নামকরা চিকিৎসক হওয়া হলো না মনিরার

রাজশাহীর মেয়ে সিরাজুম মনিরা সোমা চীনের একটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। এরপর গত বছরের মার্চ মাস থেকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্নশিপ করছিলেন। সেখানে আরেক ইন্টার্ন চিকিৎসক এস এম রাকিবুল আজাদের সঙ্গে মনিরার পরিচয় হয়। এরপর তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গড়ে ওঠে।

দুদিন আগে গত সোমবার সকালে সিরাজুম মনিরার লাশ উদ্ধার করে খিলক্ষেত থানা–পুলিশ। মুনিরার দুই হাত ও গলায় কালো স্কচটেপ দিয়ে প্যাঁচানো ছিল। খবর পেয়ে রাজশাহী থেকে ঢাকায় আসেন মনিরার মা–বাবা। মনিরার মা হোসনে আরা রাজশাহীর একটি স্কুলের শিক্ষিকা। আর বাবা আতাউর রহমান প্রাণিসম্পদ বিভাগের সহকারী উপসহকারী প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা।

সিরাজুম মনিরাকে খুন করার অভিযোগে রাকিবুল আজাদকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এই খুনের রহস্য উদঘাটনের জন্য আজ বুধবার ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত আজাদকে তিন দিন রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করার অনুমতি দিয়েছেন।

খিলক্ষেত থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুন্সী ছাব্বির আহম্মদ প্রথম আলোকে বলেন, এ হত্যার ঘটনায় রাকিবুল আজাদ জড়িত বলে সন্দেহ করা হচ্ছে। দুজনে বাসা ভাড়া নিয়ে একসঙ্গে থাকতেন বলে জানা গেছে। তবে কী কারণে সিরাজুম মনিরাকে আজাদ খুন করেছেন, সেই বিষয়টি জানার চেষ্টা চলছে। আসামি আজাদকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে খুনের রহস্য জানা সম্ভব হবে।বিজ্ঞাপন

বড় চিকিৎসক হওয়ার স্বপ্ন ছিল মুনিরার
খুন হওয়া সিরাজুম মনিরার মা–বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, সিরাজুম মনিরা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিকে জিপিএ–৫ পেয়েছিলেন। এরপর আট বছর আগে (২০১২) সালে যান চীনে। সেখানকার একটি মেডিকেল কলেজ থেকে এমবিবিএস পাস করেন। বছর দুয়েক আগে তিনি বাংলাদেশে আসেন। এরপর গত বছরের মার্চ মাস থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসক হিসেবে কাজ করছিলেন।

মনিরার বাবা আতাউর রহমান কিছুটা অসুস্থ। তাঁর মা হোসনে আরারও কিডনিজনিত সমস্যা রয়েছে।

আতাউর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, চীন থেকে এমবিবিএস পাস করার পর তাঁর মেয়ে ঢাকায় থাকতে শুরু করেন। তাঁর মেয়ে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ইন্টার্ন শুরুর আগে তিনি একটি বাসা ভাড়া করে দিয়ে গিয়েছিলেন। তবে ইন্টার্ন শুরু করার পর গত বছর তাঁর মেয়ে জানিয়েছিলেন, হাসপাতালের কাছাকাছি কোনো বাসায় থাকতে পারলে সুবিধা হয়। তখন তিনি মেয়েকে পরামর্শ দেন হাসপাতালের কাছে একটি বাসা ঠিক করতে। মেয়ে মনিরাও তাঁকে জানিয়েছিলেন, হাসপাতালের কাছে খিলক্ষেতের একটি বাসায় সে উঠেছে।

খিলক্ষেত থানা–পুলিশ এবং মামলার নথিপত্রের তথ্য বলছে, গত বছরের এপ্রিল মাসে খিলক্ষেতের একটি বাসা ভাড়া নেন সিরাজুম মনিরা ও রাকিবুল আজাদ।

মনিরার মা হোসনে আরা মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, ছোটবেলা থেকে তাঁর মেয়ের স্বপ্ন ছিল, সে একজন নামকরা চিকিৎসক হবেন। খুন হওয়ার আগের দিন দুপুরেও মনিরার সঙ্গে তাঁর কথা হয়। মনিরা লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসাবিদ্যায় উচ্চতর ডিগ্রি নিতে চেয়েছিলেন। তাঁর স্বপ্ন ছিল, অনেক বড় নামকরা একজন চিকিৎসক হবেন।

মনিরার বাবা ও মামলার বাদী আতউর রহমান বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে মেয়ের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়েছি। আমার স্বপ্ন ছিল, মেয়ে যেন চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করতে পারে। মেয়ে এমবিবিএস পাসও করল। কিন্তু মেয়ে আমার মানুষের সেবা করার সুযোগ পেল না। যে আমার মেয়েকে খুন করেছে, তার যেন দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হয়।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *