করোনাজয়ীর রক্তপ্লাজমায় চিকিৎসা হবে অসুস্থের
করোনা মহামারী শুরুর দিকে মাসখানেক ভাইরাসটিতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর তালিকায় এক নম্বরেই ছিল ইতালি। দুই সপ্তাহ ধরে সেই ভয়ানক পরিস্থিতি কিছুটা প্রশমিত হয়েছে। আর দেশটির চিকিৎসক বিজ্ঞানীরা দেখছেন আশার আলো, করোনায় আক্রান্ত হয়েও ইতিমধ্যে সুস্থ হওয়া ব্যক্তিদের রক্ত প্লাজমা ব্যবহার করে অসুস্থদের চিকিৎসার চেষ্টা চালাচ্ছেন তারা।
ইতালিতে এ পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ১ লাখ ৬৫ হাজার মানুষ। এরমধ্যে মারা গেছেন ২১ হাজার ৬৪৫ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৩৮ হাজার। খবর সিএনএনের।
চিকিৎসাবিজ্ঞানীরা বলছেন, একজন করোনাভাইরাস পজিটিভ ব্যক্তি সুস্থ হয়ে উঠলে সংক্রমণের সঙ্গে যুদ্ধ করেই সেরে ওঠেন। কিংবা যার মধ্যে করোনার ভাইরাস শনাক্ত হয়েছে কিন্তু অসুস্থ হননি, এমন ব্যক্তির সংক্রমণের সঙ্গে লড়াই চালাতে গিয়ে তার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে। এমন অ্যান্টিবডি তার রক্তেই থেকে যায়। করোনাভাইরাস থেকে সুস্থ হওয়া কারও রক্তে এ ধরনের অ্যান্টিবডি প্রচুর পরিমাণে পাওয়া গেলে তাকে রক্তদান করতে বলা যায়। সেই রক্ত থেকে প্লাজমা বের করে নিতে হবে। এসব অ্যান্টিবডিযুক্ত প্লাজমা আরেকজন সংক্রমিত ব্যক্তির শরীরে ঢুকিয়ে দিলে তার রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা চাঙ্গা হবে। তিনিও করোনা ভাইরাসের সঙ্গে আরও জোরালোভাবে লড়াই করতে পারবেন। হয়তো বেঁচেও যাবেন। এর আগে ইবোলার মতো কিছু ভাইরাসের মোকাবেলায় প্লাজমা থেরাপি ব্যবহার করা হয়েছে।
ইতালির উত্তরাঞ্চলীয় লুম্বার্ডি শহরে অবস্থিত ইউনিভার্সিটি অব পাভিয়া সান মাত্তিও হাসপাতালের ভাইরাসবিশেষজ্ঞ ড. ফস্টো বালডান্টি বলেন, ভয়াবহতা থেকে ভালো কিছু পাওয়ার আশা দেখছি আমরা। আমাদের দেশে আক্রান্তের সংখ্যা যেমন বেশি ছিল, তা থেকে আমরা একটি সুবিধাও পাচ্ছি। সেটি হচ্ছে, সুস্থ হয়ে ওঠা মানুষের সংখ্যাও বেশি। রক্তদাতাও অনেক পাওয়া যাবে।
ড. বালডান্টি বলেন, প্লাজমা ট্রিটমেন্ট আইসিইউতে থাকা করোনা রোগীর জীবন বাঁচাতে খুবই সহায়ক হতে পারে। যদিও ইতালিতে এই চিকিৎসা কৌশল করোনার ক্ষেত্রে এখনও পরীক্ষামূলক পর্যায়েই রয়েছে। তবে আশার আলো দেখছি আমরা। যদি এ পদ্ধতি সফল হয়, তবে ইতালির ট্র্যাজেডিই রূপ নেবে মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ের অস্ত্রে।
ইতালির জাতীয় ব্লাড সেন্টারের মহাপরিচালক জিয়ানকারলো মারিয়া লিয়ুমব্রুনো জানান, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে আমরা এ ধরণের পরীক্ষা শুরু করবো। আমরা এ মাসের শেষদিকে রক্তদাতাদের বেছে নেব। তার আগে তাদের শরীরে অ্যান্টিবডি কতটা রয়েছে, তারও পরীক্ষা করে নিতে হবে। ১৭ লাখ রক্তদাতার মধ্যে থেকে তাদের বেছে নিতে হবে। তিনি জানান, কারও অ্যান্টিবডি উপযুক্ত প্রমাণ মিললেই ব্লাডব্যাংক গড়ে তোলা হবে।