শত শত মামলার পাহাড়ে বিএনপি কর্মীরা
বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের ৬২ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে ৪০০ জনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে পল্টন থানার পুলিশ। রবিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে সংঘর্ষের ঘটনায় গতকাল সোমবার এই মামলা করা হয়।
বিএনপি দাবি করেছে, গত ১৫ বছর বিএনপির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে এভাবে মামলা হয়ে আসছে। প্রায় মামলায় দলের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের নাম উল্লেখ করে কয়েক শ জনকে আসামি করা হচ্ছে।
ঢাকা থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা—সব জায়গায় করা পুলিশের মামলায় এই প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
গত বছরের ২৭ অক্টোবর এই পল্টন থানায়ই ১৪-১৫ শ জন অজ্ঞাতপরিচয় নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। গত ২২ ডিসেম্বর হবিগঞ্জে পুলিশ ও বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় পরদিন দুই হাজার নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়। একই ঘটনায় গত ৫ জানুয়ারি জেলা পরিষদের রেস্টহাউস ভাঙচুরের অভিযোগে স্থানীয় বিএনপি নেতাকর্মীসহ অজ্ঞাতপরিচয় আরো ৪০০ জনের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করা হয়। গত ৩০ ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জ শহরে আওয়ামী লীগ-বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনায় ছয়টি মামলা করা হয়। আসামি করা হয় প্রায় এক হাজার বিএনপি নেতাকর্মীকে।
মামলাগুলোয় অভিযোগও আনা হয় প্রায় অভিন্ন। সরকারি কাজে বাধা দেওয়া, ইটপাটকেল ও দেশীয় অস্ত্র ব্যবহার করে পুলিশকে আহত করা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ইত্যাদি।বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর কালের কণ্ঠের কাছে দাবি করেন, সারা দেশে এ পর্যন্ত বিএনপির ৩৫ লাখের বেশি নেতাকর্মী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে মামলা দেওয়া হয়েছে। মামলার সংখ্যা এক লাখের বেশি। তিনি বলেন, কিছুদিন ধরে রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর নিপীড়ন বেড়েছে। রবিবার সন্ধ্যায় দলের পল্টনের অফিসের সামনে ছাত্রদলের নেতাকর্মীদের মিছিলে বাধা দিয়ে অনেককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ভোররাত পর্যন্ত কার্যালয় অবরুদ্ধ করে রাখে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দলীয়ভাবে মামলার তথ্য সংগ্রহ করতে গিয়ে তাঁরা দেখেছেন, একই দিনে বিভিন্ন থানায় একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। একই আসামি উত্তরা থানা এলাকা থেকে ২০-২৫ মিনিটের মধ্যে যাত্রাবাড়ীতে গিয়ে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর করে কিভাবে? আবার ওই ব্যক্তিই আধাঘণ্টার মধ্যে যাত্রাবাড়ী থেকে গাবতলী, মিরপুর এলাকায় গিয়ে অপরাধ সংঘটিত করেছে। তিনি বলেন, মামলার নামে যা হচ্ছে তা ‘রহস্যজনক’ ও ‘অবিশ্বাস্য’।
দলীয় সূত্র বলছে, মাসখানেক আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং তাঁর উন্নত চিকিৎসার দাবিতে ডাকা সমাবেশকে ঘিরে হবিগঞ্জ ছাড়াও ফেনী, নরসিংদী, চট্টগ্রামসহ আরো কয়েকটি জেলায় মামলা করে পুলিশ। মাত্র কয়েকটি মামলায় আসামির সংখ্যা কয়েক হাজার। যেমন—নরসিংদীতে গত ২৪ নভেম্বর বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবীর খোকনসহ ২০০ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। গত ৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে বিএনপির মানববন্ধনে পুলিশের সঙ্গে ধাওয়াধাওয়ির ঘটনায় ৭৫ নেতাকর্মীর নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতপরিচয় আরো কয়েক শ জনকে আসামি করা হয়।
প্রতিটি মামলায় এত বিপুল মানুষকে আসামি করার কারণ কী—জানতে চাইলে সুশাসনের জন্য নাগরিকের (সুজন) সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার কালের কণ্ঠকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনী গ্রেপ্তার বাণিজ্য ও নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির জন্য এভাবে শত শত মানুষকে আসামি করছে। এটা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যাচ্ছে। এর অবসান হওয়া দরকার।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ সদর দপ্তরের ডিআইজি (মিডিয়া) হায়দার আলী খান গত রাতে বলেন, রাজনৈতিক কর্মসূচির ক্ষেত্রে অনেক মানুষের সমাগম হয়। তখন কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে নির্দিষ্ট কাউকে দায়ী করা যায় না। এ কারণে অজ্ঞাতপরিচয় কয়েক শ জনকে আসামি করে মামলা করা হয়। পরে তদন্তে যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা মেলে, তাদেরই অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়।
হায়দার আলী বলেন, উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে কিছু করা হয় না। কেউ যদি মনে করেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে আসমি করা হয়, সেই ধারণা ভুল।
মজনুসহ ১০ জন রিমান্ডে : রবিবারের ঘটনায় করা মামলায় ঢাকা মহানগর বিএনপির সদস্যসচিব রফিকুল আলম মজনুসহ দলটির ১০ নেতাকর্মীকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিয়েছেন আদালত। একই মামলায় বিএনপির আরো ১৩ নেতাকর্মীকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রিমান্ডের আদেশ পাওয়া অন্য ৯ আসামি হলেন মোহাম্মদ আলী মান্নান, মফিকুল ইসলাম, সোহেল সিকদার, জহিরুল ইসলাম, কাজী ইমতিয়াজ আহমেদ, মো. মিন্টু, ফারহান আলী, মনিরুল ইসলাম ও সাদেকুর রহমান।