বিআইপির আলোচনা
দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবে বাজেট বাস্তবায়িত হচ্ছে না
বাজেট আঞ্চলিক বৈষম্য বাড়াচ্ছে। একই সঙ্গে বাজেটে প্রান্তিক মানুষের জীবিকা নির্বাহ ও জীবনমান উন্নয়নের দিকনির্দেশনা অনুপস্থিতনিজস্ব প্রতিবেদকঢাকাপ্রকাশ: ১১ জুন ২০২১, ০৭: ১৩অ+অ-
দেশের সব ক্ষেত্রে একই রকম উন্নতি হচ্ছে না। বাজেট বরাদ্দ বাড়লেও দুর্নীতি ও সুশাসনের অভাবে সঠিকভাবে এর বাস্তবায়ন হচ্ছে না।
‘জাতীয় বাজেট ২০২১-২২: পরিকল্পনাগত পর্যালোচনা’ শীর্ষক এক সংলাপ অনুষ্ঠানে বাজেট নিয়ে এসব কথা বলেন পরিকল্পনাবিদেরা। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) অনলাইনে এই ওয়েবিনারের আয়োজন করে। এ সময় সরকারের আবাসন উদ্যোগগুলো ঢাকাকেন্দ্রিক হয় উল্লেখ করে নগর–পরিকল্পনাবিদেরা বলছেন, এটি না করে সব জেলায় সাশ্রয়ী আবাসনের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারের বাজেটে যে আঞ্চলিক বৈষম্য আছে, তা কমাতে হবে। পিছিয়ে পড়া এলাকাগুলোতে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অবকাঠামোগত উন্নয়ন, বিনিয়োগ–সুবিধা ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করার পরামর্শ দিয়েছেন তাঁরা।
সভাপতির বক্তব্যে বিআইপি সহসভাপতি মুহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, এ বছরের বাজেটে হাউজিং খাতে সুস্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। নির্মাণকাজের খরচ কিছু কমেছে। তবে সবাইকে সাশ্রয়ী মূল্যে যে আবাসন সরকারের দেওয়ার কথা, তা বাজেটে উল্লেখ নেই। বাজেট পাস করার আগেই যেন পরিকল্পনাবিদদের মতামত নেওয়া হয়, সেটি নীতিনির্ধারকদের ঠিক করতে হবে।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম আবুল কালাম বলেন, স্থায়ী কাঠামো তৈরি করতে হলে নকশা এবং ট্যাক্স সার্টিফিকেট থাকার বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু অধিকাংশ উপজেলাতেই নকশা অনুমোদন কমিটি এখনো করা হয়নি।
চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ টি এম শাহজাহান বলেন, শিক্ষাকে জাতির মেরুদণ্ড বলা হলেও শিক্ষার মান উন্নয়ন, গবেষণা খাতে বাজেট বরাদ্দের পরিমাণ বাড়েনি।
ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন বিআইপি সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান। তিনি বলেন, আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করার ক্ষেত্রে জেলাভিত্তিক বাজেট করার উদ্যোগ এখন স্তিমিত হয়েছে। বাজেটের অর্থনৈতিক বিশ্লেষণের পাশাপাশি পরিকল্পনাগত বিশ্লেষণ অত্যন্ত জরুরি।
কেয়ার বাংলাদেশের পরিচালক আমানুর রহমান বলেন, স্বাস্থ্য খাতকে অগ্রাধিকার দেওয়া হলেও এই খাতের সব সুযোগ-সুবিধা কেন্দ্রীভূত করার কারণে সুষমভাবে বণ্টন হচ্ছে না। নিম্নবিত্তদের জন্য সামাজিক নিরাপত্তা খাতে বরাদ্দ অপর্যাপ্ত এবং বাজেটে নতুন দরিদ্র মানুষদের উপেক্ষা করা হয়েছে।
জাইকা বাংলাদেশের জাতীয় পরামর্শক ও পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ আফসান সাবাব বলেন, প্রকল্প নেওয়ার আগে সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অর্থ বরাদ্দ না থাকায় অনেক সময় প্রকল্প গ্রহণকারী সংস্থা দায়সারাভাবে সম্ভাব্যতা প্রতিবেদন করে প্রকল্প অনুমোদন নিয়ে নেয়। প্রকল্পের মাধ্যমে অর্থের অপচয় রোধ করার পরামর্শ দেন এই পরিকল্পনাবিদ।
বিআইপি সাবেক সাধারণ সম্পাদক খোন্দকার এম আনসার হোসেন বলেন, একীভূত উন্নয়নের ফলে অন্য শহরগুলোতে জীবিকা, অবকাঠামো, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ জীবনমান হারাচ্ছে। অথচ সমগ্র বাংলাদেশের অন্তর্ভুক্তিমূলক উন্নয়ন প্রয়োজন।