আফগান যুদ্ধ

চলে যাচ্ছে মার্কিন সেনারা, রেখে যাচ্ছে কী

সন্ত্রাসবাদ দমনে মার্কিন সেনারা প্রায় ২০ বছর আগে আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে। তবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী দেশটি ছাড়তে শুরু করেছে তাঁর দেশের সেনারা। গত বৃহস্পতিবার তারা ছেড়ে যায় আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় বিমানঘাঁটি বাগরাম। এদিকে আফগানিস্তানে বেড়েছে তালেবান হামলা। এ নিয়ে গত শনিবার মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমস–এর অনলাইনে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। আফগানিস্তানের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথাই উঠে এসেছে এই নিবন্ধে।

আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি। মার্কিন সেনারা এই ঘাঁটি ছেড়ে যাওয়ার পর এর নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় আফগান বাহিনী। তবে ঘাঁটিটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেনি মার্কিন বাহিনী। গত শুক্রবার আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশে।
আফগানিস্তানের বাগরাম বিমানঘাঁটি। মার্কিন সেনারা এই ঘাঁটি ছেড়ে যাওয়ার পর এর নিরাপত্তার দায়িত্ব নেয় আফগান বাহিনী। তবে ঘাঁটিটি এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর করেনি মার্কিন বাহিনী। গত শুক্রবার আফগানিস্তানের পারওয়ান প্রদেশে। 

আফগান যুদ্ধে দেশটির বাগরাম বিমানঘাঁটি যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীর প্রধান বিমানঘাঁটি হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। এই ঘাঁটির রানওয়ে দুটি ধরে কখনো অভিযান চালাতে উড়াল দিয়েছে যুদ্ধবিমান, কখনো দেশের পথে রওনা হয়েছে মার্কিনরা। আবার কখনো এসেছে চিকিৎসা সরঞ্জাম। চিঠি এসেছে–গেছে। মাঝেমধ্যে মার্কিন সেনাদের জন্য বিনোদনের আয়োজনও হয়েছে এখানে।

আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুল থেকে ৫০ কিলোমিটার উত্তরে বাগরাম বিমানঘাঁটি অবস্থিত। গত শতকে স্নায়ুযুদ্ধের সময় এই বিমানঘাঁটি নির্মাণ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর সন্ত্রাসী হামলার পরপরই আফগানিস্তানে অভিযান শুরু করে দেশটির সেনারা। সঙ্গে যোগ দেয় পশ্চিমা দেশগুলোর সামরিক জোট ন্যাটো ও যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র অন্য দেশগুলোর সেনারাও। তখন থেকে প্রায় দুই দশক যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর সেনারা আফগানিস্তানের সবচেয়ে বড় বাগরাম বিমানঘাঁটি ব্যবহার করেছে।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পরই আফগানিস্তান থেকে সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন। এর পরপরই ন্যাটো জোট এবং যুক্তরাষ্ট্রের অন্য মিত্ররাও সেনা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেয়। বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ১১ সেপ্টেম্বর আফগান যুদ্ধ শুরুর ২০তম বার্ষিকী থেকে দেশটিতে আর কোনো বিদেশি সেনা, বিশেষ করে মার্কিন সেনা থাকবে না। তবে হোয়াইট হাউস পরবর্তী সময়ে জানিয়েছে, আফগানিস্তান থেকে আগামী আগস্টের মধ্যেই সব মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।

সামনে কেবলই অনিশ্চয়তা

বাইডেনের ঘোষণা অনুযায়ী সেনা প্রত্যাহার শুরুও হয়ে গেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে বাগরাম বিমানঘাঁটি ছাড়ে বিদেশি সেনারা। এ তথ্য জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা দপ্তর। মুহূর্তটির জন্য অনেক বছর ধরেই প্রস্তুতি চলছিল। এরপরও এই বিদায় যেন ততটা জাঁকজমকপূর্ণ হলো না। আপাতদৃশ্যে বিষয়টি একধরনের অনিশ্চয়তার মধ্যে দিয়েই সম্পন্ন হলো। যেমন অনিশ্চয়তা রয়েছে ভবিষ্যৎ নিয়ে আফগান সরকারের পরিকল্পনায়। কারণ, সবশেষ বিদেশি সেনা ঠিক কখন বাগরাম বিমানঘাঁটি ছেড়েছে, সে সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলেনি যুক্তরাষ্ট্র। আফগান বাহিনীর কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে কবে এই বিমানঘাঁটি হস্তান্তর করা হবে, তা–ও পরিষ্কার করা হয়নি।

