণে বিপুল পরিমাণ আলু বিতরণ করায় ও বন্যার কারণে বীজতলা নষ্ট হয়ে যাওয়ায় আলু উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে।
বাংলাদেশ কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোশাররফ হোসেন সমকালকে বলেন, হিমাগার থেকে আলু এখন বাজারে আসছে। সরকার নির্ধারিত ২৭ টাকা কেজিতে বুধবার থেকে বিক্রি শুরু হয়েছে। দু-এক দিনের মধ্যে বাজারে এর প্রভাব পড়বে। তবে কেউ নির্ধারিত দরে বিক্রি না করলে অ্যাসোসিয়েশন তাদের দায় নেবে না। সরকার তাদের বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেবে।
হিমাগার মালিক মো. নুরুল ইসলাম বলেন, গত মঙ্গলবার দর নির্ধারণ হয়েছে। হিমাগারের আলু বের করার এক দিন পর বেচাকেনা হয়। এ কারণে ওই দিন থেকে কার্যকর হয়নি। এখন হিমাগার থেকে আড়তে কম দামের আলু বিক্রি হবে। শিগগিরই বাজারে কম দামের আলু বিক্রি শুরু হবে।
২৫ টাকা কেজিতে টিসিবির আলু বিক্রি শুরু :এদিকে গতকাল বুধবার থেকে ২৫ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি শুরু করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। সংস্থাটির ট্রাক থেকে একজন ক্রেতা দুই কেজি আলু কেনার সুযোগ পাচ্ছেন। টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ুন কবির বলেন, রাজধানীর ৮০টি পয়েন্টে আলু বিক্রি হচ্ছে। প্রত্যেক ট্রাকে ৩০০ কেজি করে আলু বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।