ভোটের মাঠে উত্তাপ বাড়াচ্ছে অস্ত্রবাজি
প্রচারণা শুরুর পাঁচ দিনের মাথায় ‘রক্ত’ দেখেছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) নির্বাচন। ভোটের মাঠে এরই মধ্যে ব্যবহৃত হয়েছে দেশি ও বিদেশি ক্ষুুদ্র আগ্নেয়াস্ত্র। ফলে আগামী ২৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য চসিক নির্বাচন ঘিরে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে।
নির্বাচনী সহিংসতায় অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করা হচ্ছে, না কি বৈধ অস্ত্র অবৈধভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে সে ব্যাপারেও পুলিশ অন্ধকারে। কারণ নির্বাচন কমিশন বা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখনো বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশনা জারি করেনি। ফলে চট্টগ্রাম মহানগরের ১৬ থানার আওতায় দুই হাজার ৪৭৭টি বৈধ অস্ত্র এখনো লাইসেন্সধারী ব্যক্তিদের হাতে রয়েছে। এ অস্ত্রগুলো নির্বাচনের আগে জমা দেওয়ার নির্দেশনা আসবে কি না, সে বিষয়টিও পরিষ্কার নয়। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের আগ্নেয়াস্ত্র শাখা থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, বৈধ অস্ত্র জমার কোনো নির্দেশনা এখনো জারি হয়নি।
এর আগে চট্টগ্রাম মহানগরে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট তথ্য মিলেছিল। ২০১৩ সালে চট্টগ্রামের লালখান বাজার ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও একসময়ের তালিকাভুক্ত শীর্ষ সন্ত্রাসী দিদারুল আলম মাসুম যেভাবে রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের ওপর প্রকাশ্যে গুলি চালিয়েছিলেন, সেই ভয়ংকর দৃশ্য এখনো ভুলতে পারেনি নগরবাসী। এ ছাড়া গত ২ ডিসেম্বর গভীর রাতে গোলপাহাড় মোড়ে গুলি ছুড়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করেন আলমগীর আলম নামের একজন ঝুট ব্যবসায়ী। পরে পুলিশ তদন্ত করে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহারের তথ্যটি নিশ্চিত হয়। এবার চসিক নির্বাচনের প্রচারণা শুরুর দিন গত শুক্রবার চকবাজার ওয়ার্ডে এবং গত সোমবার চান্দগাঁও এলাকায় কাউন্সিলর পদপ্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে রক্তাক্ত জখমের ঘটনা ঘটে। এসব সংঘাতেও দেশীয় অস্ত্রের ব্যবহার হয়েছে। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার রাতে ডবলমুরিং এলাকায় আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর পদপ্রার্থী নজরুল ইসলাম বাহাদুরের সমর্থকদের ওপর সশস্ত্র হামলা চালায় সাবেক কাউন্সিলর ও ২৪ মামলার আসামি শীর্ষ সন্ত্রাসী আবদুল কাদের ওরফে মাছ কাদের। এতে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান বাবুল নামের এক সমর্থক। এ ঘটনায় মাছ কাদেরসহ ১৩ জনের নামে মামলা হয়েছে। এই মামলায় কাদেরসহ ১১ জনকে কারাগারে পাঠিয়েছে পুলিশ।
বাবুল হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্রটি উদ্ধার হয়েছে কি না—জানতে চাইলে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের উপকমিশনার (পশ্চিম) মনজুর মোরশেদ বলেন, ‘অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। কে কেন কিভাবে গুলি করল, সেসব প্রশ্নের উত্তর তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’
বৈধ অস্ত্র জমার নির্দেশনা না আসার বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, ‘বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার বিষয়ে এখনো নির্দেশনা আসেনি। নির্দেশনা এলে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ২৪ ডিসেম্বর একটি আদেশ জারি করা হয়েছে। সেই আদেশে তিন দফায় দেশের ৬৪ জেলায় পৌরসভা নির্বাচন উপলক্ষে ভোটের দুই দিন আগে থেকে পরবর্তী পাঁচ দিন সংশ্লিষ্ট এলাকায় বৈধ অস্ত্রের লাইসেন্সধারীদের অস্ত্রসহ চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। কিন্তু অস্ত্রগুলো জমা দেওয়ার কথা বলা হয়নি। আবার ৩০ জানুয়ারি অনুষ্ঠিতব্য পৌর নির্বাচনের আগে অস্ত্র নিয়ে চলাচলে বিধি-নিষেধ গত ২৪ ডিসেম্বর তথা ৩৭ দিন আগে জারি করা হলেও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বৈধ অস্ত্রের ব্যবহার বিষয়ে কোনো নির্দেশনা এখনো স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জারি করেনি।
মহানগর পুলিশের একজন উপকমিশনার কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে আলাপকালে জানান, অস্ত্র নিয়ে যে নির্দেশনাই দেওয়া হোক না কেন, নির্বাচনী মাঠে বৈধ অস্ত্রের অবৈধ ব্যবহার রোধ করা কঠিন। কারণ বিপুলসংখ্যক মানুষের মধ্যে কে কখন অস্ত্র ব্যবহার করল, তা বের করতেই পুলিশকে দীর্ঘ সময় ব্যয় করতে হয়। এরপর অস্ত্র ব্যবহারকারী ব্যক্তি শনাক্ত হলে পরবর্তী ধাপে সেটি বৈধ নাকি অবৈধ, তা শনাক্ত করার প্রশ্ন আসে। তাই নির্বাচনকালীন বৈধ অস্ত্র জমা নিয়েই অবৈধ অস্ত্রের ব্যবহার ঠেকাতে পুলিশ সফলভাবে অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালাতে পারে। কিন্তু সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলোতে বৈধ অস্ত্র জমা না নেওয়ায় নির্বাচনকালীন উচ্চপর্যায়ের ঝুঁকির সৃষ্টি হয়।
অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের ব্যাপারে মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) এস এম মোস্তাক আহমেদ বলেন, পুলিশ অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে সক্রিয়ভাবে কাজ করছে। নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে মহানগর পুলিশ অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
অবৈধ অস্ত্র ব্যবহারের কারণে নির্বাচন ঝুঁকির মধ্যে পড়েছে কি না—জানতে চাইলে সিএমপি কমিশনার সালেহ্ মোহাম্মদ তানভীর বলেন, ‘কেউ অস্ত্রবাজি করে নির্বাচনের শান্তিপূর্ণ পরিবেশ নষ্ট করার চেষ্টা করলে পুলিশ আইনি ব্যবস্থা নেবে।’