এদিকে সম্প্রতি আফগানিস্তানে তালেবানের হামলা বেড়েছে। দেশজুড়ে তারা আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করছে এবং অনেককে আত্মসমর্পণে বাধ্য করছে। নব্বইয়ের দশকের গৃহযুদ্ধের সময় নেতৃত্ব দেওয়া ব্যক্তিরা এবং নতুন গড়ে ওঠা স্থানীয় যোদ্ধাদের (মিলিশিয়া) নেতারা এখন দেশরক্ষার নামে সাধারণ মানুষকে নিজেদের বাহিনীতে ভেড়ানোর চেষ্টা করছেন। এই পরিস্থিতি মোটেও ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিচ্ছে না। বরং আফগানিস্তানের সরকারি সেনা, তালেবান যোদ্ধা, আফগান যুদ্ধে নেতৃত্ব দেওয়া মিলিশিয়াদের তৎপরতা পরিস্থিতি আরও সহিংস হয়ে ওঠারই আভাস দিচ্ছে।

যা রেখে যাচ্ছে মার্কিনরা

বাগরামে নতুনভাবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শুরু করা সংঘাতের উত্তরাধিকারও হতে চলেছে তারা। পাশাপাশি বাগরামে রয়ে যাবে মার্কিনদের রেখে যাওয়া অবশিষ্ট সামরিক সরঞ্জাম, যানবাহন এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ, যা আফগান যুদ্ধের ভয়াবহতার সাক্ষী হয়ে থাকবে, দেশটির অনিশ্চিত ভবিষ্যতের প্রতিনিধিত্ব করবে।

যুদ্ধ চালিয়ে যেতে আফগান সেনাদের জন্য বাগরাম বিমানঘাঁটিতে মার্কিনরা রেখে গেছে বেশ কয়েকটি তামাটে সবুজ পিকআপ ভ্যান, হামভি গাড়ি। এ ছাড়া রয়েছে তল্লাশিচৌকিতে ব্যবহার করা প্রতিরোধক ও প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম, যেগুলো এত দিন মার্কিন সেনাদের ফাঁড়ি তৈরি ও নিরাপত্তায়
ব্যবহৃত হতো।

তবে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা প্রচুর অস্ত্র তালেবানরা কেড়ে নিয়েছে, কিনেছে অথবা চুরি করেছে। এখন তালেবানরা যদি দাবি করে যে রাশিয়ার তৈরি কালাশনিকভের চেয়ে তাদের কাছে আমেরিকান এম-১৬ বেশি রয়েছে, তাহলে তার সত্যতা যাচাই করা কঠিন হয়ে পড়বে। এমনকি আফগান যুদ্ধে সার্বিক তত্ত্বাবধানকারী যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ মহাপরিদর্শকও নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না গত দুই দশকে সেনাদের নিরাপত্তা দিতে কী পরিমাণ মার্কিন আগ্নেয়াস্ত্র সেখানে পাঠানো হয়েছিল।

মার্কিনদের ফেলে যাওয়া দৃশ্যমান বস্তুগুলো নিশ্চিতভাবেই অনেক বছরের ক্ষয়ক্ষতির সাক্ষী হয়ে রয়েছে। যুদ্ধে জড়ানো সব পক্ষের প্রাণহানি, বিশেষ করে আফগানিস্তানের নিহত বেসামরিক মানুষগুলোর কথা মনে করিয়ে দেবে এই জিনিসগুলো। ভয়াবহ জখমের কথা তো মনে করাবেই। মার্কিন জেনারেলদের ব্যর্শলগুলো এখন ইতিহাসের অংশ, যাঁরা বলেছিলেন, সবকিছুই পরিকল্পনামাফিক চলছে।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে মার্কিন সেনাদের ছেড়ে যাওয়া বাগরাম বিমানঘাঁটির প্রায় এক মাইল দূরেই ইট–ইস্পাতের তৈরি একসারি দোকান দাঁড়িয়ে রয়েছে। সেনাদের ট্রাকের পেছন থেকে পড়া এবং তাদের ধ্বংস করা জিনিসগুলো থেকে অবশিষ্টাংশ কুড়িয়ে ওই দোকানের মালিকেরা বিক্রি করতেন। সেসব জিনিসের মধ্যে একটি কালো রঙের কফি মগও রয়েছে, যাতে লেখা রয়েছে, ‘সেখানে ছিলাম…সম্পন্ন করেছি, স্বাধীনতা টেকাতে অভিযান’। কাপের বারকোড স্টিকারও অক্ষত। একসময় যে আফগান যুদ্ধকে ‘মঙ্গলের জন্য যুদ্ধ’ বলে অভিহিত করা হয়েছিল, তার সাক্ষী হয়ে থাকা হাজারো জিনিসের মধ্যে ওই কাপটিও একটি।

