দিনাজপুরের চার উপজেলাই বারবার আলোচনায়
ছোট-বড় নানা ঘটনায় বারবার আলোচনায় দিনাজপুর-৬ আসনের অন্তর্ভুক্ত বিরামপুর, ঘোড়াঘাট, হাকিমপুর ও নবাবগঞ্জ উপজেলা। এই চার উপজেলার মধ্যে দুটির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার ওপরেই (নবাবগঞ্জ ও ঘোড়াঘাট) হামলা হয়েছে। এমনকি ওই এলাকার দুটি থানার ভেতরে গুলির ঘটনাও ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর সরকারি বাসায় ঘোড়াঘাট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ওয়াহিদা খানম ও তার বাবার ওপর হামলা হয়। এ ঘটনায় গ্রেপ্তার তিন আসামিকে এখন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে দিনাজপুর জেলা পুলিশ। প্রাথমিকভাবে মূল সন্দেহভাজন আসাদুল ইসলাম র্যাবের কাছে চুরির গল্প শোনালেও তা নিয়ে অনেকের সংশয় রয়েছে। বর্তমানে দিনাজপুর-৬ আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে রয়েছেন শিবলী সাদিক।
২০১৪ সালের ১ অক্টোবর নবাবগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফরহাদ হোসেনের ওপর হামলা করে স্থানীয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। ৩৯টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নৈশপ্রহরী নিয়োগকে কেন্দ্র করে ওই হামলা হয়। এ সময় ইউএনও কার্যালয়সহ কয়েকটি সরকারি কার্যালয়ে ভাংচুর চালায় তারা। এ ঘটনায় তৎকালীন জেলা প্রশাসক শামীম আল রাজীর প্রতিবেদনে ইউএনওকে মারধরের ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের সম্পৃক্ততার অভিযোগ আনা হয়।
২০১৯ সালের ১ মে নবাবগঞ্জ উপজেলার মাইলা নদীতে ৩ কোটি ৯৬ লাখ টাকার খনন কাজ শুরু করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। খনন নকশায় অনেকের ব্যক্তিগত জমি পড়লে তা উদ্ধারে স্থানীয়রা বিষয়টি যুবলীগ নেতাদের জানান। পরে সেখানে যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা খনন কাজের তথ্য জানতে চান। এ সময় নবাবগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান লোকজন নিয়ে সেখানে হাজির হন। কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে আতাউর রহমান নিজের ব্যবহূত শটগান দিয়ে গুলি ছোড়েন। এতে ৩ জন গুলিবিদ্ধ হন বলে যুবলীগ দাবি করে। এ সময় যুবলীগ নেতাকর্মীদের হামলায় উপজেলা চেয়ারম্যান আহত হন।
নবাবগঞ্জ থানার ওসি অশোক কুমার চৌহান বলেন, ২০১৯ সালের মে মাসে উপজেলা চেয়ারম্যান ও এমপি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে পৃথক দুটি মামলা দায়ের হয়। সেই মামলা তদন্তাধীন। যুবলীগের করা মামলায় উপজেলা চেয়ারম্যানকে আসামি করা হয়েছে। মামলাগুলোতে সবাই জামিনে রয়েছেন।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে দিনাজপুরে আসেন রংপুর বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব ভূঞা। পরে দিনাজপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ছাদবাগান উদ্বোধন শেষে তিনি সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় পুলিশ তদন্ত করছে। আসলে কী ঘটেছে, তা নিশ্চয় পুলিশের তদন্তে বেরিয়ে আসবে।
এদিকে ইউএনও ওয়াহিদা খানমের ওপর হামলার প্রতিবাদে উপজেলা পরিষদের সামনে মঙ্গলবার দুপুরে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন স্থানীয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। এ ছাড়াও আজাদ মোড়ে ব্যবসায়ীদের আয়োজনে মানববন্ধন ও মিছিল হয়েছে।
ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থার আরও উন্নতি হয়েছে :জাতীয় নিউরোসায়েন্স ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ঘোড়াঘাটের ইউএনওকে বিকেলে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) থেকে হাই ডিপেনডেন্সি ইউনিটে (এইচডিইউ) স্থানান্তর করা হয়েছে। ওয়াহিদা খানম এখন সবাইকে চিনতে ও কথা বলতে পারছেন।
ওয়াহিদার জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের প্রধান নিউরোট্রমার বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. জাহেদ হোসেন জানান, ওয়াহিদার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল। তিনি ভালো আছেন। নতুন করে খারাপ কিছু হয়নি। তবে শরীরের ডানপাশের এখনও কোনো উন্নতি হয়নি। এ জন্য ফিজিওথেরাপি দেওয়া হচ্ছে।
ওয়াহিদা এখন শঙ্কামুক্ত কিনা- এ ব্যাপারে ডা. জাহেদ হোসেন বলেন, শঙ্কামুক্ত- বলাটা কঠিন। তবে যে কন্ডিশনের জন্য তিনি খারাপ ছিলেন, সেই কন্ডিশনের ইমপ্রুভ হয়েছে। মোটামুটি সব প্যারামিটারেই তার উন্নতি হয়েছে। পাল্স, ব্লাড প্রেশার, মানসিক কন্ডিশন, জ্ঞানের মাত্রা, খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপার- সবকিছু চিন্তা করলে অনেক উন্নতি হয়েছে।
দু’জনকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে :ইউএনও ওয়াহিদা খানম ও তার বাবা ওমর আলীর ওপর হামলার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক তিনজনের মধ্যে দু’জনকে ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। গত সোমবার দুপুরে ওই তিনজনকে আটক করে পুলিশ। এর মধ্যে দু’জনকে রাতেই ছেড়ে দেওয়া হয়। ওই তিনজন হলেন- ইউএনওর ওপর হামলার ঘটনায় হওয়া মামলার এজাহারভুক্ত প্রধান আসামি আসাদুল ইসলামের বড় ভাই আশরাফুল ইসলাম, ইউএনওর গাড়িচালক (উপজেলা ভূমি কার্যালয়ের গাড়িচালক হিসেবে নিযুক্ত) ইয়াসিন আলী এবং ইউএনওর বাসভবনের পরিচ্ছন্নতাকর্মী অরসোলা হেমব্রম। তাদের মধ্যে আশরাফুল ও অরসোলাকে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে।