দরপত্র জমার আগেই কোটি টাকার কাজ ভাগাভাগি
আগে দরপত্র বিক্রি হলেও পরে তা জমা নেওয়া হয়নি। এর আগেই কোটি টাকার চারটি প্রকল্পের কাজ শুরু হয়ে গেছে। উৎকোচ নিয়ে পছন্দের ঠিকাদারদের মধ্যে কাজ ভাগাভাগি করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ চিত্র মানিকগঞ্জ পৌরসভার। পৌর মেয়র মো. রমজান আলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী বেল্লাল হোসেন এই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। অবশ্য দুজনই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির কোনো সদস্য এসব প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ার বিষয়টি জানেন না। কমিটির সভাপতি পৌরসভার প্যানেল মেয়র আবদুর রাজ্জাক বলেন, দরপত্র আহ্বানের পর তা বিক্রি ও গ্রহণ করা হবে। এরপর সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পের কাজের দায়িত্ব পাবে। কিন্তু দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই চারটি প্রকল্পের কাজ শুরুর বিষয়টি তাঁর জানা নেই। কোনো অনিয়ম হলে দরপত্র বাতিলের সুপারিশ করা হবে।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয় থেকে পাওয়া নথিপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, পৌরসভার ২০২০-২১ অর্থবছরে সাতটি গুচ্ছে (প্যাকেজ) বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ হওয়ার কথা ছিল। ৭ জুন পৌরসভার রাজস্ব তহবিলের আওতায় ২ কোটি ৭৭ লাখ ৪২ হাজার ১৫৮ টাকায় ৭টি প্রকল্পের কাজের জন্য দরপত্র আহ্বান করা হয়। গত বুধবার পর্যন্ত দরপত্রের শিডিউল কেনা এবং পরদিন বৃহস্পতিবার বেলা দুইটা পর্যন্ত দরপত্র জমা দেওয়ার সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে চলমান লকডাউনে বিধিনিষেধের কারণে দরপত্র আর জমা নেওয়া হয়নি।
কাজ শুরু করা প্রকল্পের মধ্যে রয়েছে গঙ্গাধরপট্টির রতন মজুমদারের বাসা থেকে শামীমের বাসা পর্যন্ত রাস্তা উঁচুকরণ, সরকারি দেবেন্দ্র কলেজের অধ্যক্ষের বাসভবন থেকে শামীমের বাসা পর্যন্ত রাস্তা উঁচুকরণ, বকজুরী সেতু থেকে মালঞ্চ পৌরসভার শেষ সীমানা পর্যন্ত রাস্তা উঁচুকরণসহ সংস্করণ এবং বেউথা আইআরপির উত্তর পাশে গ্যারেজ ও দোকান নির্মাণ। এসব প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ১ কোটি ১৬ লাখ ১৮ হাজার ৯২৭ টাকা। প্রাক্কলিত দরের চেয়ে ৫ ভাগ কমে এই ৪ প্রকল্পের চুক্তিমূল্য ধরা হয় ১ কোটি ১০ লাখ ৩৯ হাজার ৯৮১ টাকা।
এ ছাড়া বাকি তিনটি গুচ্ছের প্রকল্পের কাজ হলো পূর্ব দাশড়া হেকিম রওশন আলীর বাড়ি থেকে চন্দন হুরের বাড়ি এবং ইন্দিরার বাড়ি থেকে বৈরাগীর আখড়া পর্যন্ত রাস্তা উঁচুকরণ, বেউথা পুরোনো পানির অফিসের স্থানে মার্কেট নির্মাণ এবং কোর্ট সেতু থেকে রমজান আলী সেতু পর্যন্ত বেউথা রাস্তা আলোকিতকরণ।
দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সূত্রে জানা গেছে, এই দরপত্র নামসর্বস্ব পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। ডিএফপির তালিকাভুক্ত নয়, এমন একটি স্থানীয় পত্রিকায় দরপত্রের নোটিশ প্রকাশ করা হয়। এ ছাড়া নিয়ম থাকলেও পৌরসভার নোটিশ বোর্ডে দরপত্রের নোটিশ টাঙানো হয়নি।
সোহা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের মালিক সাদিকুল ইসলাম বলেন, বুধবার পৌরসভার কোষাধ্যক্ষ আলী আজমের কাছে দরপত্রের শিডিউল কিনতে যান। তবে নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁকে দরপত্রের শিডিউল দেওয়া হয়নি।
এ ব্যাপারে কথা হলে আলী আজম বলেন, তাঁর কাছে দরপত্রের কোনো শিডিউল দেওয়া হয়নি। এ কারণে কোনো ঠিকাদার তাঁর কাছে শিডিউল কিনতে যাননি।
গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সরেজমিনে গঙ্গাধরপট্টির রতন মুজমদারের বাসা থেকে শামীমের বাসা পর্যন্ত রাস্তা উঁচুকরণ কাজে বালু ও ইটের খোয়া ফেলার কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে দেখা গেছে। মেসার্স শাহিন অ্যান্ড সন্স নামের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এই কাজ করছে। প্রতিষ্ঠানটির মালিক শহীদুল ইসলামও শিডিউল কিনেছেন।
বেউথা আইআরপির উত্তর পাশে গ্যারেজ ও দোকান নির্মাণকাজ করছেন মেয়র রমজান আলীর ঘনিষ্ঠজন দেলোয়ার হোসেন। স্থানীয় দুই ব্যক্তি অভিযোগ করেন, দরপত্র জমা দেওয়ার আগেই নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী দিয়ে সেখানে গ্যারেজ ও দোকান নির্মাণ করা হচ্ছে।
পৌর মেয়র রমজান আলী বলেন, কয়েক দিন পর বন্যার প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এ কারণে জনস্বার্থে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষের আগেই ওই চার প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে রমজান আলী বলেন, ‘আমার কোনো আত্মীয় বা স্বজন এসব কাজ করছেন না।’
পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ও দরপত্র মূল্যায়ন কমিটির সদস্যসচিব বেল্লাল হোসেন বলেন, পৌর পরিষদের (মেয়র ও কাউন্সিলররা) মতামতের ভিত্তিতে দরপত্র প্রক্রিয়া শেষ হওয়ার আগেই চারটি প্রকল্পের কাজ শুরু করা হয়।