বিশাল বাজেটের লঙ্কা সফর

শ্রীলঙ্কা সফর সাধারণ ক্রিকেটীয় সফরের চেয়েও বেশি কিছু। করোনাকালে তিন টেস্টের সিরিজ হয়ে উঠবে অভিজ্ঞতা অর্জনের মঞ্চ। ক্রিকেটার, ‘সাপোর্ট স্টাফ’ এবং সর্বোপরি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) জন্যও চড়া দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে অভিজ্ঞতা নামক এ আলোকবর্তিকা। এই সফরকে কেন্দ্র করে বিশাল ব্যয় নির্বাহ করতে হবে বিসিবিকে। ক্রিকেটাররা এখন এর মূল্য বুঝলে হয়।

ঢাকা কলম্বো মিলে যে লম্বা সময় ক্যাম্প ও খেলার জন্য দিতে হবে, তাকে ‘বিরক্তিকর’ আখ্যা দিয়ে পুরো দলের ভেতরে অস্বস্তি বাড়ালে ক্ষতি ছাড়া মঙ্গল হবে না। পেশাদার ক্রিকেটারদের এরকম কঠিন পরিস্থিতিকে মানিয়ে নিতে হবে বর্তমান বাস্তবতায়। যেমন মানিয়ে নিয়েছেন ইংল্যান্ডের ক্রিকেটাররা। কোয়ারেন্টাইন ও খেলা মিলে টানা চার মাস ধরে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন জো রুটরা।

মহামারিকালে তাদের খেলার সুযোগ করে দিতে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডকে (ইসিবি) ব্যয়ও করতে হচ্ছে বিশাল অর্থ। দেশের ক্রিকেটের স্বার্থে বিসিবিকেও লঙ্কা সফরকে কেন্দ্র করে গুনতে হবে মোটা অঙ্কের টাকা। চার-পাঁচ কোটি টাকা লেগে যেতে পারে সফরের ব্যয় নির্বাহ করতে।

২৩ অথবা ২৪ সেপ্টেম্বর তিন টেস্ট খেলার জন্য কলম্বো রওয়ানা হতে পারে টাইগাররা। তার আগে দেশে সংক্ষিপ্ত ক্যাম্প আয়োজনের জন্য ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের কভিড টেস্ট করতে হবে তিন দফায়। আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) গাইড লাইনে অনুসরণ করলে মাঠকর্মীদেরও কভিড টেস্ট করার প্রয়োজন হবে। ‘বায়ো সিকিউরিটি’ প্রক্রিয়া অনুসরণ করেই সফলভাবে সিরিজ আয়োজন করতে সক্ষম হয়েছে ইসিবি। ক্রিকেটার এবং কোচিং স্টাফকে রাখতে হবে আবাসিক হোটেলে। চার্টার্ড প্লেনে যেতে হতে পারে কলম্বো। সেক্ষেত্রে লেগে যাবে দেড় কোটি টাকার মতো।

কলম্বোয় পৌঁছে কভিড টেস্ট করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। সিরিজ শুরুর আগেও করতে হতে পারে কভিড টেস্ট। লঙ্কা সফরে জাতীয় দলের সঙ্গে এইচপি স্কোয়াডও যাবে। ৬৫ থেকে ৭০ জনের সফরটি ব্যয়বহুল। শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট বোর্ডের (এসএলসি) সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী ২১ দিনের ক্যাম্পের পুরো খরচ বিসিবির। কলম্বোর পাঁচতারকা হোটেলের রুম ভাড়া দিনে ১৫০ ডলার। ৭০ জনের জন্য সিঙ্গেল রুমের প্রতিদিন ভাড়া গুনতে হতে পারে ১০ হাজার ৫০০ ইউএস ডলার। ২১ দিনে মোট রুমভাড়া দুই লাখ ২০ হাজার ৫০০ ডলার। টাকার হিসাবে যা এক কোটি ৮৩ লাখ।

ক্রিকেটার ও সাপোর্ট স্টাফদের দৈনিক খরচ, স্থানীয় যাতায়াত ছাড়াও মাঠের পেছনেও খরচ করতে হবে। বোঝাই যাচ্ছে, ৪৫ দিনের সফরের খরচের যোগফল দাঁড়াতে পারে চার থেকে পাঁচ কোটি টাকা। বিসিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এমন ধারণাই পাওয়া গেছে। তবে বিসিবি চেষ্টা করবে খরচ কমের ভেতরে রাখার।

তিনটি টেস্ট ম্যাচ খেলার জন্য এত খরচ করার যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। বাস্তবতা হলো, করোনাকালীন সময়ে এমন একটা সিরিজ খেলার প্রয়োজন ছিল। কারণ খেলায় না ফিরলে ক্রিকেটারদের পারফরম্যান্সের মান আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে তলানিতে নেমে যাওয়ার শঙ্কা থাকে। পাঁচ মাস পর একক অনুশীলনে নেমে এর কিছুটা হলেও অনুধাবন করতে পারছেন ক্রিকেটাররা।

সবচেয়ে বড় কথা, বিসিবি লঙ্কা সফরের ব্যবস্থা না করলে ১০ মাস খেলার বাইরে থাকতে হতো টাইগারদের। ইংল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, আয়ারল্যান্ড, পাকিস্তান ক্রিকেটে ফিরেছে। অস্ট্রেলিয়াও ফিরবে ইংল্যান্ড সফর দিয়ে। ভারত আয়োজন করছে আইপিএল। করোনাভাইরাস নিয়ন্ত্রণে থাকায় শ্রীলঙ্কাও ঘরোয়া প্রথম শ্রেণির ক্রিকেট লিগ চালু করে দিয়েছে। এই সফর না হলে ক্রিকেট বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ত বিসিবি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *