‘প্রাপ্তির সঙ্গে শুধরে নিতে হবে ভুলও’
টি-টোয়েন্টিতে টানা ৫ জয়ের রেকর্ডের হাতছানি ছিল টাইগারদের সামনে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সিরিজের চতুর্থ ম্যাচ হারের পর সেই সুযোগ হাতছাড়া হয়েছে। সেই সঙ্গে ফসকে গেছে অজিদের হোয়াইটওয়াশ করার দারুণ সম্ভাবনাও। তবে কথায় আছে- ‘শেষ ভালো যার সব ভালো তার।’ তাই আজ অজিদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ জিততে পারলে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতেই পারেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের দল। তবে প্রাপ্তির আড়ালে ভুলগুলোকে ভুলে গেলে হবে না। এ মাসেই নিউজিল্যান্ড দল ৫ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি সিরিজ খেলতে ঢাকায় আসছে। তাই অজিদের বিপক্ষে দলের ঘাটতিগুলো এখনই শুধরে নেয়ার সুযোগ। কারণ, টানা ৩ জয়ে অস্ট্রেলিয়াকে সিরিজ হারালেও টাইগারদের ব্যাটিং সক্ষমতা প্রশ্ন হয়েই থেকে যাচ্ছে। কারণ, প্রত্যেক ম্যাচেই দলীয় ১০০ রানের গণ্ডি পার হতে ঘাম ঝড়িয়েছে ব্যাটসম্যানরা।স জিতেও চতুর্থ ম্যাচে চরম ব্যাটিং ব্যর্থতায় স্বাগতিকরা হাতে এক উইকেট রেখে থামে মাত্র ১০৪ রানে। ২০ ওভারের ক্রিকেটে এই পুঁজি নিয়ে প্রতিপক্ষকে আটকানো অসম্ভবই। ফল যা হওয়ার তাই, সফরকারীরা ৭ উইকেট হারালেও ১ ওভার বাকি থাকতে জয় তুলে নেয়। দেশের অভিজ্ঞ কোচ ও বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপির ক্রিকেট উপদেষ্টা নাজমুল আবেদিন ফাহিম মনে করেন এই ঘাটতি পূরণের এখনই সময়। দৈনিক মানবজমিনকে তিনি বলেন, ‘মূল ঘাটতি আমাদের ব্যাটিংয়ে। জিততে হলে খুব গড়পড়তা একটা রান করতে হবে। বোলারদের খুব ভালো বোলিং করতে হবে। খুব ভালো ফিল্ডিং করতে হবে। সেটাই বোধহয় আমাদের ভরসা। আমাদের এমন ব্যাটসম্যান খুঁজে বের করতে হবে যারা ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে এবং যাদের পাওয়ার (শক্তি) আছে।’
হ্যাঁ, অজিদের বিপক্ষে চার ম্যাচে ভয়ডরহীন ক্রিকেট খেলে সফল দলের তরুণ সদস্য আফিফ হোসেন ধ্রুব। অভিজ্ঞতায় নিজের সেরাটা দিয়ে চার ম্যাচে দলের পক্ষে একমাত্র ফিফটি আদায় করে নিয়েছেন অধিনায়ক মাহমুদুল্লাহ। কিন্তু ওপেনিংটাই যে নড়বড়ে। ৪ ম্যাচের মধ্যে পাওয়ার প্লে’র ৬ ওভারে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ সংগ্রহ ৩০ রান। নিজেদের চেনা স্পিন-বান্ধব উইকেটে টাইগারদের দুই ওপেনার ব্যাট হাতে বারবার আত্মসমর্পণই করেছেন। তরুণ নাঈম শেখ চার ইনিংসে ১৭.০০ গড়ে করেছেন ৬৮ রান। অন্যদিকে অভিজ্ঞ ওপেনার সৌম্য সরকার করেছেন ৪ ইনিংসে ৩.০০ গড়ে ১২ রান। তার এমন ব্যর্থতার কারণ হিসেবে বলা হচ্ছে তিনি এমন উইকেটের ক্রিকেটার নয়? এ বিষয়ে নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘একজন আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলা ব্যাটসম্যানের এটা হতে পারে না যে এক ধরনের উইকেটে ভালো খেলবে, আরেক ধরনের উইকেটে ভালো খেলবে না। প্রত্যেকটা উইকেটেই চ্যালেঞ্জ ভিন্ন। ওর (সৌম্য) মানিয়ে নেয়ার ব্যাপারেই ওর সমস্যা হচ্ছে। টি-টোয়েন্টিতে হাতে তো বেশি সময় থাকে না। কয়েকটা ডট বল গেলেই সেটা বিশাল চাপ হয়ে দাঁড়ায়। প্রতিবার সেটাই হচ্ছে। নামতে নামতেই ৫-৭টা বল চলে যাচ্ছে। ওই চাপটা অনুভব করছে। তারপর তাড়াহুড়ায় একটা শট খেলতে গিয়ে আউট হচ্ছে। জিম্বাবুয়ের কন্ডিশনটা তাকে বেশি মানায়। এমন কন্ডিশন ও অতটা উপভোগ করে না। কিন্তু উপভোগ করুক আর না করুক, ব্যাটসম্যানকে কিন্তু মানিয়ে নিতেই হবে। সে হয়তো চেষ্টাও করছে না।’
সিরিজ জয় নিশ্চিত হওয়ার পর ধারণা করা হচ্ছিল হয়তো চতুর্থ ম্যাচে বাংলাদেশের একাদশে পরিবর্তন আসবে। কিন্তু সেটি হয়নি। স্কোয়াডে বসে থাকা ক্রিকেটার সাইফুদ্দিন, মোহাম্মদ মিঠুনদের সুযোগ দিয়ে সামনের সিরিজের জন্য প্রস্তুত করতে পারতো দল। যেখানে অজিরা একের পর এক হারের পরও নিজেদের শক্তি দেখে নিতে বেশ কয়েকটি পরিবর্তন এনেছে। অবশ্য শেষ ম্যাচে টাইগার একাদশে পরিবর্তন হচ্ছে এমনটাই জোর গুঞ্জন। একাদশে পরিবর্তন আনার যৌক্তিকতা নিয়ে নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘যদি তিন পেসার খেলায় তাহলে সাইফুদ্দিন তো খেলবেই। আমাদের মিডল অর্ডারে বদলানোর তেমন সুযোগ নেই। ওপরে চাইলে বদলানো যায়। কিন্তু দলে যেহেতু ওপেনার নেই, তাই ওদেরকেই (সৌম্য-নাঈম) সুযোগ দেয়া হচ্ছে।’ জানা গেছে আজ একাদশে পরিবর্তন নিয়ে অজিদের বিপক্ষে শেষ ম্যাচে মাঠে নামবে টাইগাররা।’
প্রশ্ন উঠছে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের পারফরম্যান্স নিয়েও। বিশেষ করে শেষ ম্যাচে তিনি ৪ ওভারে খরচ করেছেন ৫০ রান। তার এক ওভারেই ৫টি ছয়ের মার হজম করতে হয়েছে। কেন সাকিবের এমন বোলিং! এ বিষয়ে তার গুরু নাজমুল আবেদিন বলেন, ‘ও তো ভালোই বোলিং করছে। ১০৪ রান করলে এমন হয় যে আপনি যদি ব্যাটসম্যানদের অলআউট না করতে পারেন তাহলে আপনি জিততে পারবেন না। আমার মনে হয় সেটা মনে করেই সাকিব আগ্রাসী বোলিং করেছে, ওদেরকে মারতে দিয়েছে যেন উইকেট পড়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়। ওই ওভারে যদি ১টা, ২টা উইকেট পড়তো তাহলে ভিন্ন চিত্র দেখা যেত।’