বিএনপিতেও শেখ হাসিনার মতো নেতৃত্ব দরকার: কথিত পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা
–
নিজেকে কথিত ‘আসল বিএনপি’ বা পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা দাবি করে কামরুল হাসান বলেছেন, আওয়ামী লীগের সঙ্গে রাজনৈতিক লড়াই করার জন্য বিএনপি এখন সুসংহত অবস্থায় নেই। ক্ষমতায় গেলে বিএনপি মানুষের জন্য কী করতে পারবে, সে হোমওয়ার্ক নেই। আওয়ামী লীগ শেখ হাসিনার মতো শক্তিশালী নেতৃত্ব পেয়েছে। কিন্তু বিএনপির শেখ হাসিনা কোথায়? এ ছাড়া বিএনপি জনস্বার্থ ইস্যুতে রাজনীতিটা করতে পারছে কি না, সে প্রশ্নও তোলেন কামরুল হাসান।
আজ রোববার কামরুল হাসান ভার্চ্যুয়াল এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন। তিনি লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। সেখানে তিনি বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্বের সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, জোর করে ৩০ বছরের বেশি সময় ধরে একজন অরাজনৈতিক ব্যক্তি ও গৃহিণী খালেদা জিয়া ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। সবকিছু পুত্রের কথায় চলবে না।
কামরুল হাসান বলেন, বিএনপিতে জিয়াউর রহমানকে সামনে রেখে রাজনীতি করতে হবে। খালেদা জিয়াকে রেখেই দল পুনর্গঠন করতে হবে। তবে রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে দেওয়া যাবে না। তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায়ই নতুন নেতৃত্বের কথা বলেন কিন্তু বিএনপিতে সেটা নেই কেন? এ ছাড়া তিনি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে সজ্জন ব্যক্তি উল্লেখ করে তাঁকে সামনে রেখে বিএনপি পুনর্গঠন করার কথা বলেন।
কামরুল হাসান বলেন, গণতান্ত্রিক উপায়ে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব নির্বাচন করে তৃণমূল পর্যায়ে ঢেলে সাজাতে হবে। যতক্ষণ পর্যন্ত জামায়াত ছাড়ার ব্যাপারটা নিশ্চিত না হচ্ছে, সরকারকে আরও কঠোর হয়ে জামায়াতপন্থী বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্মূলে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
খালেদা জিয়ার সমালোচনা করে কামরুল হাসান বলেন, ‘বিএনপির বর্তমান অকার্যকর রাজনীতির কারণে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা বলি হচ্ছেন। কিন্তু আজকের বেগম জিয়া সরকারের সঙ্গে আপস করে নিজ গৃহে থাকার সুবিধা নিয়ে মুখে স্কচটেপ লাগিয়ে দলের বারোটা বাজিয়ে দিচ্ছেন। অন্যদিকে একজন তারেক রহমান সুদীর্ঘ সময় নিয়ে দেশের বাইরে অবস্থান করে এখনো মানি মেকিংয়ে আছেন এবং আরামে আছেন। তাঁর মনোনয়ন-বাণিজ্য চলছে।’
সরকারের উদ্দেশে কামরুল হাসান বলেন, ‘আপনারা খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তির জন্য চিন্তা করুন। সেটা বৃহৎ রাজনৈতিক কারণে। আর যদি আইনের গতিতে সবকিছু চলতে থাকে, তবে তাঁর আজকের পরিণতির জন্য বলব, এটিই প্রকৃতির বিচার। কারণ, তিনি অপরাধীও।’
সংবাদ সম্মেলনে কামরুল হাসান কয়েকটি ঘোষণা দেন। এ বছরের মধ্যেই দলীয় বিপ্লব করবেন। বিএনপির নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে প্রতীকী উচ্চ আদালত বসাবেন। সেখানে গত ২০ বছরের মধ্যে বেঁচে থাকা কাউন্সিলরদের ভোটে শীর্ষ নেতা বাছাই করা হবে। আগামী ২ সেপ্টেম্বর বিএনপির ওপর ‘মম অব দ্য ডন’ নামে একটি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শন করবেন। জামায়াতকে জোটের নাম থেকে বাদ দেওয়া, বিদেশি শক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে পররাষ্ট্রনীতি দাঁড় করানো, জনস্বার্থের রাজনীতি, স্বেচ্ছাসেবক দলকে করোনা মোকাবিলায় কাজে লাগানো। রাজনৈতিক দলকে প্রণোদনা দিতে নির্বাচন কমিশনকে বাধ্য করা এবং খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে বিএনপির নীতিনির্ধারণী থেকে অব্যাহতি নিতে বাধ্য করা।
কাউন্সিল প্রসঙ্গে বিএনপি পুনর্গঠনের কথিত এই উদ্যোক্তা বলেন, খালেদা জিয়া একপ্রকার মুচলেকা দিয়ে রাজনীতি থেকে সরে গেছেন। তারেক রহমান বাংলাদেশে বসে রাজনীতি করছেন না। দলের দুর্দশা দলের নেতা-কর্মীরা মেনে নিতে পারছেন না। এ ছাড়া তিনি জানান, তাঁর সঙ্গে দলের জ্যেষ্ঠ পর্যায়ের প্রায় সবাই আছেন। কিন্তু কৌশলগত কারণে এখন নাম প্রকাশ করছেন না।
২০১৫ সালের ৯ জানুয়ারি এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে নিজেকে ‘আসল বিএনপি’র নেতা ও পুনর্গঠনের উদ্যোক্তা দাবি করে আলোচনায় আসেন কামরুল হাসান।