সাকিব যদি কিউই হতেন…
কলকাতা নাইট রাইডার্সের বাংলাদেশি অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানফাইল ছবি: বিসিসিআই
আইপিএলে কাল রাতের ম্যাচ শুরু হতেই টুইটটি করেন আকাশ চোপড়া, ‘সাকিব যদি কিউই হতো…।’
ভারতের সাবেক ক্রিকেটার ও বর্তমানে বিশ্লেষক আকাশ চোপড়ার টুইটে অসম্পূর্ণ বাক্যটি আসলে খোঁচা। সেটি সম্ভবত কলকাতা নাইট রাইডার্সের প্রধান কোচ ও নিউজিল্যান্ডের সাবেক অধিনায়ক ব্রেন্ডন ম্যাককালামকে তাক করে। চোপড়া বোঝাতে চেয়েছেন, বাংলাদেশের বাঁহাতি অলরাউন্ডার নিউজিল্যান্ডের খেলোয়াড় হলে হয়তো কলকাতার একাদশে সুযোগ পেতেন।
আকাশ চোপড়ার এ মন্তব্যের কারণ কাল আইপিএলে পাঞ্জাব কিংসের বিপক্ষে কলকাতার গড়া একাদশ। নিউজিল্যান্ডের পেসার লকি ফার্গুসনকে বসিয়ে উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান টিম সেইফার্টকে ডাকা হয় একাদশে। অর্থাৎ একজন পেসারের বদলে ব্যাটসম্যান—দুজনই কিউই।
এদিকে ম্যাচের ফল কলকাতার পক্ষে যায়নি। দুবাইয়ে ৭ উইকেটে ১৬৫ রান তুলেও পাঞ্জাবের কাছে হারতে হয় ৫ উইকেটে। হার তো ম্যাচেরই অংশ, কিন্তু সে হারে একাদশ গড়া নিয়ে প্রশ্ন উঠলে আলোচনা হবেই। ম্যাককালামও তাই তোপ এড়াতে পারেননি।
পাঞ্জাবের রান তাড়ার সময় কলকাতার বোলার-সংকটে পড়াটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এবার আইপিএলে অভিষিক্ত কলকাতা ওপেনার ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে ২.৩ ওভার বল করতে হয়েছে। এমনকি পাঞ্জাব ৬ বলে ৫ রানের দূরত্বে থাকার সময় তাঁর হাতে বল তুলে দেন কলকাতা অধিনায়ক এউইন মরগান।
টিম সাউদি, শিবম মাভি, বরুণ চক্রবর্তী ও সুনীল নারাইন—কলকাতার নিয়মিত বোলার। এ চার বোলার মিলে ১৬ ওভার করলেও বাকি ৪ ওভার করানো নিয়ে বোলার-সংকটে পড়েন মরগান। ঘরোয়া টি-টোয়েন্টিতে ১২৯ ম্যাচে ২৮ উইকেট নেওয়া মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান নীতিশ রানাকে দিয়েও ১ ওভার বল করান মরগান। ৭ রান দেন নীতিশ। এদিকে ২.৩ ওভারে ৩০ রানে ১ উইকেট নেন ভেঙ্কটেশ।
ভারতের হয়ে ৭ টেস্ট খেলা এবং আইপিএলে চেন্নাই সুপার কিংস ও রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুর প্রতিনিধিত্ব করা ব্যাটসম্যান অভিনব মুকুন্দ আকাশ চোপড়ার টুইটের মন্তব্যে ব্যাখ্যা দেন, ‘সে (সাকিব) খেললে প্রথম ৭ ব্যাটসম্যানের মধ্যে ৫ জনই হতো বাঁহাতি। ত্রিপাঠি তিনে যেহেতু খুব ভালো করছে, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সাকিবকে এর নিচে তো আর খেলানো যায় না। এদিক ভেবে দেখেছেন
মুকুন্দের মন্তব্যের জবাব আকাশ চোপড়া দেন এভাবে, ‘আমার কথা হলো লকির জায়গায় একজন ব্যাটসম্যান খেলানো যায় না। ৪ ওভার বোলিংয়ের সুযোগ তো রাখতে হবে। (ম্যাচ চলাকালে) এখন আইয়ার ও নীতিশকে ৪ ওভার ভাগ করে নিতে হবে। কোনো বোলারই তো বিশ্রাম পাচ্ছে না।’ সাতে নামা সেইফার্ট ৪ বলে ২ রান করে রানআউট হন।
আইপিএলে এবার আরব আমিরাত অংশে এখনো মাঠে নামার সুযোগ পাননি সাকিব। কলকাতার হয়ে এ মৌসুমে প্রথম ৩ ম্যাচে খেলেছিলেন তিনি। ভালো করেননি। ৩ ম্যাচে ব্যাট হাতে করেছেন ৩৮ রান, সর্বোচ্চ ইনিংস ২৬ রানের। আর বল হাতে নিতে পেরেছেন ২ উইকেট, ওভারপ্রতি গড়ে রান দিয়েছেন ৮.১০ করে। এরপর সুনীল নারাইনকে তাঁর জায়গায় খেলায় কলকাতা।
এর আগে দিল্লি ক্যাপিট্যালসের বিপক্ষে ম্যাচে সাকিবকে না খেলানোর কারণ ব্যাখ্যায় কলকাতার সহকারী কোচ অভিষেক নায়ার বলেছিলেন, ‘শারজার মাঠ ছোট। অধিনায়ক ভেবেছেন, তিন স্পিনার খেলানো কঠিন হয়ে উঠতে পারে। পেসের কথা ভেবেই সাউদিকে নেওয়া হয়েছে।’
সাকিবের ব্যাটিং সামর্থ্য ‘প্রমাণিত’ হলেও বোলিংয়ের কারণেই সাউদিকে এগিয়ে রেখে এই কিউই পেসারকে খেলানোর ব্যাখ্যা দেন নায়ার, ‘এমন কন্ডিশনে কেমন খেলতে পারে, সেটার প্রমাণ সে (সাকিব) আগেও রেখেছে। তবে আমরা অতিরিক্ত একজন পেসার খেলাতে চেয়েছি, যে পাওয়ার প্লেতে বোলিং করতে পারে।’
কাল নারাইন ও সাউদি কলকাতার হয়ে খেলেছেন। কিন্তু একজন পেসারকে বসিয়ে ব্যাটসম্যান খেলিয়ে বোলিংয়ের সময় বিশেষজ্ঞ একজন বোলারের সংকটে ভুগেছে কলকাতা।
তাহলে সাকিবকে কেন দলে নেওয়া হলো না—এ প্রশ্নের উত্তরে কলকাতার প্রধান কোচ ম্যাককালাম বলেন, ‘সাকিবকে তো খেলানো যেতই। আমাদের স্কোয়াডে অনেক বিকল্প আছে। কোচ হিসেবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মাঝেমধ্যে নিজের মনের ওপর আস্থা রাখতে হয়। টিম সেইফার্ট সিপিএলে মিডল অর্ডারে দারুণ করেছে। আমরা ভেবেছি, মিডল অর্ডার আরও শক্তিশালী করতে হবে।’
সাকিবকে খেলানো প্রসঙ্গে ম্যাককালাম জানালেন, সাকিব ভাবনায় আছেন। সেটি অবশ্যই অলরাউন্ডার হিসেবে তাঁর দক্ষতার জন্যই, ‘দল নির্বাচনের কথা উঠলে সাকিব সব সময়ই আলোচনায় থাকে। সেটি তার দক্ষতার জন্য—বাঁহাতি স্পিন ও ব্যাটিং। সেরা তিনে ব্যাট করার দাবি রাখে সে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে সে নিচে কোথাও ব্যাট করতে পারবে না। তাই আমি নিশ্চিত যে পরেরবার দল নির্বাচনে সে আলোচনায় আসবেই।’