চট্টগ্রাম-সেন্ট মার্টিন রুটে চলা শুরু বে ওয়ানের

প্রেসিডেনশিয়াল স্যুট, বাংকার বেড কেবিন, টুইন বেড কেবিন, আরামদায়ক চেয়ারসহ বিভিন্ন ক্যাটাগরির আসনের পাশাপাশি একটি রেস্তোরাঁ, স্বয়ংক্রিয় ভেন্ডিং মেশিন, কয়েন পরিচালিত ঝরনাসহ অনেক কিছুই আছে জাহাজটিতে। সেন্ট মার্টিনে গিয়ে হোটেলের পরিবর্তে জাহাজটিতেই রাত্রি যাপন করা যাবে। পুরো সাততলা প্রমোদতরিটি সিসিটিভি ক্যামেরার অধীন। এতে ভ্রমণ যেন সাগরের বিশালতার মাঝে স্বস্তির পরশ। ‘কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্স লিমিটেড’ ভ্রমণপিপাসুদের জন্য চট্টগ্রাম থেকে সেন্ট মার্টিনের পথে এমন আরামদায়ক ও নিরাপদ সফরের সুযোগ সৃষ্টি করেছে। বিলাসবহুল ক্রুজ শিপ ‘বে ওয়ান’ গত বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় চট্টগ্রামের পতেঙ্গা ওয়াটার বাস টার্মিনাল থেকে প্রথমবারের মতো সেন্ট মার্টিন দ্বীপের উদ্দেশে যাত্রা করে।

প্রথম যাত্রায় জাহাজটির যাত্রী হয়ে দেখা যায়, পতেঙ্গা টার্মিনালে জাহাজটি দেখতে আসে অনেকে। কেউ কেউ এতে ভ্রমণের সুযোগ-সুবিধা এবং খরচের বিষয়টি জানার চেষ্টা করে। সোলায়মান আহমেদ নামের একজন বলেন, ‘এটি দেশের প্রথম প্রমোদতরি হওয়ায় আকর্ষণ একটু বেশি। আমার বাসা কদমতলী। সার্বিক বিষয়ে জানতে টার্মিনালে আসা।’

বৃহস্পতিবার রাত ৮টার পর থেকেই ধীরে ধীরে প্রথম সফরের যাত্রীরা আসতে শুরু করে। রাত ১০টা বাজতেই যাত্রীতে প্রায় পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে বে ওয়ান। ১১টা বাজতেই ঘোষণা আসে ছেড়ে যাওয়ার। ঘণ্টাখানেক পরেই দেখা দেয় সাগরের আসল রূপ। রাতের আঁধারেও সমুদ্রের আলোকচ্ছটা। সাড়ে ১১টার দিকে জাহাজের সপ্তম তলায় যাত্রীদের জন্য শুরু হয় কনসার্ট। এ সময় শিল্পীদের গান আর সাগরের গর্জন মিলেমিশে একাকার হয়। বেড়াতে যাওয়া পরিবারগুলোর শিশুদের আনন্দ ছিল বাঁধভাঙা। গানের তালে তালে সায়মা রহমান নামের ছোট্ট শিশুটির নাচ নজর কাড়ে সবার। সায়মার মা সাবিনা রহমান বলেন, ‘সেন্ট মার্টিন আগেও গিয়েছি। তবে এমন আনন্দঘন সুন্দর পরিবেশ আর পাইনি। সব মিলিয়ে সত্যি অসাধারণ।’

কর্ণফুলী শিপ বিল্ডার্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুর রশিদ বলেন, ‘দুই হাজার যাত্রী পরিবহনে সক্ষম জাহাজটিতে প্রাথমিকভাবে ৫০০ থেকে এক হাজার যাত্রী প্রত্যাশা করেছি। কিন্তু এখন প্রত্যাশার চাইতেও বেশি সাড়া পাচ্ছি। আশা করছি, পর্যায়ক্রমে যাত্রী আরো বাড়বে। এখন সপ্তাহে তিন দিন চলাচল করলেও সপ্তাহে সাত দিনই চলাচলের পরিকল্পনা রয়েছে।’

জানা যায়, জাপানের কোবেই শহরে মিত্সুবিশি হেভি ইন্ডাস্ট্রিজে তৈরি ক্রুজ শিপটির দৈর্ঘ্য ৪০০ ফুট, প্রস্থ ৫৫ ফুট। গড় গতি ঘণ্টায় ১৬.১ নটিক্যাল মাইল এবং সর্বোচ্চ গড় গতি ঘণ্টায় ২৪ নটিক্যাল মাইল। বাংলাদেশের উপকূলীয় সমুদ্রপথে এই জাহাজ প্রতি ঘণ্টায় গড়ে ১৮ থেকে ২০ নটিক্যাল মাইল বেগে চলতে সক্ষম।

কর্তৃপক্ষ জানায়, বে ওয়ান প্রথমে কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে চলাচল শুরু করলেও ‘জেটি’ সমস্যার কারণে চট্টগ্রাম-সেন্ট মার্টিনের মধ্যে চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়। আগামী ২১ জানুয়ারি থেকে সপ্তাহের প্রতি বৃহস্পতিবার রাত ১১টায় চট্টগ্রাম থেকে সেন্ট মার্টিন এবং শনিবার সকাল ১১টায় সেন্ট মার্টিন থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে যাতায়াত করবে এটি। জাহাজটি আইএমও রেজিস্টার্ড সমুদ্রগামী তারকা মানসম্পন্ন হওয়ায় এটি চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার ও আশপাশের দ্বীপাঞ্চলেও চালানোর চিন্তা করছে কর্তৃপক্ষ। এরই মধ্যে জাহাজটি বার্থিংয়ের জন্য কক্সবাজারের দরিয়ানগরে জেটি ঘাট নির্মাণপ্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে।

প্রমোদতরিতে ভাড়া : যাতায়াতের জন্য একাধিক প্যাকেজ ঘোষণা করেছে কর্তৃপক্ষ। এমারেল্ড ক্লাসিক নামের প্যাকেজে ভাড়া নির্ধারিত হয়েছে আসা-যাওয়া ও জাহাজে রাতযাপন খরচসহ। সঙ্গে থাকবে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট ও ডিনার। দুজনের ভিভিআইপি কেবিনের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা। চারজনের স্পেশাল ক্লাস বাংকারের ভাড়া পড়বে ৫০ হাজার টাকা। দুজনের রয়াল স্যুটের ভাড়া পড়বে ৪৫ হাজার টাকা। দুজনের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটের ভাড়া পড়বে ৩০ হাজার টাকা। একজনের বাংকার বেডের ভাড়া পড়বে ১০ হাজার টাকা।

এ ছাড়া ইকোনমি প্যাকেজের আওতায় ইকোনমি সিটের ভাড়া পড়বে তিন হাজার টাকা, বিজনেস ক্লাস সিটের ভাড়া চার হাজার টাকা। তবে এই প্যাকেজে থাকবে শুধু কমপ্লিমেন্টারি স্ন্যাকস।

ওশানস হ্যাভেন নামের আরেক প্যাকেজে নির্ধারণ করা হয়েছে রাতযাপনসহ একমুখী ভাড়া। এখানে থাকছে কমপ্লিমেন্টারি ব্রেকফাস্ট। ভিভিআইপি কেবিনে দুজনের ভাড়া পড়বে ২৫ হাজার টাকা। ফ্যামিলি প্যাকেজে স্পেশাল ফার্স্ট ক্লাস বাংকার বেডের ভাড়া হবে ২৫ হাজার টাকা। রয়াল প্যাকেজে দুজনের রয়াল স্যুটের ভাড়া পড়বে ২০ হাজার টাকা। তবে প্রেসিডেনশিয়াল প্যাকেজের আওতায় দুজনের প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটের ভাড়া পড়বে ১৫ হাজার টাকা। একজনের সিঙ্গেল বাংকার বেডের ভাড়া সাত হাজার টাকা। এ ছাড়া এমারেল্ড ক্লাসিক নামের আরেকটি প্যাকেজে শুধু একমুখী ভাড়া অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এই প্যাকেজের আওতায় ভিভিআইপি কেবিনের ভাড়া ৩০ হাজার টাকা, ফ্যামিলি কেবিনের ভাড়া ৩০ হাজার টাকা। রয়াল স্যুটের ভাড়া ২৫ হাজার টাকা। প্রেসিডেনশিয়াল স্যুটের ভাড়া ২০ হাজার টাকা। সিঙ্গেল বাংকার বেডের ভাড়া ছয় হাজার টাকা। বিজনেস ক্লাস সিটের ভাড়া দুই হাজার ৫০০ টাকা। আর ইকোনমি সিটের ভাড়া দুই হাজার টাকা। 

উল্লেখ্য, জাহাজটি একসময় টোকিও থেকে জাপানের বিভিন্ন দ্বীপে চলাচল করত। তখন এর নাম ছিল ‘সালভিয়া মারু’। গত বছর এটি চট্টগ্রাম বন্দরে আনা হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *