হাসিনার সৈনিক নাসিমের দূর্নীতি
সামিউজ্জামান সিদ্দিকী’র কলাম
হিটলারের মৃত্যুতে কি আপনি কষ্ট পেয়েছিলেন? এরশাদের? গোলাম আযমের? আমি পাইনি। সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম মারা যাওয়ার পরে লোকের উল্লাস দেখে কষ্ট পাওয়ার কথা, কিন্তু পাচ্ছিনা।
লাখ লাখ মানুষের মৃত্যুর কারণ যিনি ঘটিয়ে যান তার মৃত্যুতে কষ্ট পেলে তার তৈরি করা সিস্টেমের কারণে দেশের স্বাস্থ্যখাত ভেঙে পড়ায় হাজার হাজার মানুষের বিনা চিকিৎসায় মারা যাওয়াকে উপহাস করা হয়। সেটা কি ঠিক হবে?
মুক্তিযুদ্ধে যে পাকিস্তানি সৈনিক অসংখ্য নারীকে রেপ করেছে, ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, গলা কেটেছে মানুষের, তার মৃত্যুতে শোকাভিভূত হওয়ার কি কিছু ছিলো? অসংখ্য মৃত্যুর কারণের মৃত্যুতে কি শোক করা উচিত?
আমি জানিনা। কারণ আমার অসহায় লাগে।
বিনা চিকিৎসায় নাসিম মরেন নাই। মরার আগেও তার জন্য সিঙ্গাপুর যাওয়ার তদারকি হচ্ছিলো। দেশের কয়টা মানুষ সিঙ্গাপুর যাওয়ার ক্ষমতা রাখে?
যে ইয়াকুব আলী চিকিৎসা না পেয়ে মরেছেন হাসপাতালে ছুটে ছুটে, যে কিশোর চিকিৎসা না পেয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়েছিল রাস্তার পাশে, যে হতভাগ্যরা সর্দি-জ্বর নিয়ে করোনা টেস্ট করাতে না পেরে সকল উপসর্গ নিয়ে মরে গেছেন, যারা একবিন্দু অক্সিজেন পায় নাই, যে ডাক্তার এয়ার এম্বুলেন্স পায় নাই, যে মা করোনায় মারা যাওয়া সন্তানের লাশ নেয়ার জন্য একা একা মর্গের বাইরে অপেক্ষা করছিলেন- তাদের শোকের অপমান কি আমি করতে পারি?
হাজার মানুষের ‘মৃত্যুর কারণ যিনি’ তার মৃত্যুতে আমার উল্লাস না আসলেও কষ্ট আসেনা!
আমি হিসাব মিলাতে পারিনা। আমার মতো অন্য অনেকেই হিসাব মেলাতে পারেন নাই। নজরুল বলেছেন-
যুগের নিয়ম এই, পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে
পীড়া দেবে তোমাকেই!
হাসিনার সৈনিক নাসিম মরে গেছেন, রেখে গেছেন স্বাস্থ্যখাতের দূর্নীতি, রেখে গেছেন সেই ৩৫ লক্ষ টাকা দামের হাসপাতালের পর্দা, মেডিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট কেনার জন্য কোটি কোটি টাকার টেন্ডারবাজির ছাপ আর পাপ। পাপ বাপকেও ছাড়েনা বলে আমাদের মধ্যের যারা প্রতিবাদ করে নাই, নাসিমের বিরুদ্ধে একটি শব্দও উচ্চারণ করে নাই, স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলে সরকারের পা চেটে হুজুর হুজুর করেছেন, তাবেদারি করেছেন এই জঘন্য ভেঙে পড়া স্বাস্থ্যখাতের সিস্টেমের, সেই মানুষরাও তাদের কাছের আপন মানুষের মৃত্যুতে দায়ী হবে! পাপের আসল ও তার চক্রবৃদ্ধির মুনাফা কেমন করে এড়াবেন?
মুক্তিযুদ্ধ শেষে পাকিস্তানের আনুমানিক ৯৩ হাজার পাকিস্তানি সেনা যখন সারেন্ডার করেছিলো অস্ত্র নামিয়ে, তখন মুক্তিবাহিনী অস্ত্র নামিয়ে ফেলাদের ওপর গণহত্যা চালায় নাই, এটা হচ্ছে শত্রুদের প্রতি রেস্পেক্ট দেখানো। ক্ষমা করে দেয়া না। কেবল দেখানো যে অস্ত্রহীন নিরীহ সৈনিকের ওপর অস্ত্র ধরাটা ইনজাস্টিস, আমরা শত্রুদের সাথেও ইনজাস্টিস করি নাই!
দুঃখজনক হইলেও সত্য নাসিমের মৃত্যুও তাই। তিনি মুক্তিযুদ্ধ করেছেন, তার সেই মুক্তিযুদ্ধ করার গর্ব চাপা দিয়েছেন নিজের করা দূর্নীতি দিয়ে। তার যুদ্ধ করার গৌরবের চেয়ে দূর্নীতির সৌরভ বেশি!
তারে ভালবাসার প্রশ্নই আসেনা, ক্ষমাও করি নাই, কিন্তু উল্লাস দেখাই নাই!
আমি এও জানি এই মুহূর্তে করোনায় আক্রান্ত হলে আমি হয়তো বিনা চিকিৎসায় মারা যাবো না, কিন্তু আমার বাপ-মা আক্রান্ত হইলে তাদের জন্য একটা আইসিইউ বেড আমি ম্যানেজ করতে পারবো না! দেশে প্রতি ১০০০ মানুষের জন্যও একটা আইসিইউ নাই!
আমার সান্ত্বনা থাকবে আমি এই জঘন্য সিস্টেমের, স্বাস্থ্যখাতের দূর্নীতির প্রতিবাদ করেছিলাম। আপনি কি নিয়ে সান্ত্বনা পাবেন? কি নিয়ে শোক করবেন- কর্ম নাকি কর্মফল?