লন্ডনের দোয়া নিয়ে ঢাকায় ব্যস্ত নেতারা

রাজনীতির মাঠ সিলেট। কিন্তু নিয়ন্ত্রক দেশে নেই। থাকেন বিদেশে, লন্ডনে। ফলে কান কথা, গুঞ্জন-গুজব, হঠাৎ অস্থিরতা লেগেই থাকে বারো মাস। এমন পরিস্থিতির ফলে সিলেট বিএনপির রাজনীতি এখন অনেকটা জটিল হয়ে উঠছে।

এখানকার রাজনীতির রিমোট লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের হাতে। ওখানেও তাকে ঘিরে রেখেছেন সিলেটিরাই। সিলেটের নেতাদের সঙ্গেও কদিন পরপর লন্ডনের ফোন আসে। জুম ও স্কাইপে মিটিং হয়। সেখানে কেউ কেউ সুযোগ পান, অংশ নেন। বাদ পড়েন অনেকেই। মিটিংয়ে দলীয় নির্দেশনা আসে। নেতাদের কারও ভাগ্য খোলে আবার কারও ভাগ্য পোড়ে। এসব নিয়ে দলের নেতাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে নানা অভিমান।

দলীয় সূত্র জানায়, সম্প্রতি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এমন এক মিটিং করেন তারেক রহমান। এ মিটিংয়ে দলের ৩২ জন নেতা অংশ নেন। এতে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের ব্যাপারে নির্দেশনা দেন তিনি। রোববার এমন নির্দেশনার পর শীর্ষ পদপ্রত্যাশী নেতারা ছুটে গেছেন ঢাকায়। লন্ডনের দোয়া নেওয়ার পর ঢাকার নেতাদের তুষ্ট করতে তারা ব্যস্ত।

ঢাকায় ছুটে যাওয়া কয়েক নেতা যুগান্তরকে জানান, হাতে খুব কম সময়, মহানগরের আহ্বায়ক কমিটি হয়ে যাবে। তাই লেগেই আছি। এ নিয়ে ঢাকায় দফায় দফায় বৈঠক হচ্ছে। এদিকে শীর্ষ পদপ্রত্যাশীরা ঢাকামুখী হতেই লন্ডনে পৌঁছেছে নানা কানকথা। ফলে অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে অনুকূলে আনা পরিবেশ অনেকটা ফের প্রতিকূল হয়ে উঠছে। এ নিয়ে দলের গ্রুপ-উপগ্রুপগুলোর মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে।

দলীয় সূত্রমতে রোববারের ভিডিও কনফারেন্সের মিটিংয়ে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা তাহসিনা রুশদী লুনা, খন্দকার আব্দুল মুক্তাদির, ডা. এনামুল হক চৌধুরী, বিএনপির সিলেট বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন মিলন, কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, কেন্দ্রীয় সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীসহ ৩২ জন অংশ নেন।

ওই ভার্চুয়াল মিটিংয়ে কেন্দ্রীয় সদস্য ও সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর তীব্র সমালোচনায় মেতে উঠেন বিরোধীরা। বিচারপ্রার্থী হন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে। তারা বলেন, মেয়র নির্বাচনের সময় দলের অনেকেই খেটেছেন, মামলার আসামি হয়েছেন। মেয়র তাদের জন্য কিছুই করেননি। হাটে হাঁড়ি ভাঙার এ অবস্থা দেখে মেয়রের অনুসারীরাও প্রতিবাদে সোচ্চার হন।

তারা বলেন, যিনি এখানে মেয়র আরিফের বিরুদ্ধে উচ্চকণ্ঠ হয়ে বিষোদগার করছেন তিনি গত কদিন আগে জজ কোর্টে আটকা পড়েছিলেন। খবর পেয়েই মেয়র আরিফ কোর্টে ছুটে গিয়েছিলেন। এর আগে কয়েক নেতা মামলা নিয়ে হাইকোর্টে বেকায়দায় পড়েছিলেন। মেয়র বিমানে উড়ে গিয়ে তাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। এসব অভিযোগ শোনার পরপরই মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর কাছে মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের রূপরেখা জানতে চান তারেক। জবাবে ছোট করে আহ্বায়ক কমিটি করলে কাজ করা সহজ হবে বলে প্রস্তাব দেন আরিফ। এ বৈঠকে তারেক রহমান মহানগর বিএনপির সম্মেলনের জন্য আহ্বায়ক কমিটি গঠনের পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা চান। এ সময় ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকির নামোল্লেখ করে তাদের কাউকে আহ্বায়ক করার প্রস্তাব করেন কয়েক নেতা। তবে তারেক রহমান তা আমলে নেননি। মহানগর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক আজমল বক্ত সাদেক ভার্চুয়াল মিটিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন।

তিনি জানান, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আমাদের সবার বক্তব্য অত্যন্ত মনোযোগ দিয়ে শুনেছেন, নোট নিয়েছেন। পরে গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য রেখেছেন। এ সময় সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ রূপরেখা প্রণয়নের জন্য নির্দেশ দেন। ২০ মার্চের মধ্যে এ রূপরেখা জমা দিতে বলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান। এমন নির্দেশনার পর সিলেট বিএনপির পদপ্রত্যাশী নেতাদের মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *