এক দফা দাবিতে আন্দোলনের পরিকল্পনা বিএনপির

নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে মাঠের আন্দোলনে নামার চিন্তা করছে বিএনপির হাইকমান্ড। এই আন্দোলন ঠিক কবে নাগাদ শুরু হবে, তা এখনো পর্যন্ত নির্ধারিত না হলেও জানা গেছে, আগামী ফেব্রুয়ারিতে বিরোধী দলগুলোর মত উপেক্ষা করে একতরফা নির্বাচন কমিশন গঠিত হলে ধারাবাহিক আন্দোলনের সূচনা হবে। যা নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারের এক দফা দাবিতে রূপ নিতে পারে।

দলটির নীতিনির্ধারকরা বলেছেন, নিরপেক্ষ সরকার ছাড়া বিএনপি নির্বাচনে অংশ নেবে না। সর্বদলীয় আন্দোলন গড়ে তুলে এ দাবি আদায় করা হবে।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এ দেশের মানুষ আন্দোলন করবেই। আন্দোলন হবেই। কারণ দাবি আদায়ের জন্য আন্দোলন হবে, এ দেশের জনগণ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য আগে আন্দোলন করেছে, এবারো করবে।তিনি আরো বলেন, দাবি আমাদের একটাই, আমরা শুধু নির্বাচনকালীন সময়ে একটা নিরপেক্ষ সরকার চাই।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর রায় বলেন, ‘দেশের জনগণকে মুক্ত করতে চাই স্বল্প সময়ের জন্য একটা মরণকামড় দিতে হবে। ডু অর ডাই- এক দফা।’আন্দোলনের প্রস্তুতি নিতে সাংগঠনিক নানা পরিকল্পনা সাজাচ্ছে বিএনপি। দল গোছানোর পাশাপাশি দলের কেন্দ্রীয়, তৃণমূল, নাগরিক ও পেশাজীবী সমাজের প্রতিনিধিদের সাথে সিরিজ বৈঠক করা হয়েছে। এসব বৈঠক থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ মত যুক্ত করে আন্দোলনের পথ পরিক্রমা তৈরি করা হবে।

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকারসহ বেশ কিছু দফা জাতির সামনে তুলে ধরা হতে পারে। আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এসব তুলে ধরা হবে। এতে দেশী-বিদেশী গণমাধ্যম, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হতে পারে। তবে জাতির সামনে এ রূপরেখা তুলে ধরার দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী সূত্রে জানা গেছে, দফার সংখ্যা কত হবে তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। প্রাথমিকভাবে তৈরি খসড়ায় অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যাবে না- এমনটা ধরে নিয়েই তারা পরিকল্পনা তৈরি করছেন। কোন প্রক্রিয়ায় নির্বাচনকালীন সরকার গঠন করা যেতে পারে তা নিয়ে সমমনা রাজনৈতিক দলের সাথে বৈঠক করবে বিএনপি। প্রয়োজনে দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সাথেও এ ইস্যুতে কথা বলার চিন্তা রয়েছে। দলটির নেতারা জানান, নির্বাচনকালীন সরকার ইস্যুতে তারা একটি স্থায়ী সমাধান চান। যাতে প্রতিবার ভোটের আগে এ ইস্যু নিয়ে ঘোলাটে পরিস্থিতির সৃষ্টি না হয়। এ দাবির পেছনে যৌক্তিক কারণও তুলে ধরা হবে। দলীয় সরকারের অধীনে বিগত দু’টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনের চিত্র তুলে ধরবেন তারা।

নেতারা বলছেন, নির্বাচন কমিশন বা প্রশাসনের ইচ্ছা থাকলেও দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয় বলে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এমন ধারণা জন্ম নিয়েছে। তাই দিন দিন মানুষ ভোটের প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। ভোটকেন্দ্রে কমছে ভোটার উপস্থিতি। মানুষকে ভোটকেন্দ্রমুখী করার একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার। ভোটের আগে এমন একটি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে যাতে ভোটারদের মনে আস্থা ফিরে আসে যে, তারা নিজের পছন্দমতো জনপ্রতিনিধি বেছে নিতে পারবেন। নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে যারাই ক্ষমতায় আসুক তা সাদরে গ্রহণ করা হবে বলেও জাতির কাছে প্রতিশ্রুতি দেবে দলটি।

দ্বিতীয় দফায় গুরুত্ব পাবে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন। জনগণের আস্থাভাজন একটি কমিশন গঠনে সব দলের সাথে আলোচনা করার প্রস্তাব দেয়া হতে পারে। তবে তাদের আশঙ্কা যেভাবেই কমিশন গঠন করা হোক তা ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহই হবে। তবে দলটির নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, নির্বাচন কমিশন গঠনকে তারা মূল ইস্যু করতে চান না। তাদের মতে, দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে সেখানে ইসি যতই শক্তিশালী হোক তাদের পক্ষে নিরপেক্ষভাবে কাজ করা কঠিন। তবুও এ ইস্যুকে সামনে রেখে কাজ শুরু করেছে দলটি। কমিশন গঠনের আগে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে আলোচনা করা হবে। পাশাপাশি বর্তমান কমিশনের বিরুদ্ধে যে ৪২ বিশিষ্ট নাগরিক রাষ্ট্রপতির কাছে চিঠি দিয়েছিলেন তাদের মতামতও নেয়া হবে। ইতোমধ্যে তাদের সাথে অনানুষ্ঠানিক যোগাযোগ শুরু হয়েছে। তাদের মতকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হবে। নির্বাচন কমিশন গঠন ইস্যুতে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি দেয়াসহ প্রয়োজনে আদালতে যাওয়ার বিষয়টিও ভাবা হচ্ছে।

সূত্র আরো জানায়, নির্বাচনকালীন সরকার ও ইসি ছাড়াও আরো কিছু দফা জাতির সামনে তুলে ধরা হবে। এর মধ্যে রয়েছে, দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার স্থায়ী মুক্তি। তার বিরুদ্ধে করা মামলাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত দাবি করে তা প্রত্যাহারের আহ্বান জানানো হবে। পাশাপাশি দলের নেতাকর্মীসহ বিরোধী মতের বিরুদ্ধে করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহারের দাবিও জানাবে দলটি।

জানা গেছে, আন্দোলনের প্লাটফর্মে বিরোধী সব দলকে একীভূত করার চেষ্টা করবে বিএনপি। নেতারা বলেছেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া দেশের সব রাজনৈতিক দল নিরপেক্ষ নির্বাচন চায়। তারা দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন চায় না। সে ক্ষেত্রে আন্দোলনও হবে একমুখী, এক দফা এবং সর্বদলীয়। সেটি হচ্ছে নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *