কামাল লোহানী এক বাতিঘরের নাম
ষাটের দশক থেকেই তার সঙ্গে আমার পরিচয়। তিনি ওই সময় জ্বালাময়ী সব বক্তৃতা দিতেন। ভাষা আন্দোলনের সঙ্গেও তিনি যুক্ত ছিলেন। জীবনের শুরু থেকেই তিনি সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত ছিলেন। তিনি উদিচী, ত্রান্তি , ছায়ানটের মতো সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শিল্প-সাহিত্যের মধ্য দিয়ে তিনি জীবন কাটিয়েছেন।
মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের সংবাদ বিভাগের প্রধান হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেছেন। ওই সময় তার সঙ্গে আলাপ হতো। স্বাধীনতার পর দেশ কেমন হবে সেটা নিয়ে তিনি স্বপ্নের কথা বলতেন। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তার অনেক স্বপ্ন অপূর্ণই থেকে গেছে। পাবনায় থাকার সময় থেকেই তিনি সাংস্কৃতিক, গণতান্ত্রিক আন্দোলনে যুক্ত ছিলেন। তিনি এমন একজন ব্যক্তি ছিলেন যখন যেখানে ডাকতাম ছুটে আসতেন। সবরকম সহযোগিতা করতেন। লেখালেখি তার খুবই পছন্দের ছিল। এমনকি চোখ নষ্ট হবার পরও তিনি লিখতেন। তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের নেতা। একদিকে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, অন্যদিকে সাংবাদিকতা -দুটির সমন্বয় করেই তিনি তার কাজ করে গেছেন। তিনি একজন নৃত্যশিল্পীও ছিলেন। ভালো আবৃত্তি করতেন। তার জ্বালাময়ী বক্তৃতা আমাদের মুগ্ধ করতো। তার মৃত্যুতে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট আরও অসহায় হয়ে পড়ল।
গণশিল্পীদের সঙ্গে যুক্ত সবাই এক এক করে বিদায় নিচ্ছেন। আমাদের মাথার ওপর এইসব গুণী মানুষদের ছায়া সরে যাচ্ছে। কামাল লোহানীর মতো এমন এক ব্যক্তিত্বের মৃত্যু খুবই দুঃখজনক এবং কষ্টদায়ক। এমন একটা সময়ে তিনি মারা গেলেন যে আমরা তাকে দেখতে যেতে পারলাম না। এমনকি তাকে শেষ বিদায় জানানোও হলো না।
প্রখ্যাত সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব কামাল লোহানী করোনায় আক্রান্ত হয়ে শনিবার সকালে রাজধানীর একটি হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছেন। বাংলা বেতার কেন্দ্রের অন্যতম সংগঠক ছিলেন তিনি। তাকে নিয়ে সমকালের কাছে স্মৃতিচারণ করেছেনবিশিষ্ট নাট্যকার ও অভিনেতা মামুনুর রশীদ। তার কথাগুলোই অনুলিখন করে প্রকাশ করা হলো।