বাগরাম বিমানঘাঁটির প্রায় এক মাইল দূরের ওই দোকানগুলোর একটির মালিক হাসমতুল্লাহ গুলজাদা। একসময় ট্রাকচালক ছিলেন তিনি। বছরখানেক আগে দোকান দিয়েছেন। হাসমতুল্লাহর দোকানের মেঝে থেকে ছাদ পর্যন্ত যুদ্ধকালীন ধ্বংসাবশেষ, স্ন্যাকস, ব্যাগ ও প্রসাধনসামগ্রীতে ঠাসা।

বাগরামে কিছু সময়ের জন্য হাসমতুল্লাহর মতো দোকানিদের নীরবে ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এই শহরে একসময় আঙুরের চাষ হতো। এরপর এখানকার অর্থনীতি নির্ভরশীল হয়ে পড়ে বাগরাম বিমানবন্দরের ওপর, যা গত চার দশক ধরে দুটি পরাশক্তি (সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়ন ও যুক্তরাষ্ট্র) ব্যবহার করেছে।

জুনের শেষ দিকে যেদিন যুক্তরাষ্ট্রের সর্বশেষ কার্গো বিমানটি উড়াল দেয়, সেদিনও হাসমতুল্লাহ নিশ্চিত ছিলেন না মার্কিনরা আদৌ আফগানিস্তান থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেবে কি না। তিনি বলেন, ‘তারা (মার্কিন সেনা) চলে গেলে ব্যবসা আরও খারাপ হবে।’ তাঁর দোকানে জানালার পাশে লাল রঙের একধরনের পানীয় রয়েছে। উচ্চ চিনি আর ক্যাফেইনযুক্ত ওই পানীয় ‘রিপ ইট’ নামে পরিচিত। এটি হাজারো মার্কিন সেনাকে টহল দেওয়ার সময় কিংবা সাঁজোয়া যানে বসে থাকার সময় জেগে থাকতে শক্তি জোগাত। হাসমতুল্লাহ বলেন, পানীয়টির দাম প্রায় দেড় মার্কিন ডলার (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১২৭ টাকা)। ২০০১ সালে আফগানিস্তানে মার্কিন অভিযান শুরুর পর কয়েকজন আফগান তরুণ এই পানীয় উদ্ভাবন করেন (সেই উদ্ভাবনের সাক্ষী হয়ে রাজধানী কাবুলে আজও একটি বিলবোর্ড দাঁড়িয়ে আছে)।

হাসমতুল্লাহর দোকানের মেঝেতে ছোটখাটো আসবাব আর শ্যাম্পুর বোতলের স্তূপের মধ্যে দেখা গেল একধরনের কালো স্ট্রিপ। এর সঙ্গে প্রশস্ত ফিতা লাগানো। এগুলো ‘কমব্যাট অ্যাপ্লিকেশন টার্নিকেট’ নামে পরিচিত। যুদ্ধের ময়দানে আহত ব্যক্তিদের রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করতে এই ব্যান্ডেজ ব্যবহৃত হয়। আফগানিস্তানে পা রাখা প্রায় সব মার্কিন সেনার কাছেই এই ব্যান্ডেজ থাকত। এর ব্যবহার সহজ। তবে এটি অনেক জীবন বাঁচিয়েছে।

যুদ্ধকেন্দ্র বাগরাম

আফগান যুদ্ধে ২০ হাজারের বেশি মার্কিন সেনা আহত হয়েছে। মারা গেছে ১ হাজার ৮৯৭ জন। এর বাইরে ৪১৫ জন মারা গেছে ‘সহিংস নয়’ এমন ঘটনায়। কমব্যাট অ্যাপ্লিকেশন টার্নিকেট প্রায় সময়ই কাজে লেগেছে। রাস্তার পাশে পুঁতে রাখা বোমায় কিংবা সশস্ত্র হামলায় আহত সেনাদের রক্তপাত দ্রুত বন্ধ করতে এই ব্যান্ডেজ ব্যাপক কাজে এসেছে।

হাসমতুল্লাহ এই ব্যান্ডেজ বিক্রি করেন ২৫ সেন্ট (বাংলাদেশি মুদ্রায় ২১ টাকার কিছু বেশি) করে। চিকিৎসাসেবা দেওয়ায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা এর ক্রেতা। এ ছাড়া হাসমতুল্লাহসহ আশপাশের দোকানিরা ভাঁজ করা যায়, এমন একধরনের মার্কিন স্ট্রেচারও বিক্রি করেন। যুদ্ধের ময়দানে হতাহত সেনাদের বহনে এই স্ট্রেচারগুলো ব্যবহৃত হয়। দোকানগুলোয় কৃত্রিম কিছু ক্রিসমাস ট্রির সঙ্গে ভাঁজ করে রাখা হয়েছে স্ট্রেচারগুলো।

বাগরাম বিমানঘাঁটিতে সম্ভবত সরকারি ছুটির দিনে কিংবা উৎসবে অফিস কক্ষগুলো সাজানো হতো। এই বিমানঘাঁটি উঠে দাঁড়িয়েছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের সেনাদের রেখে যাওয়া আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত একটি সামরিক ঘাঁটি থেকে। ২০০১ সালে মার্কিন সেনারা যখন আফগানিস্তানে পা রাখে, তখন বাগরাম ছিল ছোট একটি শহর। ২০১১ সালে তা যেন হয়ে ওঠে যুদ্ধের কেন্দ্র। এখানে ছিল লাখো বাসিন্দা, হাজারো ফাস্টফুড রেস্তোরাঁ আর দোকান। আর ছিল একটি কুখ্যাত সামরিক কারাগার, যা পরে আফগান কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তবে আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের সেনা উপস্থিতি কমে আসার সঙ্গে সঙ্গে বাগরামও যেন উজ্জ্বলতা হারাতে শুরু করেছে। চলে যাওয়ার সময় মার্কিন সেনারা তাদের সাঁজোয়া যান ধ্বংস করেছে, ১৫ হাজারের বেশি সরঞ্জাম নষ্ট করেছে। তারা চলে যাওয়ার পর আফগানরা যেন এগুলো বিক্রি করতে না পারে, সে জন্যই এই কৌশল।

হাসমতুল্লাহর মতো আরেক দোকানি ফরিদ বললেন, বাগরাম বিমানঘাঁটিতে থাকা বেশির ভাগ জিনিসপত্র সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোয় নষ্ট করা হয়েছে। সেগুলো আবর্জনা সংগ্রহকারীদের কাজে এসেছে। কিন্তু তাঁর মতো দোকানিদের কোনো কাজে লাগেনি।

তাই বলে একেবারে সবই নষ্ট করে যায়নি মার্কিন সেনারা। একটি দোকানে দেখা গেল, খাটিয়ার নিচে এক জোড়া বুট। এগুলো গত দুই দশকে আফগানিস্তানে প্রায় আট লাখ মার্কিন সেনার পদচারণের সাক্ষী হয়ে আছে। আফগানিস্তানের দক্ষিণাঞ্চলে মরুভূমিতে এসব জুতার স্বতন্ত্র ছাপ দেখেই তালেবানরা বুঝতে পারত, মার্কিন সেনারা টহল দিচ্ছে। আবার পূর্বের কোরেঙ্গল উপত্যকার মতো বরফে আচ্ছাদিত এলাকায় পাহাড়ের চূড়ায় ও বরফ-ঠান্ডা প্রবাহে এই জুতাগুলো খুব বেশি সময় টিকতে পারত না।

তবে মার্কিনরা এসব জুতা পরেই মাটির দিকে তাকিয়ে একটার পর একটা সতর্ক পা ফেলত, টহলের পর টহল দিত। তারা শঙ্কায় থাকত, কখন যেন সড়কের পাশে পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরিত হয় তাদের ভারে।

ধেয়ে আসছে তালেবান

এত বছরের যুদ্ধের পর, আফগানিস্তানের যেসব জায়গায় যুক্তরাষ্ট্র ও আন্তর্জাতিক সেনাদের পদচারণা ছিল, সেগুলো এখন তালেবানের নিয়ন্ত্রণে। বিশেষ করে এই মুহূর্তে যখন মার্কিনরা আফগানিস্তান ছাড়ছে, ঠিক তখনই তালেবান ক্রমেই কাবুলের কাছে এগিয়ে চলেছে, একটার পর একটা এলাকা দখলে নিচ্ছে। আফগান বাহিনী যদিও কিছু এলাকার নিয়ন্ত্রণ আবারও নিতে পেরেছে, তবে তালেবানকে পিছু হটানোর মতো কিছু তারা করতে পারেনি।

তালেবান এতটাই অগ্রসর হয়েছে যে তারা এখন মার্কিন সেনাদের ফেলে যাওয়া বাগরাম বিমানঘাঁটির ৫০ মাইলেরও কম দূরত্বে আছে। বিমানঘাঁটির কাছের ওই দোকানগুলোয় দাঁড়িয়েই তালেবানের ধেয়ে আসার আভাস পাওয়া যায়। একটি বুলেটপ্রুফ ভেস্ট দেখিয়ে এক দোকানি বললেন, এগুলো এখন আর বিক্রির জন্য নয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই দোকানি বলেন, ‘এগুলো এখন আমাদের জন্য। অচিরেই যুদ্ধ শুরু হবে।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *