বহুরূপী প্রতারক ওবায়দুর
ওবায়দুর রহমান নামে এক বহুরূপী প্রতারক নানা পরিচয়ে ব্যবসায়ীদের ফাঁদে ফেলে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। আলিশান বাড়ি বানাচ্ছে নিজ জেলা ফরিদপুরে। পুলিশ সুপার পরিচয়ে প্রতারণাকারী এই ওবায়দুর এখন ধরা খেয়ে পুলিশ রিমান্ডে আছে। অধিকাংশ অভিযোগের কথা সে স্বীকারও করেছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
ওবায়দুর রহমান ‘পুলিশ সুপার’ সেজে চট্টগ্রামের একজন বড় ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের হুমকি দিয়ে তার কাছ থেকে বাগিয়ে নিয়েছে দামি গাড়ি ও নগদ আট লাখ টাকা। তার প্রতারণার জাল ঢাকাসহ সারাদেশে বিস্তৃত। ঢাকার গার্মেন্ট এক্সেসরিজ প্রস্তুতকারক একটি প্রতিষ্ঠানের মালিকের ছোট ভাই পরিচয় দিয়ে ব্যবসায়িক অংশীদারদের কাছ থেকে পাওনা লাখ লাখ টাকাও তুলে নিয়েছে এই প্রতারক। সেখানেও নিজেকে পরিচয় দিয়েছে পুলিশ সুপার (এসপি) হিসেবে। কিন্তু ধরা পড়ার পর জানা গেল, ওবায়দুর একজন বহুরূপী প্রতারক। পুলিশের কেউ না। হাতিরঝিল থানা পুলিশ গত সোমবার রাতে রাজধানীর মগবাজার এলাকা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এই প্রতারক নিজেকে কখনও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার, আবার কখনও বিভিন্ন থানার ওসি হিসেবেও পরিচয় দেয়। ওয়ারেন্ট থাকার কথা বলে টাকা হাতিয়ে নেয় নানাজনের কাছ থেকে। তার গাড়িতেও থাকত এসপি এবং ওসি লেখা স্টিকার। কখনও নিজেকে বহুজাতিক কোম্পানির পরিচালক, এনজিও মালিক, আবার কখনও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে প্রতারণা করে আসছিল ওবায়দুর। প্রতারণার টাকায় গ্রামের বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারীতে গড়ে তুলছে আলিশান বাড়ি।
প্রতারণার শিকার পলিব্যাগ ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোস্তাহিদুর রহমান জানান, চলতি বছরের মার্চে মগবাজারের মধুবাগ এলাকার সড়কে তার প্রাইভেটকার দুর্ঘটনায় পড়ে। ওই সময় ঘটনাস্থলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে ওবায়দুর রহমান তার পাশে দাঁড়ায়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে তাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। নিজেদের মধ্যে মোবাইল ফোন নম্বর আদান-প্রদান হয়। আলাপ হয় বিভিন্ন সময়ে। এক পর্যায়ে এসপি পরিচয় দেওয়া ওবায়দুর রহমান তাকে বলেন, যে কোনো সমস্যায় তিনি তার পাশে থাকবেন। এতে আশ্বস্ত হয়ে মোস্তাহিদুর তাকে জানান, বিভিন্ন ব্যক্তি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের কাছে তার কোটি কোটি টাকা বকেয়া পড়ে আছে। তখন ওই টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলে সবার কাগজপত্র নেয় প্রতারক ওবায়দুর। এরপর ওই ব্যবসায়ী জানতে পারেন, তার ছোট ভাই এবং পুলিশ সুপার পরিচয় দিয়ে বিভিন্নজনের কাছ থেকে ওবায়দুর টাকা তুলে নিয়েছে।
পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের ডিসি হারুন অর রশীদ জানান, গ্রেপ্তার হওয়া ওবায়দুর মহাপ্রতারক। তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির অনেক দলিল, ভুয়া সিমকার্ড, ওয়্যারলেস সেটসহ প্রতারণার বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়েছে। ওই প্রতারককে জিজ্ঞাসাবাদ করে তার প্রতারণার আরও তথ্য উদ্ঘাটন করা হচ্ছে।
পুলিশ জানায়, প্রতারক ওবায়দুর নানা পরিচয়ে চট্টগ্রামের ওশান অ্যাপারেল থেকে ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা, এরশাদ নিটের মালিকের কাছ থেকে তিন লাখ টাকা, ইউনিয়ন গার্মেন্টের মালিকের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা এবং ফ্যাশন ক্রাফটের মালিকের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা আত্মসাৎ করে।
পুলিশের তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল জোনের অতিরিক্ত উপকমিশনার হাফিজ আল ফারুক সমকালকে বলেন, ওবায়দুরের প্রতারণার শিকার একজন ব্যবসায়ী মামলা করেছেন। ওই মামলায় তাকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রতারক ওবায়দুর ব্যবসায়ীদের কাছে নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসপি পরিচয় দিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা স্বীকার করে তথ্য দিয়েছে। এ ছাড়া সে হাতিরঝিল থানার ওসি পরিচয় দিয়ে অনেকের কাছ থেকে টাকা হাতিয়ে নেওয়ার কথা জানিয়েছে।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, সরকারি প্লট বা ফ্ল্যাট পাইয়ে দেওয়া, জমি দখল ও পাওনা টাকা তুলে দেওয়ার কথা বলেও প্রতারণা করে আসছিল ওবায়দুর। তার কাছ থেকে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারের ভয় দেখিয়ে হাতিয়ে নেওয়া গাড়িটি জব্দ করা হয়েছে।